চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন জেলা পুলিশ : পুরস্কার বিতরণকালে এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার

যারা নিয়মিত অনুশীলন এবং চর্চ্চা করবে তাদের জন্য জয়লাভ শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার
স্টাফ রিপোর্টার: জমকালো আয়োজনে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট-২০২৩’র ফাইনাল খেলা পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় দুটি সেমিফাইনাল খেলা শেষে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন চত্বরের অফিসার্স ক্লাব ব্যাডমিন্টন গ্রাউন্ডের চোখ ধাঁধানো সাজসজ্জা আর আলো ঝলমলে মঞ্চ টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলাকে এক অনন্য মাত্রা এনে দেয়। চুয়াডাঙ্গা সোনালী ব্যাংক পিএলসি দলকে ২-০ সেটে হারিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থা ফাইনালে উন্নীত হয়। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ বিভাগ সরাসরি ২-০ সেটে আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজকে পরাজিত করে ফাইনালে উন্নীত হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের শক্তিশালী দল ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ ফাইনালে একদল ১ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে যায় তো পরবর্তীতে অপরদল আরেক পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে যায়। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ ফাইনাল খেলার ফাঁকে ফাঁকে জেলা পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা খেলোয়ারদের নানাভাবে উৎসাহিত করে খেলার এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি করেন। যা ছিলো অত্যন্ত উপভোগ্য, মনমুগ্ধকর এবং আনন্দে ভরপুর। চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা নিজে উঠে গিয়ে খেলোয়াড়দের যেমন উৎসাহিত করে আসছিলেন, তেমনই চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জেলা পুলিশ দলের খেলোয়াড়দের সাথেও নানাভাবে সময় দিয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করে আসছিলেন। এভাবে খেলায় একসময় জয় পরাজয় নিশ্চিত করতে হয়। সে কারণে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ খুব অল্প ব্যবধানে ২-০ (২২-২০, ২১-১৯) সেটে জয়লাভ করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। খেলা চলাকালীন সময়ে এই টুর্নামেন্টের আয়োজক চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার খেলোয়ারদেরকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি জেলা পুলিশের খেলোয়াড়দেরকেও তিনি খুব কাছে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলে তাদেরকে উৎসাহিত করেন। তিনি খেলা পরবর্তী অনুভূতি ব্যক্তর সময় বক্তব্যে বলেন যে, আমি আসলে এক দলের নয় আমি চুয়াডাঙ্গায় যতগুলো দল আসে সব দলের উৎসাহদাতা হিসেবেই নিজেকে মনে করি। এদিকে খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করার জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশাল বড় বহরের একটি ব্যান্ড দল নিয়ে এসে ব্যাডমিন্টন গ্রাউন্ডের উত্তেজনাকে আরো একধাপ বাড়িয়ে দেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ। যেখানে একটি করে পয়েন্ট অর্জন হলেই ব্যান্ড দলের বাদ্যযন্ত্রে এলাকায় এক উৎসবমুখর পরিবেশে তৈরি হচ্ছিল। এভাবে আনন্দ উৎসাহ উদ্দীপনা আর চোখ চেয়ে দেখার মত ব্যাডমিন্টন শট যেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন চত্বরকে এক অন্যরকম মোহনীয় আবেশে পরিপূর্ণ করে তোলে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ ফাইনাল শেষে চ্যাম্পিয়ন ও রানারা দলের মধ্যে ট্রফি ও প্রাইজ মানি তুলে দেয়ার আগে অতিথিবৃন্দ অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে এ আয়োজন এবং ফাইনাল খেলাকে ভূয়সী প্রশংসা করেন। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ও সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা -১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি বলেন, আমি আসলে খেলাধুলা প্রিয় মানুষ। তবে আজকের এ ফাইনাল খেলাটি আমাকে অত্যন্ত মুগ্ধ করেছে। অন্য কোনো খেলায় মনটা ঠিকমতো টেবিলে বসতে চায় না। কিন্তু আজকের খেলাটি আমি পুরোপুরি সম্পন্ন করলাম এক অনন্য আনন্দের সাথে। তবে প্রধান অতিথি খেলোয়ারদের আরো উজ্জীবিত করার জন্য বলেন, খেলা মানেই খেলা নয়, খেলা মানেই নিয়মিত অনুশীলন এবং চর্চা। এই চর্চা যারা নিয়মিত করবে তাদের জন্য জয়লাভ শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার।
