স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদা মডেল থানার এএসআই (সহকারী উপ-পরিদর্শক) মামুনকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইন্সে পাঠানো হয়েছে। গত বুধবার সকালে তাকে ক্লোজড করা হয় বলে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। গত মঙ্গলবার দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় ‘দামুড়হুদা মডেল থানার মামুনের বিরুদ্ধে তদন্তের নামে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ’ এই শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপরই জেলা পুলিশ চড়েচড়ে বসে। একদিনের মাথায় এএসআই মামুনকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইন্সে পাঠানো হয়।
জানা যায়, বেশ কয়েকদিন আগে দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের জয়রামপুর গ্রামের মালিথাপাড়ার সামছদ্দীনের ছেলে রবিউল ইসলামের সাথে একই গ্রামের হাজিপাড়ার রাজ্জাক ড্রাইভারের ছেলে রাজু আহমেদ ও নিয়ামত মোল্লার ছেলে মেহেদী হাসানের মারামারির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে রাজু আহমেদ ও মেহেদী হাসানকে বিবাদী করে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্ব পান দামুড়হুদা মডেল থানার এএসআই মামুন। গত শুক্রবার রাতে অভিযোগ তদন্তের জন্য রাজুর বাড়িতে যান এএসআই মামুনসহ সঙ্গীয় ফোর্স। এ সময় বাড়ি ঘর তল্লাশির নামে হয়রানি করে পরিবারের লোকজনকে। রাজুকে বাড়িতে না পেয়ে তার মাকে বিভিন্ন ভাষায় গালিগালাজ করে ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এ সময় রাজুকে মারপিট করাসহ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসাতে হুমকি ধামকিও দেন তিনি। একপর্যায়ে রাজুর বাবা রাজ্জাক ড্রাইভার মেহেদী হাসানের মাধ্যমে ওই পুলিশ কর্মকর্তার দেয়া বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠানোর পর ঠা-া হন তিনি।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, শুক্রবার রাতে দামুড়হুদা মডেল থানার এএসআই মামুন ও একজন পুলিশ সদস্য আমার বাড়িতে এসে ছেলে রাজুকে খোঁজাখুঁজি করে। আমার ছেলে বাড়িতে নেই বললে ওই পুলিশ কর্মকর্তা আমার বাড়ির বিভিন্ন ঘরে প্রবেশ করে রাজুকে খুঁজতে থাকে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে আমার ছেলে এবং আমাকে। একপর্যায়ে আমি গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে আমাকেও বিভিন্ন ভাষায় গালিগালাজ করে। এ সময় স্থানীয় প্রতিবেশীরা ছুটে আসলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা আমার ছেলেকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে বলে হুমকি ধামকি দিয়ে চলে যায়। পরে আমার স্বামীর কাছে ফোন করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে পুলিশ কর্মকর্তা। আমার স্বামী ড্রাইভারি করার সুবাদে বাইরে থাকায় মেহেদী হাসানের মাধ্যমে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠালে তিনি ঠা-া হন।
এ বিষয়ে দামুড়হুদার জয়রামপুর গ্রামের নিয়ামত মোল্লার ছেলে মেহেদী হাসান বলেন, আমি রাজুর বাবার দেয়া এক হাজার টাকা এএসআই মামুনের নিজ ব্যবহৃত ০১৭০৬-৫৪৬৫৬৩ এই বিকাশ নম্বারে পাঠালে তিনি আরও ৫০০ টাকা দাবি করেন। বিষয়টি আমি স্বশরীরে থানায় গিয়ে ওসি স্যারকে জানিয়েছি। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য এএসআই মামুন বলেন, জয়রামপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির সাথে রাজু ও হাসানের মারামারি সংক্রান্ত একটি অভিযোগ তদন্তের জন্য শুক্রবার বিকেলে রাজুর বাড়িতে যায়। সেখানে তাকে না পেয়ে থানায় দেখা করতে বলি। পরে রাজু ও হাসান আমার সাথে দেখা করলে বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে কথা বলি। তিনি আরও বলেন, রাজুর বাড়িতে গিয়ে আমি কোনো প্রকার গালিগালাজ করিনি। আর টাকা নেয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। নামপ্রকাশ না করার শর্তে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, বুধবার সকালে এএসআই মামুনকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইন্সে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত করছে।