রোগীর রিপোর্ট ছুড়ে ফেলার অভিযোগ কর্তব্যরত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে
দামুড়হুদা উপজেলা ছাত্রলীগ সম্পাদক ডেঙ্গু আক্রান্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি
দামুড়হুদা অফিস: দামুড়হুদা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজু আহাম্মেদ রিংকু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে তাকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ডেঙ্গু সনাক্ত হয়। ডেঙ্গু সনাক্তের পর কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর স্বজনদের সাথে চিকিৎসা দেয়া নিয়ে বিভিন্ন টালবাহানা করতে থাকে। একপর্যায়ে রোগীর ব্যবস্থাপত্র ও বিভিন্ন রিপোর্ট ছুড়ে ফেলার অভিযোগ করা হয় ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। বিষয়টি অস্বীকারও করেন দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার ডা. আফরিন আক্তার হিরা। তিনি নিজেকে বেশ ক্ষমতাধর মনে করেন, কথায় কথায় থানা পুলিশের ভয়ভীতি প্রর্দশন করেন বলেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে দামুড়হুদা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজু আহাম্মেদ রিংকু ঠান্ডা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গতকাল শনিবার সকালে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের লোকজন তাকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আফরিন আক্তার হিরা তাকে ভর্তি করে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার করার পরামর্শ দেন। পরিবারের লোকজন সে সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানতে পারেন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্টগুলো দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আফরিন আক্তার হিরাকে দেখাতে গেলে তিনি রোগীর পরিবারের লোকজনকে বলেন রিপোর্ট নিয়ে দোতালায় ডাক্তার আছে তাদেরকে দেখিয়ে নিয়ে আসেন। রোগীর পরিবারের লোকজন আবারও ওই চিকিৎসককে রিপোর্ট গুলো দেখে দেয়ার কথা বললে তিনি রিপোর্ট হাতে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেন এবং বলেন আমি রিপোর্ট দেখার জন্য এখানে বসে নেই, আমার দায়িত্ব শুধু রোগী ভর্তি করার। একপর্যায়ে ওই চিকিৎসক থানা পুলিশে খবর দেন। কিছুক্ষণপর দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশের একটি দল হাসপাতালে এসে সকলের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে। তবে হাসপাতালে এতোকিছু ঘটেগেলেও সেসবের কিছুই জানতেন না বলেছেন খোদ হাসপাতালের কর্মকর্তা। এ ঘটনায় দামুড়হুদা উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভিড় জমান হাসপাতাল গেটে। ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের প্রস্তুতিও প্রায় সম্পন্ন হয়। ইতোমধ্যে বিষয়টি অত্যান্ত বিচক্ষণতার সাথে সমাধানের ব্যবস্থা করেন দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. হেলেনা আক্তার। এদিকে, ইতোমধ্যে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও রোগী এবং রোগীর স্বজনদের সাথে অসাধাচরণের কারণে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়। সেখান থেকেও একই অভিযোগে তাকে আবারও বদলি করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব দেয়া হয়। তার এ ধরনের আচরণে অতিষ্ঠ খোদ হাসপাতাল কতৃপক্ষও। নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক চিকিৎসক বলেন সে শুধু রোগী, বা রেগীর স্বজনদের সাথেই খারাপ আচরণ করেন না, হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসক ও কর্মরত অনেকের সাথেই নিয়মিত খারাপ আচরণ করেন। দামুড়হুদা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সালাউদ্দিন বলেন, ওসি স্যারের নির্দেশে আমি সহ সঙ্গীয় ফোর্স হাসপাতালে পৌঁছে দেখি ছাত্রলীগের এক ছেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সাথে খারাপ আচরণ করছে। আমি সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করি এবং তাদেরকে বলি যদি কারো কোনো অভিযোগ থাকে সেটি লিখিত দিতে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত মেডিকেল অফিসার ডা. আফরিন আকতার হিরা রোগীর ব্যবস্থাপত্র, পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্ট ছুড়ে ফেলার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেন আমি রিপোর্ট গুলো সাইডে সরিয়ে রেখেছিলাম। তাছাড়া শনিবার বহির্বিভাগের বাইরে রোগী দেখা আমার দায়িত্ব না। দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হেলেনা আক্তার বলেন, সকালে যখন ঘটনাটি ঘটেছে তখন আমি দর্শনাতে একটি মেডিকেল ক্যাম্পে ছিলাম। এতোকিছু ঘটার পরও ওই চিকিৎসক আমাকে কিছুই জানায়নি। তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি জানতে পারা মাত্রই আমি হাসপাতালে ছুটে এসে ভর্তিরত রোগীর খোঁজখবর নিয়েছি এবং তাৎক্ষণিক রোগীর পরিবারের লোকজনের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করেছি। আর কোনো চিকিৎসকেরই চিকিৎসা দেয়ার জন্য দায়িত্ব দেয়ার প্রয়োজন হয় না। চিকিৎসক মাত্রই রোগীর সেবা দিবে এটাই চিকিৎসকের নৈতিক দায়িত্ব। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এ ঘটনায় দামুড়হুদা উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ছাত্রলীগনেতা-কর্মীরা দ্রুত ওই চিকিৎসকের বদলিসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট।