বঙ্গবাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড : লেলিহান শিখায় স্বপ্ন পুড়ে নিঃশেষ

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর ভাঙচুর বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের : ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের পৃথক তদন্ত কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর বঙ্গবাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকা- ঘটেছে। মঙ্গলবার ভোরে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠা আগুনে পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়েছে চারটি মার্কেটের সমন্বয়ে তৈরি বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্স। কাঠ ও টিনের তৈরি তিনতলা এই মার্কেটে ছিল প্রায় ৫ হাজার দোকান, গোডাউন ও কারখানা। এছাড়াও কমবেশি পুড়েছে আশপাশের আরও পাঁচটি মার্কেট। ব্যবসায়ীদের ধারণা, সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে হাজার কোটি টাকার সম্পদ। ঈদ উপলক্ষ্যে অতিরিক্ত মালামাল তুলে দোকান সাজিয়ে বসেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তখনই যেন ঠিক নরকের আগুনের লেলিহান শিখায় তাদের স্বপ্ন পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, বিতর্কিত ‘গায়েবি’ মার্কেট থেকে সূত্রপাত হওয়া আগুনের ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে, শুরুতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন। তারা বলেন, আগুনের ধাক্কায় অনেক ফায়ার কর্মীর ছিটকে পড়ার মতো অবস্থা হয়। এ অবস্থায় যোগ দেন সেনা-নৌ, বিমান, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। ব্যবহার করা হয় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার। তাদের প্রাণান্তকর ১০ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অবিরাম পানির জোগান দিতে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট। ব্যবহার করা হয়েছে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার। সার্বক্ষণিক পুরো পরিস্থিতি মনিটরিং ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অগ্নিকা-ের ঘটনায় তিনি দুঃখপ্রকাশ করেন। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহমর্মিতা জানান। আগুনে সব হারানোয় ব্যবসায়ীদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বঙ্গবাজারের আশপাশের পরিবেশ। তাদের একজন অপরজনকে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্বজনকে জড়িয়ে ধরে প্রশ্ন করেন এখন কী হবে। আমরা তো পথের ভিখারি হয়ে গেলাম। আমাদের সব শেষ। এখন কীভাবে ঋণ পরিশোধ করব। টাকা আসবে কোথা থেকে-এ ধরনের কথা বলে কাঁদতে থাকেন। কোটি কোটি টাকার মালামাল হারানোর শোক সইতে না পেরে একাধিক ব্যবসায়ী ঘটনাস্থলেই সংজ্ঞা হারান। তাদের আহাজারি উদ্ধারকর্মী ও উপস্থিত জনতাকেও আবেগপ্রবণ করে তোলে। উপস্থিত জনতার মধ্যে অনেককেই অনাত্মীয় ব্যবসায়ীদের সান্ত¡না দিতে দেখা যায়। অগ্নিকা-ে প্রাণহানির খবর মেলেনি, তবে অন্তত ৪০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ক্ষয়ক্ষতির ধকল সামাল দিতে অন্তত ৭০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের কেউ কেউ বলেন, সরকারি সহায়তা না পেলে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো পথ থাকবে না। এমন সকাল তারা কেউ দেখতে চাননি বলে হাহাকার করতে থাকেন।

এদিকে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর লাগোয়া মার্কেটগুলোর আগুন নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে বাহিনীটির সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। তাদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে ফায়ার কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন ৭/৮ জন ফায়ার কর্মী। দীর্ঘসময়ে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় একপর্যায়ে আগুনের শিখা ছুঁয়ে ফেলে পুলিশ সদর দপ্তর। সেখানে অবস্থিত পুলিশের ব্যারাকেও আগুন লাগে। সাময়িক বন্ধ করে দেয়া হয় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কার্যক্রম। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, অগ্নিকা-ের কারণ খুঁজে বের করাসহ সবকিছু খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয়েছে একাধিক তদন্ত কমিটি।সরেজমিন দেখা গেছে, আগুনে কাপড় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পুরো রাস্তাজুড়ে পানি আর পানি। কালো পানিতে পুরো এলাকা তলিয়ে গেছে। অগ্নিকান্ডের কারণে বঙ্গবাজারের চারদিকে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক যানজটের। আশপাশের সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

গতকাল মঙ্গলবার ভোরে এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। অগ্নিকা-ের প্রত্যক্ষদর্শী তরুণ ব্যবসায়ী সুমন (৩৫) বলেন, ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের সামনের মার্কেট বঙ্গবাজার মার্কেট নামে পরিচিত। তবে মার্কেটের ভেতরে কয়েকটি ভাগ আছে। পূর্বদিকে পুলিশ সদর দপ্তর লাগোয়া অংশটি গুলিস্তান মার্কেট নামে পরিচিত। আমার দোকান ছিল গুলিস্তান মার্কেটের দ্বিতীয় তলায়। আমি প্যান্টের পাইকারি ব্যবসা করি। ২০১১ সাল থেকে এখানে ব্যবসা করছিলাম। আমার বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানাধীন পূর্ববোয়ালিয়া গ্রামে। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর দিকে আমার বাসা। তিনি বলেন, বঙ্গবাজারের অধিকাংশ দোকানের কর্মচারীরাই দোকানে থাকেন না। আমার দোকানের কর্মচারী থাকেন পাশেই সিদ্দিকবাজার এলাকায়। ভোর ৬টায় কর্মচারী আমাকে মার্কেটে আগুন লাগার খবর দেয়। আমি দ্রুত বঙ্গবাজারের দিকে আসি। সব মিলিয়ে ৪৫ মিনিটের মতো সময় লাগে আমার বঙ্গবাজার আসতে। সকাল থাকায় যানজট কম ছিল। তাই দ্রুত পৌঁছে যাই। এসে দেখি সব শেষ।

