টিয়াকে হাসপাতালে রেখে মায়ের সঙ্গে বাড়ি গেলো দোয়েল কোয়েল ময়না

খোঁজ-খবর নিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্ম নেয়া চার নবজাতকের মধ্যে দোয়েল, কোয়েল, ময়নাকে নিয়ে তাদের মা কল্পনা খাতুন বাড়ি ফিরেছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তারা বাড়ি ফেরে। ছোট সন্তান টিয়া জ্বর ও ঠান্ডায় আক্রান্ত হওয়ায় তাকে চুয়াডাঙ্গার ১০০ শয্যা জেলা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে। কল্পনা খাতুন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের মো. মাহবুল হকের স্ত্রী। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গার বেসরকারি ক্লিনিক আঁখিতারা জেনারেল হাসপাতালে গাইনি কনসালট্যান্ট আকলিমা খাতুনের তত্ত্বাবধানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একে একে চার কন্যাসন্তান জন্ম দেন কল্পনা খাতুন। খবর পেয়ে পরদিন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান চার সন্তানের নাম দেন দোয়েল, কোয়েল, ময়না ও টিয়া। এদিকে গতকাল শুক্রবার বিষ্ণুপুর গ্রামে গিয়ে খোঁজখবর নেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মনজু ও দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা মিতা। এ সময় তারা শুভেচ্ছা উপহার দেন ও মিষ্টিমুখ করান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গার ১০০ শয্যা জেলা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ৭ নম্বর শয্যায় নবজাতক টিয়াকে তার নানি হাজেরা বেগমের কোলে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। টিয়ার পায়ে ক্যানুলা লাগানো। নাক দিয়ে শরীরে যাচ্ছে অক্সিজেন। আলাপকালে হাজেরা বেগম বলেন, সকালে শিশু বিভাগের চিকিৎসক দেখে চিকিৎসা দিয়ে গেছেন। নার্সরা মাঝেমধ্যেই আসছেন খোঁজ নিতে।

জেলা হাসপাতালের শিশু বিভাগের পরামর্শক আসাদুর রহমান বলেন, জ্বর, ঠান্ডাসহ ইনফেকশনে আক্রান্ত টিয়াকে সংকটাপন্ন অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিকেলে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। নিবিড় চিকিৎসায় শুক্রবার সকাল থেকে সে অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত। তবে দোয়েল, কোয়েল ও ময়নার শারীরিক অবস্থা এখনো ভালো। এই শিশুদের সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে হলে অবশ্যই বাইরের লোকজনকে কাছে ভিড়তে দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে ঘরের দরজা বন্ধ রাখতে হবে। তা না হলে এই শিশুরাও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।

এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা হাসপাতালের পাশেই আঁখিতারা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে কল্পনা খাতুন ও তার তিন নবজাতক ঘিরে উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা যায়। হাসপাতালের কয়েক কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বারণ করেও দর্শনার্থীর প্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। যাকেই বারণ করা হচ্ছে, সেই কল্পনা খাতুনদের আত্মীয় পরিচয়ে কেবিনে ঢুকছেন। নবজাতক দোয়েলকে কোলে নিয়ে মা কল্পনা খাতুন, কোয়েলকে কোলে নিয়ে বাবা মাহবুল হোসেন ও ময়নাকে কোলে নিয়ে চার নবজাতকের ভাই নাঈম হাসানকে একটি শয্যায় বসে থাকতে দেখা গেছে। সেখানে কল্পনার নিকটাত্মীয় জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তাদের বাড়িতে নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স চলে এসেছে।

গাইনি কনসালট্যান্ট আকলিমা খাতুন বলেন, আঁখিতারা জেনারেল হাসপাতালে অবস্থানকালে অতিরিক্ত দর্শনার্থীর কারণে চার কন্যাসন্তানের মধ্যে ছোট মেয়ে টিয়া অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে প্রসূতি মা কল্পনা খাতুন এবং তার তিন সন্তানের অবস্থা ভালো থাকায় দুপুরে তাদের ছুটি দেয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ পর কল্পনা খাতুনকে রুটিন চেক করতে আসতে বলা হয়েছে। এছাড়া শিশুসন্তানদের নিয়মিত টিকা দেয়াসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে, শুক্রবার দুপুরে বিষ্ণুপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় মাহাবুব-কল্পনা দম্পতির একসঙ্গে জন্ম নেয়া চার শিশু কন্যাকে দেখতে যান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান মনজু। এসময় তিনি মাহবুব-কল্পনা দম্পতিকে মিষ্টিমুখ করান ও শিশু কন্যাদের কোলে নিয়ে আদর করেন ও চার শিশু কন্যার সবসময় পাশে থাকবেন বলে মাহবুব-কল্পনা দম্পতিকে আশ্বস্ত করেন এবং ডিসি সাহেবের দেয়া নামকরণের প্রশংসা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা শেখ হাফিজুর বিন শামসের, আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক এমএ করিম, ছাত্রলীগ নেতা হৃদয়, মুন্না প্রমুখ।

দামুড়হুদা/জুড়ানপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদার বিষ্ণুপুর গ্রামের মাহাবুল-কল্পনা দম্পতির ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয়া চার জমজ কন্যা সন্তানের খোঁজখবর নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা মিতা। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দামুড়হুদার বিষ্ণুপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার মাহাবুল-কল্পনা দম্পতির বাড়িতে গিয়ে জমজ চার কন্যা সন্তানের খোঁজখবর নেন। এসময় দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা মিতা ওই দম্পতিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে মিষ্টিমুখ করান। এরপর সদ্য জন্ম নেয়া দোয়েল, কোয়েল, ময়না ও টিয়ার নামে নিজ হাতে চারটি ফলজ ও বনজ বৃক্ষ রোপণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কার্পাসডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বিশ্বাস, জুড়ানপুর ইউপির ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার আল মাহমুদ আসলাম, ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার খোকন আলী প্রমুখ। এ সময় দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা মিতা সকলের উদ্দেশ্য বলেন, আপনার যে যার সাধ্যমতো দোয়েল, কোয়েল, ময়না ও টিয়ার পরিবারকে সহযোগিতা করবেন। আমরা উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক তাদের পাশে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো।

উল্লেখ্য, গত ৯ মে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বেসরকারি আঁখিতারা জেনারেল হাসপাতালে জমজ ৪ কন্যা সন্তান জন্ম দেন কল্পনা খাতুন। কল্পনা খাতুনের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১০ মে বুধবার চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান সদ্য জন্ম নেয়া শিশুদের খোঁজখবর নেন এবং পরিবারটির অনুরোধে তাদের নামকরণ করেন দোয়েল, কোয়েল, ময়না ও টিয়া। এসময় জেলা প্রশাসক পরিবারটিকে নগদ অর্থ সহায়তা করেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More