আলমডাঙ্গার মোড়ভাঙ্গায় নিখোঁজের ১১দিন পর লাশ উদ্ধার : রহস্য উন্মোচনে মাঠে পুলিশ
মুদিদোকান কর্মচারীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ : পুলিশ হেফাজতে অভিযুক্ত দুই ভাই
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় নিখোঁজ হওয়ার ১১দিন পর গোলাম মোস্তফা নামে এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ৩টার দিকে উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া গ্রাম সংলগ্ন মাথাভাঙ্গা নদী থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত মোস্তফা পাশর্^বর্তী মোড়ভাঙ্গা গ্রামের মৃত হবিবার রহমানের ছেলে। তিনি হাটবোয়ালিয়া বাজারের জননী স্টোর নামে একটি মুদি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। গত ১৪ আগস্ট রাত ৯টার দিকে দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে তিনি নিখোঁজ হন। পরদিন সকালে নদীর পাড় থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় তার ব্যবহৃত মোবাইলফোন ও বাইসাইকেল উদ্ধার করে গ্রামের লোকজন। পরিবারের অভিযোগ গোলাম মোস্তফাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। রহস্য উন্মোচনে মাঠে নেমেছে পুলিশের একাধিক সংস্থা। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দোকান মালিক জাহাঙ্গীর ও তার ভাই সজিবকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে বাঁশবাড়ীয়া গ্রাম সংলগ্ন মাথাভাঙ্গা নদীতে নৌকা পারাপারের সময় এক যুবকের মরদেহ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা। পরে বিকেলে ওই যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করলে গোলাম মোস্তফার লাশ বলে তার পরিবারের লোকজন শনাক্ত করেন। নিহত গোলাম মোস্তফার বড় ভাই রাকিব হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মুদি দোকানদারের ছোট ভাই সজিব এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তার অভিযোগ। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘জননী স্টোরের মালিক জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই সজিব মাঝে মাঝে দোকানে ড্রয়ার থেকে গোপনে টাকা নিতেন। দোকান কর্মচারী গোলাম মোস্তফা এসব কথা দোকান মালিককে জানিয়ে দিতেন। এ কারণেই ক্ষুব্ধ সজিব পরিকল্পিতভাবে গোলাম মোস্তফাকে হত্যা করে থাকতে পারে।’ গত ১৪ আগস্ট রাত ৯টার দিকে হাটবোয়ালিয়া বাজারের জননী স্টোরের কর্মচারী মোস্তফা হোসেন বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন। ওই রাতেই হাটবোয়ালিয়ার পাশ দিয়ে বয়ে চলা মাথাভাঙ্গা নদীর নির্মাণাধীন ব্রিজের নিকট থেকে ওই কর্মচারীর মোবাইল ফোন পাওয়া যায় এবং পরদিন সকালে কিছুটা দূরে পরিত্যক্ত অবস্থায় তার ব্যবহৃত বাইসাইকেলটিও পাওয়া যায়। নিখোঁজের পর থেকেই মোস্তফার পরিবার দোকান মালিক জাহাঙ্গীর ও তার ভাই সজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে আসছিল। এ ব্যাপারে মোস্তফার বড় ভাই রাকিব হোসেন থানায় জিডিও করেন। তবে নিখোঁজের বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেয়ায় পুলিশের গাফিলতিরও অভিযোগ তোলেন মোস্তফার বড় ভাই রাকিব হোসেন। রাকিব হোসেন জানান, হাটবোয়ালিয়া বাজারের জননী স্টোরের মালিক জাহাঙ্গীরের দোকানে কর্মচারী হিসেবে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আমার ভাই মোস্তফা কাজ করে আসছিল। দোকান মালিক জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই সজিব দোকান থেকে নিয়মিত টাকা চুরি করতো। টাকা চুরির ঘটনা মোস্তফা দোকান