স্থানীয়রা জানান, মূলত ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আগুন লেগেছে। প্রথমে আগুন লাগে পুলিশ সদর দপ্তরের পশ্চিম দিকে থাকা ৬তলা ভবন লাগোয়া আদর্শ মার্কেটে। মার্কেটটি কাঠ, আর টিন দিয়ে তৈরি। সেখানে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকলে এক পর্যায়ে আগুন লেগে যায় পুলিশের ওই ছয়তলা ভবনে। ভবনটির পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় ব্যারাক আছে। দ্বিতীয়তলা পর্যন্ত বিভিন্ন কার্যক্রম চলে। ভবনটির দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থতলায় থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে গেছে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ভবনটির পেছন দিকে রাখা অন্তত শতাধিক মোটর সাইকেল দ্রুত পুলিশ সদস্যরা টেনে-হিঁচড়ে সরিয়ে ফেলেন। মোটর সাইকেলের ট্যাঙ্কে থাকা অকটেন বা পেট্রোলে ভয়াবহ ঘটনার আশঙ্কা ছিল। ভবনটির নিচতলায় দক্ষিণ দিকে পুলিশ মার্ট নামে সুপারশপ আছে। আগুনে পুরো ভবনের দরজা-জানালার কাঁচ ও আসবাবপত্র পুড়ে ভস্মীভূত হয়।

অগ্নিকা-ের সময় পুলিশ সদর দপ্তরে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ কর্মকর্তারা আতঙ্কে ভবন ছেড়ে নিচে নেমে আসেন। কর্মকর্তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, আগুনের কালো ধোঁয়া সেখানে কাজ করা যাচ্ছিল না। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আতঙ্কের কারণে বন্ধ হয়ে যায় সব ভবনের দাপ্তরিক সব কাজকর্ম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুনের তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, বিদ্যুৎ বেগে আগুন দক্ষিণ দিক থেকে বরাবর উত্তর দিকে যেতে থাকে। মুহুর্তেই আগুন লেগে যায় বঙ্গবাজারের দক্ষিণ দিকটায়। বঙ্গবাজারের দক্ষিণ দিকে ঢাকা মহানগর হকার্স মার্কেট। এই মার্কেটটিও পুলিশ সদর দপ্তরের ঠিক পেছনে। মার্কেটটি তিনতলা। কাঠ আর টিন দিয়ে তৈরি। ফ্লোরগুলো কাঠের পাটাতন দিয়ে তৈরি। আগুন দেখতে দেখতে বঙ্গবাজার আদর্শ মার্কেট লাগোয়া বঙ্গবাজার, মহানগর মার্কেট, মহানগরী কমপ্লেক্স ও গুলিস্তান মার্কেটসহ মোট ৫টি মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আগুনের তীব্রতা আরও বাড়তে থাকলে আগুন লেগে যায় বঙ্গবাজার লাগোয়া সাততলা এনেক্সো মার্কেটে। মার্কেটটির আন্ডারগ্রাউন্ডে অর্থাৎ মাটির নিচে বিরাট পাইকারি শাড়ির দোকান। এ মার্কেটটির ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলায় আগুন লাগলেও অন্য তলায় আগুন লাগতে পারেনি। বঙ্গবাজার পুরোটা ভস্মীভূত হওয়ার সময় বাতাসে আগুন ছড়িয়ে পড়ে রাস্তার পশ্চিম দিকে থাকা চারতলা ইসলামিয়া মার্কেট ও ছয়তলা বঙ্গবাজার হোমিও কমপ্লেক্স মার্কেটে।

এদিকে ভয়াবহ আগুন লাগার খবর পেয়ে ছুটে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানী। তিনি বলেন, ভোরেই আমি বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পাই। ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তরফ থেকে আমাদের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়। বিশেষ করে পানির। কারণ আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের যে পরিমাণ পানি ছিল তা শেষ হয়ে গেছে।

খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি দ্রুত শহীদুল্লাহ যাই। গিয়ে দেখি আগে থেকেই হলের প্রভোস্ট তার ছাত্রদের নিয়ে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করছেন। দেখে ভালো লাগে। হলের প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলি। মানবিক কারণে আমরা আমাদের ছাত্রদের ফায়ার সার্ভিসকে আরও বেশি সহায়তা করতে বলি।

