কারসাজির মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে থাকে। বিষয়টি বহুল আলোচিত। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ জারালো পদক্ষেপ নেবে-এমন আশ্বাস দেয়া হলেও বাস্তবে তা লক্ষ্য করা যায় না। ফলে ভোক্তাকে বাড়তি দামেই পণ্য ক্রয় করতে হয়। প্রতিবছর রমজান শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগে থেকেই কারসাজি করে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়, যা এ বছরও অব্যাহত ছিলো। এ প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষ অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নিয়ে থাকে, তা দৃশ্যমান নয়। মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে ভোক্তার জন্য দেয়া ছাড় ক্রেতার কাছে পৌঁছায় না। বিষয়টি দুঃখজনক। সরকারের পক্ষ থেকে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বেঁধে দেয়া হলেও কেন তা কার্যকর হলো না, জরুরি ভিত্তিতে তা খতিয়ে দেখা দরকার। লক্ষ্য করা যায়, যখন অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, তখন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা আরও বেড়েছে এবং সংশ্লিষ্ট পণ্যের সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে ভোক্তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, তদারকি সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীদের আঁতাত রয়েছে। এ কারণেই কর্তৃপক্ষ অভিযান পরিচালনা করলেও ভোক্তা এর সুফল পান না। কাজেই আগে সরষের ভেতরের ভূত তাড়াতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এবার রোজা উপলক্ষ্যে চিনি ও ভোজ্যতেলে শুল্কছাড় দেয়ার ফলে এ দুটি পণ্যের দাম কিছুটা কমার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো-বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানিকারকদের সহযোগিতা করেছে। গত বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাহাজ ভাড়া যেভাবে বেড়েছিলো, সেই তুলনায় গত নভেম্বরে প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। এ প্রেক্ষাপটে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে-এটা প্রত্যাশিত হলেও বাস্তবে দাম কমেনি। বরং কোনো কোনো পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষ পরিবারের ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বহু মানুষের আয় কমেছে। এতে বাজারে কোনো কোনো পণ্যের চাহিদা কিছুটা কমেছে। বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা কিছু পণ্যের নামমাত্র দাম কমিয়েছেন। বস্তুত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এমনটি ঘটেছে। এ পরিস্থিতিতে কেউ কেউ বলছেন, তদারকি জোরদার করায় কিছু পণ্যের দাম কমেছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ যখন প্রয়োজনের অর্ধেক পণ্য নিয়ে বাজার থেকে ঘরে ফিরছেন, তখন ‘পণ্যের দাম কমেছে’ এমন মন্তব্য ভোক্তার সঙ্গে বিদ্রুপের শামিল। সংশ্লিষ্টদের উচিত এমন নিষ্ঠুর মন্তব্য থেকে বিরত থাকা। উচ্চমূল্যের কারণে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যখন প্রয়োজনীয় প্রোটিনপ্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তখন পোল্ট্রি খাত নিয়ে চলছে বড় ধরনের কারসাজি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যদি জোরালো ভূমিকা না নেয়, তাহলে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। একই সঙ্গে হাজারো তরুণ উদ্যোক্তা পথে বসতে বাধ্য হবেন। ভরা মরসুমেও চালের বাজারে অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেছে। এটাও ছিল অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির ফল। অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে তুললে মানুষ পরিবারের পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। এসব সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষকে সময়মতো পদক্ষেপ নিতে হবে।