কুষ্টিয়ায় ৫ স্কুলছাত্রীর ধূমপানের ভিডিও ধারণ করলেন শিক্ষকের : একজনের আত্মহত্যা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে একটি বিদ্যালয়ের ছাদে উঠে সোমবার পাঁচ ছাত্রী ধূমপান করে। বিষয়টি জানতে পেরে শিক্ষকরা তাদের ভিডিও ধারণ ও শাসন করে এগুলো অভিভাবকদের মধ্যে ছড়ানোর হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে দুই ছাত্রী নদীতে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। স্থানীয়রা তাদের জীবিত উদ্ধারে সক্ষম হলেও বিকেলে বাড়ি ফিরে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী জিনিয়া খাতুন (১৪) গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে। উপজেলার কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর মাহতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। জিনিয়া সুলতানপুর গ্রামের জিল্লুর রহমানের মেয়ে। এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে লাশ নিয়ে স্বজন ও এলাকাবাসী সুলতানপুরের বেলতলা বাজারে মানববন্ধন করেন। কর্মসূচি চলাকালে লাশ দেখতে এলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদকে ব্যাপক মারধর করা হয়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। নিহতের নানা ও কয়া ইউপির সাবেক সদস্য গাজীউর রহমান জানান, জিনিয়া তার কয়েক সহপাঠীকে নিয়ে সোমবার বিদ্যালয়ের ছাদে ধূমপান করার সময় শিক্ষার্থী ও অফিসের কর্মচারী দেখে শিক্ষকদের জানান। পরে শিক্ষকরা এসে তাদের ভিডিও ধারণ করেন এবং অভিভাবকদের বিষয়টি জানানোর হুমকি দেন। এ ঘটনায় জিনিয়া বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে পদ্মা নদীতে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে এলাকাবাসী উদ্ধার করে বাড়ি দিয়ে যান। পরে বিকেল ৫টার দিকে বসতঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে। তিনি জানান, মঙ্গলবার মানববন্ধনের সময় প্রধান শিক্ষক এলে বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে মারধর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও পারেননি বলে জানান গাজীউর রহমান। মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ের ছাদে পাঁচ ছাত্রীর সিগারেট টানার দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেন সহকারী শিক্ষক মশিউর রহমান লাল্টু ও ওলিউর রহমান এবং আয়া শিউলি খাতুন। পরে শিক্ষক কক্ষে তাদের ডেকে নিয়ে দুই ঘণ্টা আটকে রেখে মারধর ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখায়। এ সময় টিসি ও অভিভাবকদের বিষয়টি জানানোর হুমকি দিয়ে ব্যাগ কেড়ে নেন শিক্ষকরা। অপমান সইতে না পেরে গলাই ফাঁস দিয়ে জিনিয়া আত্মহত্যা করে। আরেক ছাত্রী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে রক্ষা পেলেও গুরুতর অসুস্থ। শিক্ষকদের দায়িত্বহীন আচরণের কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। মানববন্ধনে নিহতের মামা জাহিদ হোসেন বলেন, দুই শিক্ষক ও আয়া ছাত্রীদের ব্ল্যাকমেইল করেছেন। তারা আমার ভাগনিকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছেন। এ ঘটনায় মামলা করবো। নদীতে লাফ দিয়ে বেঁচে যাওয়া ছাত্রী জানায়, কয়েকটি মেয়ে সিগারেট টানলেও সে ও তার বান্ধবী জিনিয়া ধূমপান করেনি। তারা পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্তু শিক্ষকরা ডেকে নিয়ে দুই ঘণ্টা কক্ষে আটকে রেখে মারধর ও ভিডিও করেন। সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া এবং বিদ্যালয় থেকে টিসি দেয়ার ভয় দেখান। এ সময় তার পাশে থাকা বাবা শিক্ষকদের অমানবিক আচরণের নিন্দা জানান এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান। অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক মশিউর রহমান ও ওলিউর রহমান বলেছেন, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ছাত্রীদের শিক্ষক কক্ষে ডেকে আনা হয়। এ সময় মুখ শুকে সিগারেটের গন্ধ পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কাছে অভিভাবকদের মোবাইল নম্বর চাওয়া হয়। নম্বর না দেয়ায় ছাত্রীদের স্কুলব্যাগ রেখে দিয়ে অভিভাবককে সঙ্গে করে আসতে বলা হয়। তাদের শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা হয়নি। এমনকি কোনো ধরনের ভিডিওধারণ করা হয়নি। কিন্তু পরে জিনিয়ার আত্মহত্যার খবর পেয়ে খারাপ লেগেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ জানান, সোমবার ঘটনার সময় তিনি উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে ছিলেন। রাতে জানতে পারেন। মঙ্গলবার সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করেন। তিনি বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে লাশ দেখতে যেতে পারিনি। মঙ্গলবার দুপুরে জানাজা নামাজে অংশ নিতে গেলে আমার ওপর হামলা করা হয়।’ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী এজাজ কায়সার বলেছেন, এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হয়। সবার কথা বলে জানতে পেরেছি ভিডিও নয়, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কথা রেকর্ড করেছেন। যেকোনো ঘটনার জেরে শিক্ষার্থীর মৃত্যু দুঃখজনক, এটি কখনো কাম্য নয়। তবে প্রধান শিক্ষককে মারধর ন্যাক্কারজনক। কুমারখালী থানার ওসি আকিবুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একটি পক্ষের উসকানিতে প্রধান শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে জানান তিনি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More