শেখ হাসিনার দম্ভের কারণেই মূলত চূর্ণ ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ও সুধাসদন : দেশজুড়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের জের : ফ্যাসিবাদের শেষ চিহ্ন মুছে দিতে বুলডোজার কর্মসূচি
স্টাফ রিপোর্টার: ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দম্ভের কারণেই মূলত চূর্ণ হয়েছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ভবন। তিনি ভারতে অবস্থান করে উসকানিমূলক বক্তব্য না দিলে এরকম ঘটনা ঘটত না। পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে পতিত এ স্বৈরাচার অব্যাহতভাবে প্রতিশোধপরায়ণ বক্তব্য দিয়ে আসছেন। সবশেষ তিনি বুধবার রাতেও অডিও লাইভে এসে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন। এর ফলে বিক্ষুব্ধ জনতার ক্রোধ হামলে পড়ে ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাসভবনে। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার অনেকের পক্ষ থেকে ঘোষিত হয় ‘বুলডোজার মিছিল’ এবং ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’। রাত ৮টা থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার মিছিল যখন ধানমন্ডির-৩২ নম্বরে ঢেউ তোলে, তখন খুলনার আলোচিত ‘শেখবাড়ি’ এবং কুষ্টিয়া, নোয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, রাজশাহী, কুমিল্লা, পিরোজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের প্রথমসারির বেশ কয়েকজন বিতর্কিত নেতার বাড়িতেও বুলডোজার মিছিল পৌঁছে যায়। এরপর একদিকে রাতভর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে হাজার হাজার জনতার হাতুড়ি-শাবলে চলছিল ক্ষোভের আঘাত, অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিস্টদের শেষ চিহ্ন মুছে দিতে চলে ভাঙচুর। এভাবে বিপ্লবের রাত যখন ভোর হয়, ততক্ষণে প্রায় কঙ্কালসার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ৩২ নম্বরের বাড়িটি। আর এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত ৮টায় ধানমন্ডিতে অবস্থিত আওয়ামী লীগের এ ঐতিহাসিক সূতিকাগার মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার শেষ প্রস্তুতি চলছিল। সবার চোখে-মুখে একটাই শপথ-ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শেষ চিহ্ন মুছে না যাওয়া পর্যন্ত বুলডোজার কর্মসূচি চলবে। যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধিরা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের বাসাবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ হাসিনাসহ শেখ পরিবারের সদস্যদের নামফলকও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ওবায়দুল কাদের, ভোলায় তোফায়েল আহমেদ, বরিশালে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, রাজশাহীর বাঘায় শাহরিয়ার আলম, খুলনায় শেখ হেলাল উদ্দিন, কুমিল্লায় বাহাউদ্দীন বাহার, পিরোজপুরে একেএমএ আউয়াল, নাটোরে শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ আওয়ামী লীগের অন্তত ২৪ নেতার বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা, যশোর, রাজশাহী, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পাবনা, মাদারীপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট, টাঙ্গাইল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী কলেজে বঙ্গবন্ধুর ৩৭টি ম্যুরাল, আওয়ামী লীগের ১০টি কার্যালয় এবং বেশ কয়েকটি নামফলক ভেঙে ফেলা হয়েছে। এদিকে এ বিপ্লবী কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বিক্ষুব্ধ জনতার অনেকে জানিয়েছেন, এখানে যা হচ্ছে তার সবই ফ্যাসিস্ট হাসিনার কর্মের ফল। ষোলো বছরে তার নিপীড়ন-নির্যাতনে সারা দেশের বেশির ভাগ মানুষ প্রতিমুহূর্ত আতঙ্কে পার করেছে। খুন, গুম হওয়া বহু মানুষের স্বজনের চোখের পানি এখনো শুকায়নি। ভোট ও ভাতের অধিকার দেওয়ার কথা বলে জনগণের সঙ্গে তামাশা করেছেন শেখ হাসিনা। তিনটি জাতীয় নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছেন। টাকা পাচার করে ব্যাংকগুলো খালি করে দিয়েছেন। এরপরও জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া হাজার হাজার ছাত্র-জনতার বুকের ওপর গুলি চালিয়েছেন। হেলিকপ্টার থেকেও গুলি করে বাসাবাড়িতে থাকা শিশুদের গুলি করে মেরেছেন। দেড় হাজার মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন ৩০ হাজারের কাছাকাছি। অনেকে চিরদিনের জন্য অন্ধ ও পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের