চুয়াডাঙ্গায় অতিভারী বর্ষণ : চলতি মরসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড
বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে এলাকার নিম্নাঞ্চল ও রাস্তাঘাট : ব্যাহত স্বাভাবিক জীবনযাত্রা
স্টাফ রিপোর্টার: মরসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে চুয়াডাঙ্গায় লঘুচাপ থেকে স্থল নিম্নচাপ শুরু হয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। অতিভারী বর্ষণে ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে এলাকার নিম্নাঞ্চল ও রাস্তাঘাট। চলতি মরসুমের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে এ জেলায়। বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এখনও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার পর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১২ মিলিমিটার বেড়ে ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আরও ১৬ মিলিমিটার বেড়ে ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যা এ জেলায় ২৪ ঘণ্টার হিসেবে চলতি মরসুমের সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃষ্টিপাত। রাত থেকে থেকে মুষলধারায় বৃষ্টি শুরু হয়ে যা অব্যাহত রয়েছে। যার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে ওঠেছে। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। অতিপ্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। বৃষ্টির কারণে শহরের কিছু সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, সক্রিয় মরসুমি বায়ুর প্রভাবে চুয়াডাঙ্গায় অতি ভারী বর্ষণ হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা আগামীকাল (আজ শনিবার) পর্যন্ত অব্যহত থাকতে পারে। রোববার থেকে এ বৃষ্টিপাত কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মরসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিম বঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মরসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়ার পূর্বাভাস তুলে ধরে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময়ে সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দুদিন পর বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে বলেও জানান এ আবহাওয়াবিদ। গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো সীতাকু-ুতে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ছিলো কুতুবদিয়ায় ২৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্র থেকে মাত্র ২ ডিগ্রি কম সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ২৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সীতাকু-ুতে ১৪৪ মিলিমিটার। আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নৌবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।