ট্রাকের ধাক্কায় আলমসাধুর যাত্রী ও ট্রাক চাপায় স্কুলছাত্র নিহত
চুয়াডাঙ্গার গোকুলখালী ও চারমাইল নামকস্থনে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনা
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্রসহ দুজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া এই পৃথক দুর্ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্তত ছয়জন আহত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে ও বিকেলে এ পৃথক দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার গোকুলখালী বাজারে ট্রাকের ধাক্কায় সুজিত বিশ্বাস (৩৫) নামের এক ইঞ্জিনচালিত যান আলমসাধুর যাত্রী নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গোকুলখালী বাজারের নিকট এদুর্ঘটনা ঘটে। পরে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা সুজিতকে আহত অবস্থায় সুজিতকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরই ট্রাকটি পালিয়ে যায়। নিহত সুজিত বিশ্বাস চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি গ্রামের শ্রী রতন বিশ্বাসের ছেলে। গতকাল দুপুরে সুজিতের মরদেহ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। পরে পরিবারের নিকট মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। নিহত সুজিত বিশ্বাসের মা শ্রী ভরতি কুমার বিশ্বাস বলেন, আমার ছেলে পেশায় আলমসাধু চালক ছিলেন। আজ সকালে এক ব্যক্তি আলমসাধু কিনবে বলে তার সঙ্গে মেহেরপুরে যাচ্ছিলো। বাড়ি থেকে যাওয়ার ঘন্টাখানেক পর শুনি ছেলে আর বেঁচে নেই।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নুরজাহান খাতুন বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সুজিতের মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। হাসপাতালে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদরের চারমাইলে ট্রাকের ধাক্কায় রেজা (১৫) নামের এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন চারজন। তাদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেল ৪টার দিকে চারমাইলে এঘটনা ঘটে। নিহত রেজা সদর উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের মাঝেরপাড়ার রনির ছেলে। সে ডিঙ্গেদহের সোহরাওয়ার্দী স্মরণী বিদ্যাপীঠের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলো। এ ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা ট্রাক চালকের সহকারী রোকনকে আটক করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং রোকনকে হেফাজতে নেয়। আহতরা হলেন-চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার নূরনগর কলোনিপাড়ার মৃত মসলেম উদ্দিনের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩৮), সদর উপজেলার ভা-ারদহ গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে আলমসাধু চালক সবুজ মিয়া (৩০), ঠাকুরপুর গ্রামের চাঁদ আলীর ছেলে ইজিবাইক চালক বিল্লাল হোসেন (৪০) ও ডিঙ্গেদহ গ্রামের মৃত সোহরাব হোসেনের ছেলে ভ্যানচালক আব্দুল গফুর (৫০)।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে চুয়াডাঙ্গা থেকে ফুলকপি বোঝায় একটি ট্রাক কুমিল্লার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলো। এ সময় চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের চারমাইল নামকস্থানে চলন্ত অবস্থায় একটি ইঞ্জিলচালিত আলমসাধুর এক্সেল ভেঙে রাস্তায় ওপর থেমে যায়। এর পেছনেই থাকা ফুলকপি বোঝায় ট্রাকটি জোরে ব্রেক করলে ট্রাকের ব্রেক ফেইল হয়। পরে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইসাইকেলে থাকা রেজাসহ ইজিবাইক, ভ্যান ও আলমসাধুকে চাপা দিয়ে গাছের গুড়িতে আটকে যায়। এরপরই স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক স্কুলছাত্র রেজাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক খালিদ হাসান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, রেজার মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রেজাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। হাসপাতালে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত চারজনের মধ্যে আনোয়ারের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সবাইকে ভর্তি করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মাহাব্বুর রহমান জানান, গোকুলখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সুজিতের মরদেহ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলেও স্কুলছাত্র রেজার মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত রেজার পরিবারের কোনো অভিযোগ ছিলো না। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে, গতকাল সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ডের নিকট মোটরসাইকেল-পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা ডা.আব্দুল বারী (৭৫) গুরুতর আহত হন। তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। তিনি সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ বাজার এলাকার মৃত জুলমত আলীর ছেলে। তার এক পায়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক।
অপরদিকে, গতকাল বিকেল ৪টার দিকে হুজাইফা (২০) নামের এক যুবককে আহত অবস্থায় সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্থানীয়রা। তিনি দামুড়হুদা উপজেলার বোয়ালমারী ফকিরপাড়ার আতিকুল ইসলামের ছেলে। উদ্ধারকারী এক ইজিবাইক চালক জানায়, দামুড়হুদার কাঞ্চনতলা নামকস্থানে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল হুজাইফা। তার পাশে একটি মোটরসাইকেল পড়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানান, হুজাইফার মাথা ফেটে গেছে। এছাড়া শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত কিনা এখনই বলা সম্ভব নয়।