আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গায় মায়ের ওপর বোমা নিক্ষেপকারী একাধিক মামলার আসামি সেই বোমা কালামকে গাঁজাসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিজ মায়ের ওপর বোমা হামলার পর থেকে তিনি বোমা কালাম নামে এলাকায় পরিচিত। ৫ জুন সোমবার বিকেল ৪টার দিকে বাড়ির পাশের আম বাগান থেকে কালামকে ৫শ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করে পুলিশ। কালাম গ্রেফতার হওয়ায় এলাকায় স্বস্তি ফিরেছে।
জানা গেছে, উপজেলার বেলগাছী গ্রামের সাহেব আলী মালিথার ছেলে আবুল কালাম ওরফে বোমা কালাম (৪০)। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মাদক ব্যবসা করে আসছেন। বাড়িতে বসেই মাদকদ্রব্য বিক্রি করে আসছেন বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এছাড়া এলাকার অনেকেই জানিয়েছে তার মাদক ব্যবসা কাজে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে বোমা কামাল খুনের হুমকি দিয়ে থাকেন। অনেকেই তার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না। এমনকি তার এ কাজে যারা প্রতিবাদ করে আসছেন তাদের অনেকেই রাতে নিজ বাড়িতে থাকেন না। বোমা কালামের ভয়ে অন্যত্র রাত্রিযাপন করে থাকেন। কালাম মাঝে মধ্যে পুলিশের অভিযানে মাদকসহ আটক হলেও জামিন নিয়ে এলাকায় আবারও মাদক ব্যবসা শুরু করেন। তার এ মাদক ব্যবসা চিরতরে বন্ধের জন্য এলাকাবাসী আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ তথা চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন। গতকাল সোমবার বিকেলে ঘোলদাড়ি ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই তারিফুজ্জামান গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালান। এসময় কামালকে তার বাড়ির পাশের একটি আমবাগান থেকে ৫শ গ্রাম গাঁজাসহ গ্রেফতার করা হয়।
এলাকাবাসী আরও জানান, কালামের শ^শুরবাড়ি চুয়াডাঙ্গা এলাকায়। তিনি চুয়াডাঙ্গা এলাকা থেকে প্রায়ই গাঁজা নিয়ে এসে এলাকায় বিক্রয় করে থাকেন। ইতোপূর্বেও কালামকে অস্ত্র, মাদক, ডাকাতি, ছিনতাই ও চুরি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিলো। আলমডাঙ্গা থানায় বোমা কালামের নামে আরও একটি মাদক মামলা যুক্ত হলো।
বেশ কয়েকবছর আগে তার মা তাকে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকতে নিষেধ করায় তিনি মাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাতবোমা ছোড়েন। ভাগ্যক্রমে তার মা বেঁচে যান। সেই থেকে তিনি বোমা কালাম নামেই পরিচিত। এরপর থেকে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক বিক্রি, অস্ত্র, মিছিলে বোমা নিক্ষেপসহ বেশ কয়েকটি মামলা আছে তার নামে। কয়েকমাস পূর্বে জেল থেকে বাড়ি এসে আবারও গাঁজা বিক্রি শুরু করেন। এছাড়াও, আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে গাঁজাসহ আটক করে নিয়ে আসে। পরে থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। এছাড়াও ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মাদকসহ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে। ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার নিজ ঘরের বিছানার নিচ থেকে একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করে। ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে আলমডাঙ্গা কলেজপাড়ার নৌকা প্রতীকের মোটরসাইকেল মিছিলে ককটেল হামলা মামলার এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন বোমা কালাম। ওই ঘটনার কয়েকদিন পর বোমা কালামকে বিজিবি গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের কিছুদিন পর বাড়ি এসে শুরু করে মাদক ব্যবসা। ২০১২ ও ২০১৬ সালে তার বিরুদ্ধে আলমডাঙ্গা থানায় আরও দুটি মামলা দায়ের হয়।
অনেকেই জানিয়েছেন, যেখানে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে সেখানে বোমা কালাম বার বার মাদকসহ ধরা পড়ার পর জামিনে বের হয়ে কাদের ছত্রছায়ায় এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে তাদেরকে চিহ্নিত করে নির্মুল করতে হবে। তা না হলে আলমডাঙ্গা তথা বেলগাছী ও তার আশপাশের গ্রামের মাদকের তৎপরতা দিন দিন বাড়তে থাকবে। বোমা কালামের মাদকের ব্যবসা বন্ধে এলাকাবাসী চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।