সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড
মৃদু দাবদাহ বইছে দেশের ২৫ অঞ্চলে : বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই
স্টাফ রিপোর্টার: চৈত্রের শেষ সময়ে এসে গরমের উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে, যা আরও কিছুটা চড়ার আভাস দিচ্ছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস। গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। যা চলতি মরসুমে সারাদেশের সর্বোচ্চ। খুলনা বিভাগের ১০ জেলাসহ দেশের ১৯টি অঞ্চলের মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী কয়েকদিন এটি দেশের অন্যান্য স্থানেও বিস্তৃত হতে পারে। যে কারণে আগামী তিনদিন বর্তমান তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। তবে সিলেটসহ কোথাও কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় শুধু সন্দ্বীপ ও চাঁদপুরে সামান্য বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জানা গেছে, মার্চ-এপ্রিল-মে এই তিনমাস কালবৈশাখীর মরসুম। মার্চের ১৪ তারিখের পর প্রতিদিনই কিছু না কিছু বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ কারণে তাপমাত্রা বেশি বাড়েনি। মাঝে মধ্যে দু’এক জায়গায় মৃদু দাবদাহ ছিলো। তবে এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে উষ্ণতম মাস। এই সময়ে বৃষ্টি হলে কালবৈশাখী ঝড় হয়। বৃষ্টিপাত না হলে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। শুক্রবার খুলনা বিভাগের ৬টি অঞ্চল, ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, সন্দ্বীপ, রাঙ্গামাটি, ফেনী, বান্দরবান, পটুয়াখালী, খেপুপাড়া ও ভোলা অঞ্চরের ওপর দিয়ে মৃদু দাবদাহ বয়ে গেছে। এ সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ বছরেরও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো তেতুলিয়ায় ১৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও ফরিদপুরে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি, যশোর ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি, ইশ^রদীতে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানান, গত ৬ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গাতে। গত রোববার (২ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার (৩ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার (৫ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে টানা তিনদিন মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাওয়ার পর তা মাঝারি তাপ প্রবাহে রুপ নিয়েছে। এধারা আরও কিছুদিন অব্যহত থাকবে। সন্ধ্যায় সারাদেশের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। এ সময় বাতাসে আদ্রতার পরিমান ছিলো ৩৭ শতাংশ। এটি এ জেলার এই মরসুমেরও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। টানা ৬ দিন ধরে এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। গরমের মরসুমে একটানা এতদিন ধরে এক জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়া বিরল। তিনি আরও জানান, গত বছরের সাথে এবছর গরমের তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে এবছর গরমের তীব্রতা অনেক বেশি। গত বছর জানুয়ারি মাস থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো কিন্তু এ বছর এপ্রিল মাস চলে আসলেও বৃষ্টির দেখা নেই। বৃষ্টিপাত না থাকার কারণে বাতাসে আদ্রতার পরিমান কমে গেছে। আবার আদ্রতা কম থাকার কারণে মেঘ তৈরি কম হচ্ছে। যার ফলে হঠাৎ কালবৈশাখি ঝড় ছাড়া সাধারণ বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা আপাতত নেই। পূর্বাভাস অনুযায়ী, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকার সম্ভাবনা থাকলেও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়ার ‘সিনপটিক’ অবস্থায় বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মরসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এতে আরও বলা হয়, বর্তমানে রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও মানিকগঞ্জ জেলাসহ খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তৃত হয়ে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।