বন্ধের নির্দেশনা সত্ত্বেও খোলা কোচিং সেন্টার

সম্পাদকীয়

গত মাসের ৩০ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী। দেশের শিক্ষাক্ষেত্র তো বটেই, যে কোনো পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের রয়েছে নানা উদ্যোগ ও তৎপরতা। যেহেতু বিগত বছরগুলোতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় দেশের কিছু কোচিং সেন্টারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, সেহেতু এ ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে তাদের জন্য আলাদাভাবে নির্দেশনা রয়েছে। সেই অনুযায়ী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে সম্পন্ন করতে গত মাসের ২৬ এপ্রিল থেকে চলতি মাসের ২৩ মে পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় সরকার। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কোচিং সেন্টারগুলোর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা কোনোরকমের তোয়াক্কা না করে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে তাদের নিয়মিত কর্মকা-! গতকাল রোববার দৈনিক মাথাভাঙ্গায় একটি প্রতিবেদনে জানা গেলো চুয়াডাঙ্গায় খোলা রাখায় চার কোচিং সেন্টারের জরিমানার পাশাপাশি তালা ঝুলিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সরকারের নির্দেশনার গুরুত্ব না দেয়ার এ ঘটনাকে দুঃসাহসিক প্রবণতাই বলা চলে। তবে এ দুঃসাহস নিঃসন্দেহে একটি অন্যায় এবং অপরাধমূলক।

আমরা জানি বিভিন্নভাবে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনাগুলো ঘটে। এ ঘটনায় এখন সবচেয়ে সহযোগী মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এর বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে এটিকে দ্রুত ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়। আর এ বিষয়ে কোচিং সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে রয়েছে এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের অভিযোগ। তবে বারবার স্কুল, কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাগুলো এটাও প্রমাণ করে যে, প্রশ্নপত্র ফাঁসে শুধু কোচিং সেন্টারই দায়ী নয়। আমরা মনে করি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে শুরু করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছুনো পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে নেতৃত্ব ও সুষ্ঠু তত্ত্বাবধায়নের অভাব, কর্তব্যে অবহেলা, সততা ও নৈতিক স্খলনও এর জন্য দায়ী। তবে কোচিং সেন্টারগুলোর সরকারি নির্দেশনার লঙ্ঘন নিঃসন্দেহে একটি গুরুতর অপরাধ।

আমরা এও জানি, গত কয়েক বছর ধরে একাডেমিক পরীক্ষার সময় প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে রক্ষা পেতে কোচিং সেন্টারগুলোর ওপর সরকারি নির্দেশনা থাকে। তবে প্রতিবছরই একই চিত্র দেখা যায়। অর্থাৎ কেউ মানছে না এ নির্দেশনা। অবস্থাদৃষ্টে এমন মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক যে, এটি কি তাহলে সংশ্লিষ্টদের একটি নিয়মরক্ষামূলক কাজ? যদি তা-ই না হবে, তাহলে এমন ঘটনা বারবার কেন ঘটে? কেনইবা সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয় না? সংগত কারণেই এসব প্রশ্ন ওঠে।

আমরা মনে করি, শিক্ষা হলো একটি দেশের মেরুদ-। একটি শিক্ষিত জাতিই পারে একটি উন্নত সমৃদ্ধ সমাজ গঠন করতে। সেই শিক্ষা নিয়ে কোনোরকমের হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। সুতরাং কোচিং সেন্টারগুলোর সরকারি নির্দেশনার লঙ্ঘনকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি ব্যবস্থা করা জরুরি। যাতে করে পরবর্তীতে একই অপরাধ পুনরায় সংঘটিত না হয়। পাশাপাশি এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের শুধু দায়সারা উদ্যোগ নিলেই চলবে না, কঠোর তদারকির দিকেও নজর দিতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More