মেহেরপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনার মামলা সাবেক মন্ত্রী ফরহাদ ও ভাইয়ের ৩ দিন ও ভগ্নিপতির ২ দিনের রিমান্ড
মেহেরপুর অফিস: সন্ত্রাস দমন আইন মামলায় সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন দোদুল ও তার ছোটভাই জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরফরাজ হোসেন মৃদুলের তিনদিন করে রিমান্ড আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া অপর একটি মামলায় মন্ত্রীর ভাগ্নিপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাসের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় মেহেরপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শারমিন নাহার এ আদেশ দেন। এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর হামলার দুটি মামলায় তাকে জেল গেটে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে এবং একটি মামলায় রিমান্ডের আবেদন জানালে আদালত জেল গেটে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। দুই দিনের রিমান্ড শেষে ফের আদালতে তোলা হলে আদালত আবারও তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালতে রিমান্ড শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম, অ্যাড. কামরুল হাসান, মারুফ আহম্মেদ বিজন এবং মোখলেছুর রহমান স্বপন রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। একইসঙ্গে আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে রিমান্ড না দেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন অ্যাড. খন্দকার আব্দুল মতিন, একেএম শফিকুল আলম ও ইব্রাহিম শাহীন। মেহেরপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনার একটি মামলায় তিনজনের ৫ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা সেলিম জাহাঙ্গীর। পরে আদালত ফরহাদ ও তার ভাইয়ের তিনদিনের এবং ভগ্নিপতির ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে সাবেক মন্ত্রী, তার ভাই ও ভগ্নিপতিকে আদালতে হাজির করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা আদালত চত্বর ঘিরে রাখেন। রিমান্ড শুনানিকালে আদালত প্রাঙ্গেণে বিক্ষোভ করেন বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। আসামিদের বিভিন্ন অপকর্ম তুলে ধরে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দাবি করেন তারা। শুনানি শেষে আদালত থেকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় সাবেক মন্ত্রিসহ তার ভাইকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আদালত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
এর আগে গত ৫ আগস্ট মেহেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর হামলার ঘটনায় সদর উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের রাশেদুল ইসলাম সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার প্রধান আসামি হিসেবে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে ২৯ জানুয়ারি রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মেহেরপুর নিয়ে আসা হয় ফরহাদ হোসেনকে। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর ইস্কাটন থেকে ফরহাদকে আটক করে র্যাব। তার নামে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি হত্যা মামলা এবং মেহেরপুরে কয়েকটি মামলা রয়েছে।
আদালতে করা মামলার আরজিতে বলা হয়, গত ৪ আগস্ট মেহেরপুর পৌর শহরে একটি সমাবেশ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা। সমাবেশ থেকে পরদিন ৫ আগস্ট মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়। এ ঘটনার পর জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক সরফরাজের নির্দেশে শহরের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনে যোগ দেয়া শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে লাঠিপেটা করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে দিনদুপুরে ছাত্র-জনতা এক দফা দাবি নিয়ে মাঠে নামলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা করেন। এতে চার শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন আহত হন।
পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী রাশিদুল ইসলাম বাদী হয়ে জেলার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ও জেলা জজ আদালতের বিচারক মঞ্জুরুল ইমামের আদালতে ফরহাদ হোসেনসহ ১৬৩ জনের নামে মামলা করেন। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে সদর থানাকে মামলাটি রেকর্ড করতে নির্দেশ দেন। ওই মামলায় সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ছাড়াও তার ভগ্নিপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বাবলু বিশ্বাস, সদর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমতিয়াস হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনারুল ইসলাম, মুজিবনগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলার আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমাম হোসেন, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান ও যুগ্ম-আহ্বায়ক সরফরাজ হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুস সামাদ ও সাবেক সভাপতি মাহফুজুর রহমান, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন প্রমুখ আসামি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.