মেহেরপুরের ছয় শিক্ষক চাকরিচ্যুত হলেও বাকিরা অধরা
জাল সনদে চাকরি : দীর্ঘদিন সরকারি বেতন ও অন্যান্য সুবিধাভোগ
মাজেদুল হক মানিক: দীর্ঘদিন জাল সনদে চাকরি করার পর ফেঁসে গেলেন মেহেরপুর জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ের ছয় শিক্ষক। এ ছয়জনসহ সারা দেশের ৬৭৮জন জাল সনদধারী শিক্ষককে ইতোমধ্যে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও কলেজ পর্যায়ে এরকম জালসনদধারী আরও অনেক শিক্ষক রয়েছেন মর্মে অভিযোগ থাকলেও এখনও তারা অধরা! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে এমন জালসনদ ধরা পড়লেও অজ্ঞাত কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হয়নি অন্যদিকে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে পরিদর্শনের বাইরে। তবে চলমান এ পরিদর্শন প্রক্রিয়ায় আরও কিছু শিক্ষক ফেঁসে যাবেন বলে মনে করছেন মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
অভিযোগ রয়েছে, মেহেরপুর জেলায় কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও কমিটির সভাপতি মিলে মোটাঅংকের অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে জেনেশুনেই এসব জাল সনদধারীদের চাকরি দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটর) এবং কিছু কলেজে প্রভাষক (তথ্য ও প্রযুক্তি বা আইসিটি) পদে নিয়োগ রয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটর) পদে নিয়োগে সরকারি বিধি অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল স্নাতকসহ কম্পিউটরে ছয় মাসের ডিপ্লোমা কোর্স পাস হতে হবে। এছাড়াও কলেজের প্রভাষক পদের যোগ্যতা ছিলো স্নাতকোত্তর ও ছয় মাসের কম্পিউর কোর্স ডিপ্লোমা।
জানা গেছে, ২০০১ পর্যন্ত সরকারি কম্পিউটর ডিপ্লোমার একমাত্র প্রতিষ্ঠান ছিলো নট্রামস। যার প্রধান কার্যালয় ছিলো বগুড়াতে। সারাদেশে এর বেশ কিছু আউটডোর ক্যাম্পাস ছিলো। বর্তমানে নট্রামসের নাম পরিবর্তিত হয়ে জাতীয় কম্পিউটর ও গবেষণা একাডেমি (নেকটার) নামে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মূলত এই নট্রামস থেকে ছয় মাস মেয়াদি কম্পিউটর ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করে অনেকে সহকারী শিক্ষক কম্পিউটর এবং প্রভাষক আইসিটি পদে চাকরি করছেন। পাশাপাশি নট্রামসের সনদ জালিয়াতি করে দেশের একটি বড় সংখ্যার শিক্ষক চাকরি নিয়েছেন। যাদের মধ্য থেকে সম্প্রতি ৬৭৮ জন জালসনদধারী হিসেবে চিহ্নিত করে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০১ সাল পর্যন্ত নট্রামসের আউটডোর ক্যাম্পাস ছিলো অনেকগুলো। এই ক্যাম্পাসের সার্টিফিকেট ফটোকপি করে ভুয়া রোল নম্বর দিয়ে অনেকে সার্টিফিকেট ৪-৫ হাজার টাকায় কিনেছিলেন। ওই সময়ে নট্রামসের একটি অসাধু চক্র বেকারদের প্রলুদ্ধ করে এই জাল সনদ দিয়েছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এর সুযোগ নিয়েছে অনেকে অসাধু ব্যক্তি। যারা ওই জালসনদ দিয়ে চাকরি নিয়ে দীর্ঘদিন বহাল তবিয়তে সরকারি বেতন ও অন্যান্য সুবিধাভোগ করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মেহেরপুর জেলার কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও বেশ কয়েকটি কলেজে এখনও কম্পিউটর ডিপ্লোসা কোর্সের জালসনদধারী কিছু শিক্ষক রয়েছেন। যারা বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন এবং প্রতি মাসে সরকারি এমপিও সুবিধা ভোগ করছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায় রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) নিয়মিত পরিদর্শেনে বিভিন্ন সময়ে জাল সনদের বিষয়টি উঠে আসে। যার প্রেক্ষিতে ওই ৬৭৮ জনকে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ আসে। এর আগে মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশ কয়েকটি ভুয়া সনদ ধরা পড়লেও অজ্ঞাত কারণে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এর পেছনে ঘুষ বাণিজ্যেরও অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।
তবে জাল সনদধারী কোন শিক্ষক রেহাই পাচ্ছেন না বলে আশার কথা শুনিয়েছেন গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বাসার। তিনি বলেন, জাল সনদধারীদের বিষয়ে অধিদপ্তরের নিরীক্ষার বিষয়টি একটি চলমান প্রক্রিয়া। যা অব্যাহত রয়েছে। এতে যদি কোনো জাল সনদধারীদের পাওয়া যায় তবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে কর্মরত ৬৭৮ জন শিক্ষককে জাল সনদধারী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের চাকরিচ্যুতির যে তালিকা করা হয়েছে তার মধ্যে মেহেরপুর জেলার ছয় শিক্ষক রয়েছেন। এরা হচ্ছেন- মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি এআরবি কলেজের প্রভাষক ফাতেমা মহতাসিমা, মোমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুজিবুর রহমান, গাংনী উপজেলার বামন্দী-নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আরেফিন ইসলাম, প্রভাষক মাহমুদ হাসান ও প্রদর্শক জাহাঙ্গীর আলম এবং সাহেবনগর বহুমুখী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাফুর উদ্দীন।