প্রশ্ন-এত মানুষের মৃত্যু কীভাবে ভুলে যাবে স্বজনরা। তারা বলেন, শাপলা চত্বরে জমায়েত হওয়া হেফাজতের সমাবেশে গভীর রাতে আলেম ও হাফেজদের ওপর বর্বরোচিত হামলার কথা মানুষ এখনো ভুলে যায়নি। মোদ্দা কথা, সব অত্যাচার-জুলুমের প্রতিশোধ এখন একস্রোতে এসে মিলে গেছে ৩২ নম্বরে। ধানমন্ডির এ ধ্বংসযজ্ঞের সামনে দাঁড়িয়ে এ প্রতিবেদক যখন বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে এরকম প্রতিক্রিয়া শুনছিলেন, তখন এক যুবক এসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নারী কবিতার দুটি লাইন শুনিয়ে বলেন, লিখে দেন-‘যুগের ধর্ম এই, পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই’। এটিই হলো ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার জন্য সঠিক জবাব। ধানমন্ডি ৩২ বিধ্বস্ত কঙ্কাল : পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত ৯টায় ভাঙা অব্যাহত ছিল। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বাড়িটি কঙ্কালসার হয়ে কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং সরেজমিন দেখা যায়, বুধবার রাত ৮টা থেকে শুরু হয়ে রাতভর ক্রেন ও এক্সকেভেটর দিয়ে চলে ভাঙচুর। ফজরের পর নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যান। সকালে ভারী যন্ত্র দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভবনটি ভাঙা শুরু হয়। ভবনের বড় কোনো অংশ ভেঙে পড়লে উৎসুক মানুষকে উল্লাস করতে দেখা যায়। বেলা ১১টা পর্যন্ত বাড়িটির বেশির ভাগ অংশই ভেঙে মাটির সঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় এক্সকেভেটর সরিয়ে নেওয়া হলে বিক্ষুব্ধ জনতা হাতুড়ি, শাবল, রডসহ বিভিন্ন হালকা যন্ত্র দিয়ে ভাঙার কাজ শুরু করে। তখনো ভবনগুলোয় আগুন জ্বলছিল। এর মধ্যে বাড়ির আঙিনায় থাকা ছোট-বড় সব গাছ উপড়ে ফেলা হয়। এ সময় উপস্থিত অনেকের সঙ্গেই কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা বলেন, শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের তীব্র ক্ষোভ থেকেই আজকের এ পরিণতি। স্বৈরাচারের কোনো চিহ্ন তারা আর রাখতে চান না। তারা আরও বলেন, এ ঘটনা থেকে ভবিষ্যতে যারা স্বৈরাচার হতে চেষ্টা করবে, তারা যেন শিক্ষা নেয়। আজিজুর রহমান নামের একজন বলেন, আমি দেখতে এসেছি। আসলে ক্ষোভ থেকেই মানুষ এগুলো করছে। শেখ হাসিনার অন্যায়-অপরাধের কারণে আজকের এ পরিণতি। রাসেল নামের একজন বলেন, স্বৈরাচারদের কী পরিণতি হয়, এ ঘটনা তার উদাহরণ হয়ে থাকুক। বেলা ১১টার দিকে দেখা যায়, ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভবনটির পেছনে (উত্তরদিকে) ছয়তলা ভবন তথা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের অফিস ভাঙা হচ্ছে। ট্রাস্ট ভবনের ভেতর থেকে বই, স্টিল, লোহা, টিন, কাঠসহ বিভিন্ন জিনিস ভেঙে নিয়ে যায় নিম্ন আয়ের মানুষ ও ভাসমান লোকজন। ওই সময় পর্যন্ত স্মৃতি জাদুঘর ও অফিস ভবনের বেশির ভাগ অংশই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। তখন ট্রাস্টের ছয়তলা ভবনটিতে শত শত মানুষ ঢুকে নানা জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছিল। কেউ কেউ হাতুড়ি দিয়ে দরজা, জানালা, লিফটের লোহার পাত, বিদ্যুৎ, পানির সংযোগের পাইপসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভেঙে নিয়ে যান। অনেকে নিয়ে যান বইসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। বইগুলোর বেশির ভাগই শেখ মুজিব ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লেখা। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভলিউম-৩’, ‘জনসমুদ্রে এক মহামানব’, ‘জাতির জনক ও শেখ রাসেল’সহ শেখ মুজিব ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লেখা বহু পুরোনো পত্রিকাও রয়েছে। দেখা যায়, ভাঙা সরঞ্জাম নিয়ে ভবনের সামনেই একটি রিকশা-ভ্যানে ভাঙারি পণ্য হিসাবে বিক্রি করছেন। আবার অনেকে রিকশা ও ভ্যানে করে সেগুলো বিভিন্নদিকে নিয়ে যান। তাদের সঙ্গে কথা বললে জানান, এসব সরঞ্জাম ভাঙারি হিসাবে বিক্রি করবেন। মোহাম্মদপুরের রিকশাচালক রফিক মিয়া বলেন, শেখ হাসিনা মানুষকে অনেক অত্যাচার করেছে। এ কারণে মানুষ রাগে-ক্ষোভে তার বাড়িঘর পুড়ে ভেঙে জ্বালিয়ে দিয়েছে। আমরা গরিব মানুষ। এসব পোড়া জিনিসপত্র খুলে নিয়ে ভাঙারি হিসাবে বিক্রি করব। কেন এসব নিয়ে যাচ্ছেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাস্তবে হিসাব করলে এসব আমাদেরই সম্পদ। হাসিনা তো জনগণের সম্পদ লুট