মালিক জাহাঙ্গীরকে জানিয়ে দিলে সজিবের সাথে তার মতদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। টাকা চুরির বিষয় নিয়ে মাঝে মাঝে মতদ্বন্দ্বর কারণে মোস্তফা দোকানে না আসলে জাহাঙ্গীর বাড়িতে গিয়ে তাকে নিয়ে আসতো। এ নিয়ে নিখোঁজের কদিন আগে সজিব মোস্তফাকে মারধরও করে। এরপরই ১৪ আগস্ট রাতে মোস্তফার নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। নিহত দোকান কর্মচারী মোস্তফা হোসেন (৩০) উপজেলার হারদী ইউনিয়নের মোড়ভাঙ্গা গ্রামের মৃত হবিবার রহমানের ছেলে। মোস্তফার একটি সাত মাসের কন্যা সন্তান রয়েছে। মোস্তফা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তার বড় ভাই রাকিব হোসেন ও মা সাহেদা খাতুন একবার হাটবোয়ালিয়া পুলিশ ক্যাম্প ও আরেকবার আলমডাঙ্গা থানায় ঘুরতে থাকেন। পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয় তদন্ত চলছে। কিন্ত ১১দিন পরও নিখোঁজ মোস্তফার কোনো খোঁজ করতে পারেনি। এরইমধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার মাথাভাঙ্গা নদীর বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট এলাকায় একটি অর্ধগলিত লাশ ভেসে উঠতে দেখে স্থানীয়রা। নিখোঁজ মোস্তফার পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে তার পরনের গেঞ্জি ও প্যান্ট দেখে শনাক্ত করে এটা মোস্তফার লাশ। এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের গ্রাম থেকে শত শত মানুষ নদীর পাড়ে ভিড় করে। এ সময় থানা পুলিশও ঘটনাস্থলে আসে। একদিকে পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করতে থাকে, অন্যদিকে গগণবিদারী আহাজারি করতে থাকে মোস্তফার পরিবারের লোকজন। মোস্তফার বড় ভাই রাকিব হোসেন কাঁদতে কাঁদতে জানান, রাতে মোস্তফা নিখোঁজ হওয়ার পরদিন সকালে আলমডাঙ্গা থানায় অভিযোগ দিতে গিয়ে দেখি দোকান মালিক জাহাঙ্গীর আগে থেকেই থানায় বসে আছেন। পরে শুনলাম জাহাঙ্গীর আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধেই উল্টো ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা পাবে বলে থানায় অভিযোগ করেছে। পরে আমিও মোস্তফার নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করি। কিন্ত নিখোঁজের ১১দিন ধরেও পুলিশ আমার ভাইয়ের কোন হদিস করতে পারেনি বলেও জানান রাকিব হোসেন। রাকিব ও মা সাহেদা খাতুন দোকান মালিক জাহাঙ্গীর ও তার ভাই সজিবকে হত্যাকারি বলে বিলাপ করছিলেন। হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্পের আইসি কামরুল ইসলামের সাথে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীরের দহরমমহরম আছে বলেও তারা অভিযোগ করতে থাকেন।
এদিকে, লাশের সন্ধান পাওয়ার পরপরই পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা রাত অবধি হাটবোয়ালিয়া এলাকায় অবস্থান নেন। কর্মকর্তারা মোস্তফা হত্যার বিভিন্ন মোটিভ খুঁজতে থাকেন। তারা প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত দোকান মালিক জাহাঙ্গীর ও তার ভাই সজিবকে হেফাজতে নিয়েছে বলে জানিয়েছে এলাকার কয়েকটি সূত্র। রাতেই মোস্তফার মা বাদী হয়ে জাহাঙ্গীর ও সজিবকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে বলে জানা গেছে। আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার নাথ জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য লাশ চুয়াডাঙ্গার হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। রাতেই মোস্তফার মা বাদী হয়ে জাহাঙ্গীর ও সজিবকে আসামি করে লিখিত দিয়েছেন। মামলা প্রক্রিয়াধীন।