তিনি বলেন, এমন একটি মানবিক বিপর্যয়ের সময় অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই। যেখানে হাজার হাজার মানুষের রুটি-রুজির বিষয়, জানমালের ক্ষয়ক্ষতির বিষয় সেখানে তো কোনো কথাই নেই। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের দ্রুত শহীদুল্লাহ পুকুর থেকে যত পানি লাগে নিতে বলি। যদিও ততক্ষণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পুকুরে পাম্প বসিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। পুকুরটি থেকে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ১৭টি পাম্প বসিয়ে ফায়ার সার্ভিস বেলা চারটা পর্যন্ত পানি নিয়েছে। সেই পানিতেই এক পর্যায়ে দুপুর প্রায় ১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগে কর্মচারী হাসপাতালের সামনের পুকুর থেকে পানি নিয়েছে। সেখানকার পানি শেষ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহায়তা চায় ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক আনিসুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পুকুরপাড়ে সাংবাদিকদের বলছিলেন, আগুনের তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, মনে হচ্ছিল পানি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা আগুনে পুড়ে যাচ্ছে। আগুন নিচে পড়তেই পারছিল না। আগুনের তাপে পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ ও ছাত্ররা পানিসহ সার্বিকভাবে সহায়তা না করলে আগুন নেভানো বড্ড কঠিন হয়ে পড়ত।

স্থানীয়রা জানান, পুলিশ সদর দপ্তরের পেছনের দিকে লাগোয়া আদর্শ মার্কেট থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। মার্কেট লাগোয়া পুলিশ সদর দপ্তরের একটি ভবন আছে। আগুন ওই ভবনেও লাগে। ফায়ার সার্ভিস মার্কেট ও পুলিশ সদর দপ্তরের ওই ভবনটির আগুন একই সঙ্গে নেভানোর চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের একটি মহল অভিযোগ করেন, ফায়ার সার্ভিস পুলিশ ভবন রক্ষা করতে যতটা ব্যস্ত, মার্কেট রক্ষা করতে ফায়ার সার্ভিস অতটা ব্যস্ত নয়। এমন কথা মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিক্ষুব্ধ কিছু ব্যবসায়ী ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ভেতরে ঢুকে এবং বাইর থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তখন সকাল ৯টার মতো বাজে। ইটপাটকেলের আঘাতে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ভবনটির দরজা-জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। মূল্যবান আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আপনাদের জন্যই জীবন দিচ্ছি। তাহলে কেন আমাদের ওপর আঘাত করছেন। এতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মনোবল হারাতে পারেন। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, আপনাদের রক্ষা করতে গিয়ে গত বছর আমাদের ১৩ জন সহকর্মীর প্রাণ গেছে। ২৯ জন আহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতির পর ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল বলে আমরা ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছিলাম। এ সংক্রান্ত অন্তত ১০ বার নোটিশ করা হয়েছে মার্কেট কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের। তারপরও সেখানে ব্যবসা চলছিল। মূলত মার্কেটটি দেখভাল করার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ)।

ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের দাবি, সাতটি মার্কেটের অন্তত ৫ হাজার দোকান পুড়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকার মালামাল। তার চেয়ে বেশিও হতে পারে। এ ছাড়া আগুন নেভানোর জন্য পানি ছিটানোর কারণে বহু ভালো মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। যেগুলো আর বিক্রির উপযুক্ত নেই। মার্কেটজুড়ে কান্নার রোল পড়ে গেছে। বহু মানুষ বেকার হয়ে পড়বেন। প্রায় শতভাগ দোকানে ঈদকে সামনে রেখে প্রচুর টাকার মালামাল তুলেছিলেন। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। কারণ এসব মার্কেটের অধিকাংশ দোকানের কোনো ইন্স্যুরেন্স করা নেই।

দুপুর দেড়টার দিকে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপি কমিশনার পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, পুলিশের বিশেষ শাখাপ্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলামসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা অগ্নিকা-ের প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। বেলা তিনটায় পুলিশ মহাপরিদর্শক আনুষ্ঠানিকভাবে অগ্নিকা-ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, অগ্নিকা-ের ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি কোনো নাশকতা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হবে। পুলিশের ৫টি ওয়াটার ক্যানন রাজারবাগ থেকে এনে অগ্নিনির্বাপণের জন্য কাজে লাগানো হয়। এ ছাড়া আমাদের ওয়াটার রিজার্ভার থেকে প্রায় দুই লাখ লিটার পানি অগ্নিনির্বাপণের জন্য ব্যয় হয়েছে। পুলিশের দুই হাজার ফোর্স কাজ করেছে। আসাদের সব সদস্য মার্কেট লাগোয়া ব্যারাক থেকে বেরুতে পারলেও কোনো ধরনের মালামাল বের করা সম্ভব হয়নি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। পুলিশের তরফ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পুরো বিষয়টি নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত নাশকতা তা খতিয়ে দেখবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, আহত ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের মধ্যে একজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বার্ন ইউনিটে দুইজন দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে একজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী। অপরজন ব্যবসায়ী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয়।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More