নৌকার জনপ্রিয়তা দেখে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিপুল ও তার লোকজন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে
আলমডাঙ্গার নাগদাহ ইউপি নির্বাচন : নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী হায়াত আলীর পাল্টা সংবাদ সম্মেলন
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন যত ঘন আসছে আর তৈরি হচ্ছে নানা শঙ্কা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নৌকা প্রতীকের হায়াত আলী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (স্বতন্ত্র) চশমা প্রতীকের ইজাজ ইমতিয়াজ বিপুল জোয়ার্দ্দারের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতিসহ নানা শঙ্কা সৃষ্টি করছে। রোববার বিকেলে নৌকা প্রতীকের হায়াত আলীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন চশমা প্রতীকের ইজাজ ইমতিয়াজ বিপুল জোয়ার্দ্দার। তার ঠিক একদিন পর অর্থাৎ গতকাল সোমবার চশমা প্রতীকের বিপুল জোয়ার্দ্দার ও তার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনাসহ নানা অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নৌকার প্রার্থী হায়াত আলী। গতকাল বিকেলে নাগদাহ ইউনিয়নের খেজুরতলা বাজারে নৌকা প্রতীকের শত শত কর্মী-সমর্থকের উপস্থিতিতে সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী হায়াত আলী উল্লেখ করেন, আসন্ন ১১নং নাগদাহ ইউপি নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দার ছেলুন এমপি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতি প্রগাঢ় বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করে আসছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড আমাকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করার পর থেকে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে রাতদিন পরিশ্রম করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে নাগদাহ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। এরই মধ্যে ইউনিয়নের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নৌকার শক্ত ভিত্তিস্থাপন হয়েছে। নৌকা প্রতীকের এই ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইজাজ ইমতিয়াজ জোয়ার্দ্দার বিপুল ও তার সমর্থকদের মনোবল ভেঙে গেছে। ফলে তারা গত ১১ মার্চ গভীর রাতে নির্বাচনী আইন ও বাধ্যবাধকতা অমান্য করে আমার নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরতা চালিয়েছে। বিপুল জোয়ার্দ্দারের লোকজন তার নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে। এতে আমার নৌকা প্রতীকের ৮জন সমর্থক মারাত্মক রক্তাক্ত জখম হয়। তারা সবাই এখনও চিকিৎসাধীন। তবে এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী ও নৌকা প্রতীকের কর্মী দবির আলী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ-তে ক্লিনিক্যালি ডেড অবস্থায় আছেন। আল্লাহ যেন দবিরকে বাঁচিয়ে দেন। আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমি দবিরের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হায়াত আলী আরও বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী বিপুল জোয়ার্দ্দার নৌকা প্রতীকের জনপ্রিয়তা দেখে বেসামাল হয়ে পড়েছেন। তিনি এখন নির্বাচন বানচাল করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। তাই তো তিনি তার পালিত সন্ত্রাসীদের নির্বাচনী মাঠে নামিয়ে ভোটের মাঠে তা-ব চালাচ্ছেন। নির্বিচারে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করছেন নৌকার নেতাকর্মীদের। আর নৌকার নির্বাচনী অফিসও নেতৃত্ব দিয়ে ভাঙচুর করছেন। বিপুল জোয়ার্দ্দার নির্বাচনী মাঠে রীতিমতো আতঙ্ক সৃষ্টি করে রেখেছেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হায়াত আলী দাবি করেন, ১১ মার্চ শনিবার রাতে নির্বাচনী প্রচাররণা চালানোর সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী ইজাজ ইমতিয়াজ জোয়ার্দ্দার বিপুলের প্রত্যক্ষ নির্দেশে ওই বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটিয়েই তারা থেমে থাকেনি, সে সময় তারা নিজেদের অফিস ভাঙচুর করে নৌকার পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে অপবাদ রটিয়েছে।
হায়াত আলী আরও উল্লেখ করেন, আমরা তাদের নামে মামলা করেছি, নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে দরখাস্ত দিয়েছি, আজ সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমি বিচার প্রার্থী। আমরা প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই সামর্থ থাকা স্বত্বেও আইন হাতে তুলে নিতে অনাগ্রহী। তাই সংযম প্রদর্শন করে চলেছেন। এই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন ওই হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য আমি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। হায়াত আলী বলেন, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আমি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমার অনুরোধ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মাস্টার, সহসভাপতি মুনসুর মোল্লা, হাসেম মোল্লা, মোয়াজ্জেম হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলী, আইয়ুব হোসেন, মুখছার আলী, মোটর আলী, জালাল উদ্দিন ম-ল, আব্দুস সাত্তার, মনজুর রহমান ও মোশারফ হোসেনসহ এলাকাবাসী।
আলমডাঙ্গা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী মাঠে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোনো পক্ষের কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা- সহ্য করা হবে না। উল্লেখ্য, নাগদাহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মাঠে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ২৪ ঘন্টা ইউনিয়নজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা নয়টি। মোট ভোটার ১৩ হাজার ৩৫৭ জন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯জন।