মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচলে এ অঞ্চলের জীববৈচিত্রসহ পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা পাবে
চুয়াডাঙ্গায় আন্তজার্তিক নদীকৃত্য দিবসের আলোচনাসভায় মাথাভাঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের পরিবেশবাদীরা
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় আন্তজার্তিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যে তরুণ প্রবীণ কিছু মানুষ আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। এটাও সফলতার অংশ। এখন আমরা প্রশাসনকে বলতে পারি। জিজ্ঞেস করতে পারি। আমি ধন্যবাদ জানাবো আমাদের এমপি মহোদয়কে। উনি অন্তত সংসদে দাঁড়িয়ে মাথাভাঙ্গা নদীর জন্য কিছু কথা বলেছেন। সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। আমরা প্রত্যেকটি সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে আমরা আবার বসবো। আমরা রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের নিয়ে বসবো। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সকলের সহযোগিতা চাইবো। আমি আশাবাদী, আমরা আশাবাদী। তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগে রাজশাহী গিয়েছিলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। আজকে যে রকম রাজশাহী দেখতে পাওয়া যায়, এমন ছিলো না। অপরিকল্পিত অপরিষ্কার শহর ছিলো। এখন রাজশাহী অনেক সুন্দর। তার কারণ, কিছু মানুষ একত্রিত হয়েছে। তারা চেয়েছে এই শহরকে ভালো করতে হবে। সমাজ উন্নয়নে চিন্তা করেন, এমন মানুষেরা একত্রিত হয়েছে বলেই রাজশাহীর মেয়র কাজ করতে পেরেছেন। এটি একটি উদাহরণ। আমরা কি চুয়াডাঙ্গায় যারা বসবাস করি, এরকম ভালো কিছুর উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারি না। আমি আশা করি, পারবো। পারবো এই বিশ্বাসটা মনে, অন্তরে ধারণ করতে পারলেই আমরা পারবো। মাথাভাঙ্গা নদীকে বাঁচাতেই হবে। মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচলে জেলার কুমার নদ, ভাটুই নদী, নবগঙ্গা নদী, চিত্রা নদী ও ভৈরব নদ বাঁচবে এবং এ অঞ্চলের জীববৈচিত্রসহ পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা পাবে। বাঁচবে প্রকৃতি ও জীবন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সভাপতি নাজমুল হক স্বপন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি কৃতজ্ঞ, এরকম একটি সামাজিক উদ্যোগের সভা আমার সমীকরণ অফিসে বসে হচ্ছে। ভালো কাজে মানুষের সংখ্যা খুব কম। আমাদের দেশের সমস্যা হচ্ছে, এক কথা বার বার বলতে হয়। ভালো কাজে তো আরও বেশি বলা লাগে। সেই কাজটি মাথাভাঙ্গা নদী বাচাঁও আন্দোলন করছে। এই কাজটি আমাদের করে যেতে হবে। জীবন যদি বাঁচাতে হয়, তাহলে জিববৈচিত্র বাঁচাতে হবে। জিববৈচিত্রকে বাঁচাতে হলে নদীকে বাঁচতেই হবে। এভাবেই হয়ত একদিন আমরা সফল হবো। সবাইকে সচেতনতার কাজটি করে যেতে হবে। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের সহ-সভাপতি শাহ আলম সনি। তিনি বলেন, আমাদের মাথাভাঙ্গা নদীর শাখা নদী আছে ১১টি। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকায় এখন সেটা নেমে এসে ৭টা হয়েছে। এরমধ্যে ৫টির সংস্কার হয়েছে। নদী খননে অনেক কাজ ছিলো। বরাদ্দে নদীর পার বাধিয়ে দেয়া, গাছ লাগানো, ওয়াকিং ওয়ে তৈরি করা। কিন্তু নদী খননের নামে এসকে বেটার মেশিং দিয়ে আচড়ে দেয়া হয়েছে। নদীর টানা ধারাবাহিক খনন করা হয়নি। নবগঙ্গায় সাতগাড়ি থেকে নূরনগর পর্যন্ত খনন করা হয়নি। আমাদের সম্মিলিত কণ্ঠে আওয়াজ তুলতে হবে। আমাদের সোচ্চার হতে হবে। সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাজাহান আলী বিশ্বাস। তিনি বলেন, মানুষের অসচেতনতার কারণে মরা পশুপাখি মাথাভাঙ্গা নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে বাড়ছে নদী দূষণ। জেলা শহরের বেশ কয়েকটা ড্রেনের মাধ্যমে নোংরা পানি নদীতে দেদারছে নামছে। এতে নদীর পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়ছে। আমাদের মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০টায় চুয়াডাঙ্গা মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের আয়োজনে সময়ের সমীকরণ অফিসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক মেহেরাব্বিন সানভীর পরিচালনায় উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সভাপতি কোরবান আলী ম-ল, চুয়াডাঙ্গা প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সভাপতি ও এমএ বারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক একেএম. আলী আখতার, চুয়াডাঙ্গা প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সদস্য আসিরুল ফারুক, চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের সাবেক সহকারী অধ্যাপক এ.এস.হেলাল নুর, চুয়াডাঙ্গার সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা আকাংখার নির্বাহী পরিচালক শাহীন সুলতানা মিলি, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা লোকমোর্চার সাধারণ সম্পাদক পারভিন লাইলা, মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের সহ-সম্পাদক ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত কুমার সিংহ রায় প্রমুখ।