সবার মতামতের ভিত্তিতে সুপারিশ বাস্তবায়ন কাম্য

রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসাবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত চার সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এগুলো হলো-সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন সংস্কার কমিশন, দুদক সংস্কার কমিশন এবং পুলিশ সংস্কার কমিশন। চার কমিশনের প্রতিবেদনেই বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-দেশের সাংবিধানিক নাম ‘প্রজাতন্ত্র’ ও ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’-এর পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ ও জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করা; পাঁচ মূলনীতি ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র’ করা; দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন করা; সংসদের মেয়াদ ৪ বছর করা; প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ করা। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-বিচারবহির্ভূত হত্যা (খুন), গুম, অমানবিক নির্যাতন, গুরুতর দুর্নীতি, অর্থ পাচারের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না; একই ব্যক্তি দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা হতে পারবেন না। দুদক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-কালোটাকা সাদা করার রাষ্ট্রীয় চর্চা বন্ধ করা; দুদককে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া; দুদকের নিজস্ব তহবিলের ব্যবস্থা করা। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-জুলাই-আগস্টে হতাহতের জন্য দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তি প্রদান; পুলিশকে রাজনৈতিক দলের বাহিনীতে পরিণত না করা; শক্তি প্রয়োগের সীমা নির্ধারণ করা; ২২টি আইনের সংশোধন ও পরিমার্জন করা। আমরা জানি, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর দেশে সর্বক্ষেত্রে সংস্কারের যে তাগিদ অনুভূত হয়, তা থেকেই গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। আশার কথা, চারটি কমিশন দ্রুতই তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বাকি কমিশনগুলোও শিগগিরই তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে বলে আশা করা যায়। তবে সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। চার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করেছে, সেগুলোর কোন্টি গ্রহণ করা হবে, কোন্টি হবে না, তা সব স্টেকহোল্ডারের মতামতের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা বাঞ্ছনীয়। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক এবং সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়ার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ সংস্কার কমিশনগুলো যেসব সুপারিশ করেছে, সেগুলো পরবর্তী সংসদে অনুমোদনের দরকার হবে। তাছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ছাড়া সংস্কার টেকসই হবে না। সংস্কারের প্রতিটি স্তরে জনগণের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই মতামত সংস্কার প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে। বস্তুত রাষ্ট্র সংস্কার কেবল রাজনৈতিক নেতাদের জন্য নয়, সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা এর উদ্দেশ্য। রাষ্ট্র সংস্কার হলো সেই প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একটি দেশের প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে আধুনিকায়ন ও উন্নত করা হয়। এর লক্ষ্য হলো স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা, সুশাসন নিশ্চিত করা এবং জনগণের জন্য কল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা। উন্নততর নীতি ও ব্যবস্থার মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত সুদৃঢ় করা, দুর্নীতি রোধ করা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই এর মূল উদ্দেশ্য। চার সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের একটি দিকর্দেশনা পাওয়া যাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More