টানা এক সপ্তাহে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় : তীব্র গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি তাপপ্রবাহ : তাপমাত্রা আরও বাড়ার পূর্বাভাস

স্টাফ রিপোর্টার: চৈত্র মাসের মাঝামাঝিতে এমনিতে গরমই থাকার কথা। তবে মাসের শুরুতে এবং গত সপ্তাহে দেশজুড়ে কালবৈশাখীর পাশাপাশি কিছু বৃষ্টিপাত হওয়ায় গরম কিছুটা কম ছিলো। কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে আবার সূর্যের তাপ বাড়ছে। এমনকি দুই দিনেই তাপমাত্রা বেড়ে গেছে ৩-৪ ডিগ্রি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। যার কারণে তীব্র গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। এর মধ্যে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও বাড়বে। এই সময়ে নেই বৃষ্টির কোনো পূর্বাভাসও। গতকাল শনিবার দেশের তিন বিভাগ এবং ১১ জেলায় তাপপ্রবাহ ছড়িয়েছে। এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহী ও ফরিদপুরে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন দেশের সর্বনিম্ন ১৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময়ে সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। এদিকে আকাশ মেঘলা থাকলেও বৃষ্টির কোনো পূর্বাভাস জানায়নি আবহাওয়া অধিদফতর। এতে গরমের মাত্রা আরও তীব্রভাবে অনুভূত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকাযয় অবস্থান করছে। মরসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এ কারণে গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে।

রমজানের শুরুতে কয়েক দিন টানা বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা ছিলো সহনীয় পর্যায়ে। এতে রোজাদাররা বেশ স্বস্তি অনুভব করেন। তবে গত কয়েক দিন অব্যাহতভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সারাদিন রোজা রেখে অনেক ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসকরা পানীয় ও তরল খাবার বেশি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কয়েকদিন ধরে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে তাপ প্রবাহ। এতে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। গতকাল শনিবার বিকাল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা সারাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গত রোববার (২ এপ্রিল) থেকে টানা এক সপ্তাহ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। গরমের মরসুমে একটানা ৭ দিন ধরে এক জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়া বিরল। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। টানা এক সপ্তাহে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করায় চুয়াডাঙ্গার জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। তীব্র তাপদাহে এ জেলার খেটে খাওয়া মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। তীব্র গরম ও রোদের তাপের কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, ভ্যান-রিকশা চালকরা কাজ করতে না পেরে অলস সময়ও পার করছেন। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠা-া পরিবেশে স্বস্তি খুঁজছে স্বল্প আয়ের মানুষরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা ঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। আবার অনেকে জরুরি প্রয়োজন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচ- তাপদাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি খুবই কম। গরমের কারণে খেটে খাওয়া মানুষেরা রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। সূর্যের প্রখরতায় গাছের নিচে বসে চোখে-মুখে পানি দিয়ে গরম থেকে বাঁচার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার পলাশপাড়ার রিকশা চালক আব্দুর রাজ্জাক জানান, গরমের কারণে মানুষ বাইরে কম বের হচ্ছেন। তাই অলস বসে থাকছি। ভাড়া কম হচ্ছে। একদিকে সূর্যের তাপ আর অন্যদিকে রাস্তা থেকে গরম উঠছে। চুয়াডাঙ্গা কুলচারা গ্রামের বাসিন্দা খাইরুল সরকার বলেন, ‘দিনে সূর্যের তাপ অনেক বেশি। গরমের কারণে কাজে যেতে পারছি না’ চুয়াডাঙ্গা কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের জাহিদুল ইসলাম জানান, রমজান মাসে গরমে খুব কষ্ট হচ্ছে। বাইরে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। গরমে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। বাড়িতে বসে থাকলেও পেট চলবে না। বিদায়ের পূর্বে চৈত্র ফিরেছে তার চেনা রূপে। প্রচ- গরমে রোজাদাররা হাপিয়ে উঠছেন। এর মধ্যেও আবহাওয়া অফিস দাবদাহ নিয়ে দিলো দুঃসংবাদ।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানান, গত ৭ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে এ জেলায়। গত রোববার (২ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার (৩ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার (৮ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, টানা ৭ দিন ধরে এ জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে। তার সঙ্গে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে একটানা ৫ দিন ধরে। এধারা আরও কিছুদিন অব্যহত থাকবে। সারাদেশের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, এসময় বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ ছিলো ১৩ শতাংশ। এটি এ জেলার এ মরসুমেরও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। বৃষ্টিপাত না থাকার কারণে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ কমে গেছে। বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ কম থাকায় মানুষের শরীরে ঘামও কম হচ্ছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More