আলমডাঙ্গায় সড়কে ডাকাতির চারদিনের মধ্যে ৫জন গ্রেফতার : রামদা ও নগদ টাকা উদ্ধার
আদালতে স্বীকারোক্তি : এক চালকের কাছে টাকা না পেয়ে পায়ের জুতো খুলে নেয় ডাকাতচক্র
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় সড়কে গাছ ফেলে ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ডাকাতির ৪ দিনের মধ্যে জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুরিশ। এছাড়াও ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দুটি রামদা ও ডাকাতি করা নগদ দেড় হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ডাকাতচক্রের সদস্য বকসিপুর গ্রামের লিটন আলী আদালতে ডাকাতির ঘটনায় নিজেকে সম্পৃক্ত করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন। তাদের স্বীকারোক্তিতে জগন্নাথপুর মাঠ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দুটি রামদা উদ্ধার করেছে পুলিশ। ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতারকৃত লিটন আলী (৩২) উপজেলার ডাউকি ইউনিয়নের বকসিপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। এর আগে একই ইউনিয়নের মাজু গ্রামের মৃত বোরহান আলী বিশ্বাসের ছেলে বাইতুল ইসলামকে (৪৫) গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। লিটন ও বাইতুলের স্বীকারোক্তিতে বকসিপুর গ্রামের খালপাড়ার মোসলেম আলী ম-লের ছেলে কেরামত আলী (৫০), একই গ্রামের মৃত হারান ম-লের ছেলে তমছের আলী (৫২) ও নবীছদ্দিন ম-লের ছেলে আশিক রানাকে (৪৫) গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশসূত্রে জানা গেছে, ডাকাতচক্রের সদস্য লিটন জানিয়েছেন, তিনি ডাকাতির টাকার ভাগ পাননি। টাকা কেরামতের কাছে আছে। তারা কয়েকটি গাড়ির চালকের নিকট থেকে অল্প কিছু টাকা নিতে পেরেছিলো। এক চালকের নিকট টাকা না পেয়ে ডাকাতচক্র তার পায়ের জুতো খুলে নেয়। গ্রেফতারের পর লিটন ও বাইতুল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতির ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ত থাকা ও এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়ে। পরে লিটন আলীকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় অকপটে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
প্রসঙ্গত. গত ২৭ জানুয়ারি সোমবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় সড়কে গাছ ফেলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গণডাকাতির ঘটনা ঘটায় সঙ্ঘবদ্ধ ডাকাতদল। আলমডাঙ্গা-কুষ্টিয়া সড়কের শ্রীরামপুর জগন্নাথপুরে এ ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে। সংঘবদ্ধ ডাকাতদল ঘণ্টাব্যাপী লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স, বাস ও ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন আটকে নগদ টাকা লুটে নেয়। খবর পেয়ে রাতেই আলমডাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে। ডাকাতির শিকার হওয়া ব্যক্তিরা জানান, পরপর চারটি বোমার বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন তারা। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ডাকাতদল একটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ দুটি অ্যাম্বুলেন্স, ৬টি ট্রাক, একটি পরিবহণ ও একটি পিকআপ আটকে ডাকাতি করে। রাত ২টা থেকে প্রায় ৩টা পর্যন্ত তা-ব চালায় ডাকাতচক্র। কয়েক বছর আগে ওই রাস্তায় মাঝে মাঝেই রাস্তায় গাছ ফেলে ডাকাতি হতো। বেশ কিছুদিন ওই রাস্তায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। আলমডাঙ্গা শাদা ব্রিজ থেকে শ্রীরামপুর মোড় পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার রাস্তা একটি ইজিবাইক নিয়ে পুলিশ উিউটি করে। বেশ কয়েক বছর পূর্বে শীতের রাতে আলমডাঙ্গা-কুষ্টিয়া সড়কে ইজিবাইকে ডিউটি করার সময় ঘন কুয়াশায় দেখতে না পেরে একটি ট্রাক পুলিশ ইজিবাইকে ধাক্কা দিয়ে পাশের জিকেখালের মধ্যে ফেলে দেয়। ইজিবাইক ভেঙে পুলিশের এএসআই কারুল সঙ্গীয় ফোর্স ও গাড়ি চালক আহত হয়।
আলমডাঙ্গা-কুষ্টিয়া সড়কটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় সারারাত এ আঞ্চলিক সড়কে নানা যানবাহন চলাচল করে। অ্যাম্বুলেন্সসহ রোগী বহনকারী যানবাহন বাধ্য হয়ে রাতেও চলাচল করে থাকে। ফলে এ ডাকাতির ঘটনায় এলাকাবাসীর মনে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। ডাকাতির ঘটনার পরপরই পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান ও পুলিশ পুরদর্শক অপারেশন আজগর আলীর নেতৃত্বে ডাকাত চক্রকে গ্রেফতার করতে মাঠে নামে পুলিশ। ডাকাতি মামলা দায়ের হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে ডাকাতির সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় বাইতুলকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশের নিকট ডাকাতি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। এরপর ২৯ জানুয়ারি দিনগত রাতে বকসিপুর গ্রামের লিটন আলীকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে লিটন আলীও পুলিশের নিকট ডাকাতি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। পরে তাদের স্বীকারুক্তিতে আরো ৩ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এত দ্রুততম সময়ে ডাকাতি ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ঘটনায় এলাকার মানুষ অনেকটাই আশ্বস্ত। ডাকাতির ৪ দিনের মধ্যে ৫ ডাকাত গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে এলাকাবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.