প্রধান আসামি কৃষক লীগ নেতা আতিয়ারসহ ৮জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
মেহেরপুর গাংনীর নওপাড়ায় তামাক ব্যবসায়ী ললোকে নৃশসংশভাবে হত্যা মামলার রায়
মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার লক্ষ্মীনারায়ণপুর ধলা গ্রামের তামাক ব্যবসায়ী এনামুল হক ওরফে নইলো (৪০) হত্যাকা-ের ঘটনায় গাংনী উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আতিয়ার রহমানসহ আট জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ এ দ-াদেশ ঘোষণা করেন।
দ-িতরা হচ্ছে- গাংনী উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও লক্ষ্মীনারায়ণপুর ধলা গ্রামের আতিয়ার রহমান, একই গ্রামের ছামিদুল ইসলাম, সাহার আলী, টিপু সুলতান, আব্দুল খালেক, আক্তারুজ্জামান, আব্দুল মান্নান ও জিল্লুর রহমান।
আদালতসূত্রে জানা গেছে, বিজ্ঞ আদালত এ মামলায় ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। বিজ্ঞ আদালত আসামিদেরকে দ-বিধির ৩০৭ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেন। একই সাথে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা অর্থদ- এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদ-ের আদেশ দেন। রায় ঘোষণাকালে আটজন আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিল। আদালতের নির্দেশে তাদেরকে মেহেরপুর জেলা কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, গাংনী উপজেলার লক্ষ্মীনারায়ণপুর ধলা গ্রামের সাবেক মেম্বর ও কৃষক লীগ নেতা আতিয়ার রহমান এবং বর্তমান মেম্বার আজমাইন হোসেন টুটুল পক্ষের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ব বিরোধ চলে আসছে। এর জের ধরে ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই সন্ধ্যায় বাড়ির পাশর্^বর্তী নওপাড়া গ্রামের ঈদগাহের পাশে আজমাইন হোসেন টুটুলের ভাই এনামুল হক নইলোকে (৪০) কুপিয়ে নৃংশসভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আতিয়ার রহমানকে প্রধান আসামি করে গাংনী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই আজমাইন হোসেন টুটুল। গাংনী থানা পুলিশ তদন্ত শেষে এজাহারভুক্ত আসামিদের নামে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে।
মামলায় পরিচালনায় রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) পল্লব ভট্টাচার্য এবং আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাড. একেএম শফিকুল আলম।
ফিরে দেখা সেই হত্যাকা-: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার লক্ষ্মীনারায়ণপুর ধলা গ্রামে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি আঘাতে এনামুল হক ওরফে ললো (৪০) নামের এক তামাক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই রাতে বাড়ির অদূরবর্তী স্থানে হামলায় আহত অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে পরদিন রোববার ভোর ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত এনামুল হক ললো (নইলো) কাথুলী ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর ধলা গ্রামের মৃত আক্কাস আলীর ছেলে ও ইউপি সদস্য আজমাইন হোসেন টুটুলের ভাই।
স্থানীয় ও আহতের পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, নওপাড়া গ্রামের এক আত্মীয়ের ছেলের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান থেকে রাতে বাড়ি ফিরছিলেন এনামুল হক ললো। বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে নওপাড়া গ্রামের ঈদগাহ মোড়ে মোটরসাইকেলযোগে পৌঁছান তিনি। সেখানে আগে থেকে ওৎপেতে থাকা কয়েকজন দুর্বৃত্ত তার গতিরোধ করে। দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ললোর ওপর আক্রমণ করে। এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এক পর্যায়ে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। আশপাশের লোকজন টের পেয়ে তাকে উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাতেই তাকে নেয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
নিহতের ভাই আজমাই হোসেন ওই সময় অভিযোগ করে বলেছিলেন, সাবেক ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমান ও তার পক্ষের লোকজনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। এর জের ধরে ললোকে হত্যা করা হয়েছে।