আগে জাতীয় নির্বাচন করার পক্ষে ইসি

স্টাফ রিপোর্টার: স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন করার পক্ষে নির্বাচন কমিশন অবস্থান তুলে ধরেছে। ১৪তম নির্বাচন কমিশনের গতকাল দ্বিতীয় সভায় আগামী জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। পরে নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, সব নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব নয়। কমিশনের সামগ্রিক ফোকাস জাতীয় নির্বাচন। সেদিকে এগোচ্ছেন তারা। সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সভাপতিত্বে তিন ঘণ্টাব্যাপী কমিশন সভা হয়। এতে চার নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিব উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমাদের সামগ্রিক ফোকাস জাতীয় নির্বাচন। কমিশন জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকলে অপরাপর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যাবে। এমন কোনো ইভেন্টে আসা ঠিক হবে না, যা জাতীয় নির্বাচনকে ব্যাহত করে। এ অবস্থায় আমি নিশ্চিত, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সরকার, সব পক্ষে এগুলো বিবেচনা করে যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা বাস্তবায়ন করব। তাতে যদি সরকার মনে করে কিছু নির্বাচন আগে করাবে তাহলে আমাদের সেভাবে করতে হবে। তবে আমাদের অবস্থান হচ্ছে মূলত ওই জায়গাটাতে বলছি, সব নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব নয়। সব স্থানীয় নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব নয়।’ এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, পত্রপত্রিকায় দেখা যাচ্ছে, কেউ কেউ একই সঙ্গে সব নির্বাচন করার বা সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে-বিপক্ষে মত দিচ্ছেন। কমিশন এ নিয়ে আলোচনা করেছে। কারণ কমিশনকে নির্বাচন করতে হবে। পরে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা সব অনুবিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে যেটা বুঝতে পেরেছি, এটা আসলে বাস্তবসম্মত প্রস্তাব নয়, সম্ভব নয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কোনো চিঠি দেয়া হয়নি। আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে আলোচনা করেছি। যেহেতু এটা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে, যাতে করে আমরা আমাদের অবস্থানটাও তুলে ধরতে পারি।’ নির্বাচনে ইসির কর্মযজ্ঞ, সুবিধাজনক প্রস্তুতির বিষয়ে কত সময় লাগতে পারে, তার একটা ধারণাও দেন এ নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাস্তবতা হচ্ছে, একটা সংস্কার কমিশন কাজ করছে। তাদের প্রস্তাব সামনে আসবে। এটাকে ধারণ করে আইন-বিধিমালায় কোনো সংশোধন দরকার হলে সেটা করার একটা টাইম আছে।’ দেশের আবহাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ফলে জাতীয় নির্বাচন করতে হলে কমিশনকে কিছুটা সময় দিতে হবে। হালনাগাদের লক্ষ্যে ২০ জানুয়ারি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহের কাজও আনুষ্ঠনিকভাবে উদ্বোধন করবে ইসি। বর্তমান ইসিও এনআইডি সেবা নিজেদের কাছে রাখতে চায় : জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নিজেদের কাছে রাখতে বিদ্যমান জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ বাতিল করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ জানাবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ নিয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে সভায়। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ রহিত হলেও এখনো জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ বলবৎ হয়নি, প্রজ্ঞাপনও জারি হয়নি। গত কমিশন থাকতেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এ আইনটি বাতিল করে আগের স্থিতাবস্থায় ফেরত নেয়ার; একটা প্রস্তাবনা সে সময় গৃহীত হয়। সে আলোকে ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর একটা ডিও লেটার পাঠানো হয় কমিশন থেকে। এ ধারাবাহিকতায় এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা অফিশিয়ালি কমিশনের সিদ্ধান্ত আকারে পত্রালাপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘জনবল, প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এটা নিয়ে যাওয়াটা সংগত হবে না। ডেটাবেসটা ইসির নিজস্ব, এখানে থাকতে হবে। এ প্রাইমারি ডেটা কারও কাছে হস্তান্তর করা যাবে না। আমাদের কাছে মনে হয়েছে এনআইডি সেবা (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে) নিয়ে যাওয়া কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ সংবিধান বলে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা প্রস্তুত, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ইসির। এটার ডেটাবেস ২০০৭ সাল থেকে ইসি ডেভেলপ করছে। এ থেকে এনআইডি ও ভোটার তালিকা প্রডিউস হয়। শুধু প্রিন্ট করার জন্য এনআইডি সেবা অন্যত্র যাওয়াটা যৌক্তিক মনে করি না।’ বিশেষ এলাকায় ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগ : ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটার নিবন্ধনের উদ্যোগ শুরু হচ্ছে। সেই সঙ্গে গত হালনাগাদে যুক্ত ভোটারদের তথ্য যাচাইবাছাই চলবে। রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত বিশেষ এলাকায় ভোটার নিবন্ধনের বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে সভায়। ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘বিশেষ তথ্য ফরম-২-এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মাঠপর্যায় থেকে কিছু ফিডব্যাক এসেছিল। ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ : ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প শেষ হলেও হাতে থাকা কার্যকর মেশিনগুলোকে বুঝে নিয়ে আপাতত রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে নাসির উদ্দীন কমিশন। ইসি বলেন, বর্তমানে যে মেশিনগুলো আছে সেটার রক্ষণাবেক্ষণ এবং দায়দায়িত্ব অপারেশন বুঝে নেয়ার ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More