দামুড়হুদার ধন্যঘরার বাবর আলী হত্যা রহস্য উম্মোচনে মাঠে পুলিশ
মামলা দায়ের : জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে স্ত্রী মহিমা খাতুন
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার ধন্যঘরা গ্রামের নিহত বাবর আলীর মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে শত শত মানুষের জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করেন। রাতেই নিজ গ্রামের কবরস্থানে বাবর আলীর দাফন সম্পন্ন হয়। ঘটনার একদিন পার হলেও বাবর আলীর খুনের কোন সূত্রই মেলাতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে, ঘটনার একদিন পার হলেও বাবর আলীকে হত্যার রহস্য উম্মোচন করতে পারেনি পুলিশ। গতকাল সকাল থেকে বাবর আলীর স্ত্রী মহিমা খাতুনকে থানা হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দর্শনা থানা পুলিশ। তার নিকট থেকে কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়নি বলে পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় গতকাল রাতে বাবর আলীর ভাই ছাবের আলী বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। দর্শনা থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম আমানুল্লাহ দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত পরশু বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাবর আলীকে দুর্বৃত্তরা গলার বাম দিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পরিবারের সদস্যরা দ্রুত উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে রাত ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের স্ত্রী মহিমা খাতুন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অজ্ঞাত পরিচয়ে তিন ব্যক্তি বাড়িতে স্বামীকে খুঁজতে আসেন। সেই সময় আমার স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। তারা মোবাইল নাম্বার চান। আমি মোবাইল দিতে না পারায় তারা চলে যান। রাতে আমি ও আমার ছেলে ঘরের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার স্বামী বারান্দায় ঘুমাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে অজ্ঞাত পরিচয়ে ওই ব্যক্তিরা বাড়িতে এসে আমার স্বামীকে কুপিয়ে জখম করে। তিনি চিৎকার করলে আমি ও আমার ছেলে ঘর থেকে বাইরে এলে তারা পালিয়ে যান।
বাবর আলীর সাথে কারো কোনো দ্বন্দ্ব আছে কি-না জানতে চাইলে তার স্ত্রীর মহিমা খাতুন বলেন, আমার স্বামী বিভিন্ন বাগান থেকে লিছু ক্রয় করে স্থানীয় কার্পাসডাঙ্গা বাজারে বিক্রি করতেন। তার ভালো বেচাকেনা হতো বলে বাজারের অনেক ব্যবসায়ীরা তাকে ভালো চোখে দেখতেন না। এছাড়া আমার স্বামী কয়েকটি লিছু বাগান কেনা বাবদ চার লাখ টাকাও দিয়েছিলো। সেই টাকা ফেরত দিচ্ছিলো না তারা। চাইলে হুমকি ধামকি দিতো। কি কারণে, কে বা কারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে তা জানি না।
নিহত আলীর ছেলে মাহিন বলেন, রাতে আমার মা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যান। ফিরে এসে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে বলেন, তোর বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কে বা কারা মেরে ফেলেছে। এরপরই দ্রুত প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় বাবাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এলে তিনি মারা যান।
এদিকে ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করে আমাদের কুড়ুলগাছি প্রতিনিধি হাসমত রেজা জানিয়েছেন, বাবর আলী অত্যান্ত ভালো মানুষ ছিলেন। যখন যে ফল বাজারে আসে সেই ফলের ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। তার সঙ্গে কারোর শক্রতাও আছে বলে জানা নেই। ঘটনার দিন রাতে তার স্ত্রী ও ছেলে ঘরের মধ্যে এবং ঘরের বারান্দায় বাবর আলী ঘুমাচ্ছিলেন। বারান্দায় চারিদিকে গ্রীল দেয়া। যে কেউ ঘরের মধ্যে ঢুকতে পারবে না। আর বাইরে থেকে দরজা খোলার চেষ্টা করলে শব্দে আশেপাশের প্রতিবেশী টের পেয়ে যাবে। যদি তার স্ত্রী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার সময় দরজা খোলা পেয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ঢোকেন তাহলে তারা কিভাবে জানলো এই সময় তার স্ত্রী বাইরে বের হয়েছেন? তবে নিহতের স্ত্রী মহিমা খাতুন দৈনিক মাথাভাঙ্গার নিকট রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ফিরে আসার পর তার স্বামীর রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেছেন এমন কথা বলেননি, যা তার ছেলে মাহিন দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা আরও জানিয়েছেন, এমনও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের ডাকে সাড়া দিয়ে বাবর আলী নিজেই হয়তো দরজা খুলেছিলেন। না হয় পূর্বে থেকেই দরজা খোলা ছিলো। এসব সমীকরণ নিয়ে পুলিশও পড়েছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে।
অপরদিকে, ঘটনার পরই নিহতের স্ত্রী মহিমা খাতুনকে হেফাজতে নিয়েছে দর্শনা থানা পুলিশ। সেখানে ব্যাপক জিজ্ঞাসা করা হলেও তেমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়নি পুলিশ। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বাবরকে খুঁজতে আসা অজ্ঞাত ব্যক্তিদেরও কোনো শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। গতকাল দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে বাবর আলীর মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে পুলিশ। বিকেলে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছুলে সকলেই একনজর তাকে দেখতে ভিড় করেন। রাতে শত শত মানুষ জানাজার নামাজে অংশ নেন। এরপরই গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
দর্শনা থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম আমানুল্লাহ দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, নিহতের স্ত্রীকে আমাদের হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে বলেও তেমন কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি। গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। রাত ২টার দিকে নিহতের ভাই বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। খুব শিগগিরই হত্যার কারণ উদঘাটন করে আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।