করেছে। সবুর নামে এক দিনমজুর বলেন, সকালে শেখ মুজিবের বাড়ি দেখতে এসেছিলাম। তখন অনেককে হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে ভাঙতে দেখে আমিও কিছু জিনিস ভেঙে নিয়েছি। বাড়িটির ভাঙা অংশ থেকে হেকসো ব্লেড দিয়ে রড কেটে নিয়ে যেতে দেখা যায় এক ব্যক্তিকে। কয়েকজনকে দেখা যায় ভারী হাতুড়ি দিয়ে কংক্রিট ভেঙে সংগ্রহ করছেন রড। বাড়ির পেছনে পড়ে থাকা তিনটি পোড়া গাড়ি থেকে ইঞ্জিন আগেই খুলে নেয়া হয়েছে। বিকালেও কয়েকজনকে হেকসো ব্লেড দিয়ে গাড়িসহ ভবনগুলোর অবশিষ্ট অংশ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে সারা দিন বাড়িটির সামনের সড়কে বিক্ষুব্ধ মানুষের ভিড় লেগেই ছিল। অনেকেই এসেছিলেন দেখতে। উৎসুক জনতার অনেকেই এ দৃশ্য ধারণ করেছেন নিজের মোবাইল ফোনে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ করছিলেন। মাঝবয়সি একজনকে দেখা গেল ভিডিও ফোনে বন্ধু বা স্বজন কাউকে ফোন দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছেন সর্বশেষ অবস্থা। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ছবি তুলে দিনটিকে স্মৃতির পাতায় বন্দি করেন। পৌনে ৪টার দিকে কয়েকজন তরুণকে দেখা গেল-পশ্চিমপাশের ভবনের তিনতলায় দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা উড়াচ্ছেন। এসময় নিজ থেকে অনেকেই নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন। বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাড়ির সামনে একটি গরু জবাই করতে দেখা যায়। এ সময় সেখানে সাধারণ মানুষের জটলা বেঁধে যায়। এর মধ্যে কেউ কেউ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান দেন। উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই ঐক্যজোট নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে গুরুটি আনা হয়। তবে গরু জবাই করা হলেও কিছুক্ষণ পরে মাংস কাটার জন্য গরুটি সরিয়ে নিতে দেখা যায়। নারীসহ দুজনকে পিটুনি : ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনে নারীসহ দুজনকে পিটুনি দিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দেয়া এবং আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে আক্ষেপ করে কথা বলায় তাদের পিটুনি দেয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও বলেন, এর কিছুক্ষণ পরে সালোয়ার-কামিজ পরিহিত মধ্যবয়সি এক নারী ভাঙা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে নানা কথা বলতে থাকেন। ওই নারী বাড়িটিকে ‘আপার বাড়ি’, ‘আহা হাসু আপার বাড়ির কী অবস্থা করল’-এমন আরও নানা কথা বলতে থাকেন। তখন সেখানে থাকা ক্ষুব্ধ জনতা তাকেও পিটুনি দেন। সুধা সদনে যা ঘটেছে : বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ধানমন্ডি-৫-এ অবস্থিত শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে আগুন জ্বলছে। বাড়িটির সামনে ফ্রিজ, খাট, ওয়্যারড্রব, সোফাসহ নানা সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার জন্য জড়ো করেছেন ছিন্নমূল মানুষ। চারতলা ভবনের সব কক্ষেই ব্যাপক ভাঙচুর চালানো এবং আগুনের চিহ্ন দেখা যায়। ধোঁয়ার কারণে ওপরে ওঠা যাচ্ছিল না। বিকাল ৩টার দিকে দেখা যায়, বাড়িটিতে যা কিছু ছিল, সব খুলে নিয়ে গেছে সাধারণ মানুষ। দেওয়ালে লাগানো বৈদ্যুতিক তার, স্যানিটারি পাইপ, জানালার গ্রিলসহ অবশিষ্ট যা ছিল-সবই নিয়ে যায়। এর আগে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ধানমন্ডি-৩২-এ আগুন দেওয়ার পর সুধা সদনে আগুন দেয়া হয়। তখন পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কোনো গাড়ি সেখানে গিয়ে আগুন নেভাতে পারেনি। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়, ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বুধবার রাতে ছাত্রদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। এরপর শেখ হাসিনা ভাষণ দিলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর অভিমুখে বুলডোজার মিছিল করা হবে বলে অনেককে ফেসবুকে পোস্ট দিতে দেখা যায়। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টে বলা হয়, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের তিনতলা এ বাড়িটিতে বসবাস শুরু করেন। ১৯৬২ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং ১৯৭১-এর শুরুতে অসহযোগ আন্দোলনসহ বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী এই বাড়ি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.