তৃণমূলে দলীয় কোন্দল : এবার নেতাদের ঢাকায় ডাকা হচ্ছে
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে পুরোদমে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ
স্টাফ রিপোর্টার: সবকিছু ঠিক থাকলে আর মাত্র ৩ মাস পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন ঘিরে পুরোদমে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। রোববার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বিশেষ বর্ধিত সভা আহ্বান করে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা মূলত নির্বাচনের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীরাও ওই বার্তা নিয়ে এলাকায় ফিরেছেন। বৈঠকের একদিন পরই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে যেসব নির্বাচনী এলাকায় দলীয় কোন্দল চরমে সেসব এলাকা চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট নেতাদের ঢাকায় তলব করা হবে। তার আগে সংগঠনিকভাবে সংশ্লিষ্ট নেতাদের দলীয় প্যাডে চিঠি দেয়া হবে। সেখানে নিজেদের মধ্যে কোন্দল নিরসনের নির্দেশনা থাকবে। এতে যদি কাজ না হয় তাহলে তাদেরকে ঢাকায় তলব করে কোন্দল মেটানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রয়োজনে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাও হস্তক্ষেপ করবেন। নেতারা বলছেন, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব- কোন্দলে নাকাল তৃণমূল আওয়ামী লীগ। গ্রুপিং, পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা ও বহিষ্কার, মুখোমুখি সংঘর্ষ এবং হামলা-মামলা লেগেই আছে। আর এ দ্বন্দ্বে মূল নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা। বারবার নির্দেশনার পরও বিভেদের রাজনীতির কারণে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এসব ঘটনা। তৃণমূলে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি জোটের মোকাবিলার চেয়ে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত ততই বাড়ছে। দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ছাড়াও প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম ও হত্যা, গুলি করে হত্যার মতো নৃশংস ঘটনাও ঘটছে অহরহ। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলেরই অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশ’। নির্বাচনে প্রতিপক্ষ, স্থানীয় রাজনীতিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, নিজস্ব বলয় তৈরিসহ নানা কারণে বিরোধে জড়িয়ে পড়ছেন নেতারা। রোববারের বর্ধিত সভায়ও দলীয় কোন্দলের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন তৃণমূলের নেতারা। নেতাদের বক্তব্যের সময় বেশ কয়েকবার মৃদু হট্টগোল হয়। দলীয় সভাপতির সামনে মঞ্চে বক্তব্য দেয়ার সময় বর্ধিত সভায় আসা নেতাদের ধমক দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। বর্ধিত সভায় তারা অভিযোগ করেন, অনেক এলাকায় মন্ত্রী এমপিরা দলের বাইরে নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন। তারা দলীয় নেতাকর্মীদের খুব একটা মূল্যায়ন করেন না। এ ছাড়া সরকারি উন্নয়ন কর্মকা-েও তারা নেতাকর্মীদের পরামর্শকে গুরুত্ব দেন না। যা আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। প্রায় ৭ ঘণ্টার আলোচনা শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, সভায় যেসব অভিযোগ এসেছে ভবিষ্যতে এমন যাতে আর না ঘটে সবাইকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়া আগামী নির্বাচনে যেসব নেতাকে দলীয় প্রার্থী করা হবে তাদের জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সবাইকে নৌকার হয়ে কাজ করতে হবে। কে মনোনয়ন পেলো আর কে পেলো না তা নিয়ে বিতর্ক করা যাবে না। এ সময় তিনি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হাত তুলে নেতাদের সমর্থন জানাতে বললে উপস্থিত সবাই হাত তুলে সমর্থন জানান। এসব প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এ ধরনের ঘটনা বন্ধে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। খুব শিগগিরই এই ধরনের বিষয়গুলোতে দোষীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা এগুলো নির্মূল করতে চেষ্টা করছি এবং করবো। ইনশাআল্লাহ এটা করতে পারবো। একই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ বড় দল। অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকে। আবার অনেক জায়গায় যোগ্য নেতার সংখ্যাও বেশি থাকে। তাদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা আছে। তবে সেখানে কোন্দলের পর্যায়ে যাওয়ার মতো সুযোগ নেই। বর্ধিত সভায় তৃণমূল থেকে অনেকে কোন্দলের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এরইপ্রেক্ষিতে আমাদের দলীয় সভাপতি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমি মনে করি, ওই মিটিং থেকে বের হওয়ার পরে নতুন করে আর কোন্দল করার কোনো সুযোগ নেই। এর আগেও গণভবনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে আগামী নির্বাচনটা চ্যালেঞ্জের হবে বলে জানান দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নির্বাচনটা একটা চ্যালেঞ্জ, কারণ নানা ধরনের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হয়। আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়ে দলটির প্রধান বলেন, আমাদের সংগঠনটা যথেষ্ট শক্তিশালী। সংগঠনটা যেন আরও মজবুত থাকে। সেদিকে ব্যবস্থা নিতে হবে। দলীয় নেতারা জানান, দীর্ঘদিন টানা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকায় তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটানো বড় চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যে নানা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। তাদের আন্দোলন মোকাবিলার পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে ক্ষমতাসীনদের ওপর। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমেরিকার নতুন ভিসা নীতি। নির্বাচনী বছরে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাও তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভোটের আগে আসন ভাগাভাগিসহ কয়েকটি ইস্যুতে শরিকদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে দলটিকে। এসব কারণেই কেন্দ্রীয় নেতাদের তৃণমূলে সফর বৃদ্ধি, ঢাকায় ডেকে মীমাংসা করাসহ নানা উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।