অনুষ্ঠানের অন্যতম বিশেষ অতিথি গেস্ট অব ওনার চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরকারি কর্মব্যস্তার মধ্যে একটু বিনোদন, একটু একঘেয়েমিতা রোধে এ ধরনের আয়োজন আসলেই প্রয়োজন ছিলো। আর সেটি কানায় কানায় পূর্ণ করে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কর্মকর্তাদেরকে একসূত্রে গেঁথে একটি বিনোদন ও সুস্থ সুন্দর জীবন যাপনের অংশ হিসেবে এই ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের আয়োজন করে পূর্ণতা এনে দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা মান্যবর জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। এ টুর্নামেন্টের আয়োজক ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সভাপতি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, এ আয়োজন আসলে আমার কাছে একটি সময়ের দাবি ছিল। এ আয়োজনের পেছনে আমার জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের ঐকান্তিক সহযোগিতা ছিলো সে কারণেই আমি অত্যন্ত সুন্দর এবং সুষ্ঠুভাবে আয়োজনটি সম্পূর্ণ করতে পেরেছি। তবে এ আয়োজনে যে সফলতাটুকু আছে সেটি চুয়াডাঙ্গা জেলার সকলের জন্য। আর যে ব্যর্থতাটুকু আছে সেটি শুধুই (আমার) আমি জেলা প্রশাসক আমার জন্য। সহজ সরল সাবলীল ভাষায় কথাগুলো বলে তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে এই আয়োজনকে আরো বড় পরিসরে করার চিন্তা আছে। আশা করি এমন আয়োজনে এবারের মত সকলেই আমার জেলা প্রশাসনের পাশে থাকবেন। অনুভূতি ব্যক্ত শেষে ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন রানার আপ দলের পুরস্কার ও প্রাইজ মানি দেয়ার শুরুতেই খেলার পরিচালকবৃন্দকে শুভেচ্ছা পুরস্কার প্রদান করা হয়। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিদের দেয়া হয় শুভেচ্ছা স্মারক। একই সাথে স্পন্সর এবং কো-স্পন্সরদের জন্য দেয়া হয় ক্রেস্ট। টুর্নামেন্টের ঘোষণা অনুযায়ী ম্যান অব দ্যা ফাইনালের পুরস্কার হিসেবে ট্রফি ও প্রাইজমানি জিতে নেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ বিভাগের চৌকস খেলোয়াড় চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এএসআই আশরাফুল ইসলাম। আশরাফুল ইসলামের যোগ্য সহযোগী হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হতে সহযোগিতা করেন সদর থানার অপর এএসআই আবুল কালাম। চমৎকার খেলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মাধ্যমে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হয়ে রানারআপ ট্রফি লাভ করে চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার রোকনুজ্জামান রোকন ও শিমুল হাসান। অতিথিবৃন্দ চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দলের খেলোয়াড়দের ট্রফির পাশাপাশি একটি হ্যান্ডসাম ফিগারের প্রাইজ মানিও উপহার দেন। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমার সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাসুদ আলী, চুয়াডাঙ্গা-২, বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ সাজ্জাদুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা-১, বিজ্ঞ চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট লস্কর সোহেল রানা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আরাফাত রহমান ও সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর এস এম ইসরাফিল। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় যিনি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি হলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হামিদ রেজা। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের এনডিসি সাইফুল ইসলাম সাইফ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুর রহমান, সাবেক এনডিসি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদাত হোসেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাঈমা জাহান সুমাইয়া, জেলা পুলিশের ডিআইও-১ আবু জিহাদ খন্দকার ফখরুল আলম খান, চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মাহাব্বুর রহমান কাজলসহ জেলা প্রশাসন, জেলা জজ আদালত, জেলা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তা ও সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাগণ। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় সকলকে মুগ্ধ করেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার শাহেদুল আলম মিনহাজ এবং প্রাণবন্ত ধারাভাষ্য ও ব্যাডমিন্টন খেলার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে উপস্থিত সকলকে মুগ্ধ করে শুভেচ্ছা পুরস্কার জিতে নেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের জয়েন্ট সেক্রেটারি ইসলাম রকিব।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More