গাংনী প্রতিনিধি: মুজিবনগরের মহাজনপুর মাঠ থেকে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত মরদেহে পরিচয় মিলেছে। তিনি গাংনী উপজেলার বালিয়াঘাট গ্রামের আজিত হালদারের মেয়ে। বামন্দী-নিশিপুর স্বামীর বাড়ি থেকে চারদিন আগে তিনি নিখোঁজ হন। সাবেক স্বামী আহসানের সাথে তিন দিন থাকার পর মরদেহ উদ্ধার হওয়ায় হত্যাকা-ের সন্দেহের তীর দ্বিতীয় স্বামীর দিকেই।
জানা গেছে, সোমবার বিকেলে মহাজনপুর গ্রামের মাঠ থেকে এক অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের সময় মরদেহ বিবস্ত্র অবস্থায় ছিলো। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিলো আর গলায় যে চিহ্ন ছিলো তা ফাঁস দিয়ে হত্যাকা-ের ইঙ্গিত দেয়। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে পরিচয় শনাক্তে মাঠে নামে।
এদিকে বুলুয়ারা খাতুন বাড়ি থেকে বের হওয়ার তিনদিন অতিবাহিত হওয়ায় পরিবারের লোকজনও ছিলেন দুশ্চিন্তায়। বিভিন্ন মিডিয়ায় অজ্ঞাত মরদেহের ছবি দেখে তাদের মনে সন্দেহ জাগে। স্বজন হারানোর কষ্ট বুকে নিয়ে বুলুয়ারাকে খুঁজতে বাড়ি থেকে মুজিবনগর থানার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তার বোনেরা। এক পর্যায়ে গেলো রাতে তারা মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হন।
মুজিবনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, অজ্ঞাত মরদেহ ময়নাতদন্ত করানোর জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফনের প্রক্রিয়ার চলার সময় পরিচয় শনাক্ত হয়। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মুজিবনগর থানায় মামলা দায়ের প্রক্রিয়া চলমান।
নিহত বুলুয়ারার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বালিয়াঘাট গ্রামের আজিত হালদারের মেয়ে বুলুয়ারার বিয়ে হয় প্রতিবেশী গ্রাম নিশিপুরের রফিকুল ইসলামের সাথে। এপক্ষে তাদের এক মেয়ে রয়েছে। বছর চারেক আগে রফিকুল মারা গেলে মেয়েকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করছিলেন বুলুয়ারা। এর মধ্যে মোবাইল ফোনে প্রেম পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের আহসান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ধরে বুলুয়ারা ও আসহান দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বছর তিনেক আগে তাদের বিয়ে হলেও কিছুদিন পর বিচ্ছেদ ঘটে। দাম্পত্য জীবনের বাইরে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই আবারও পরকীয়া সম্পর্কে আসক্ত এমন অভিযোগ উভয় উভয়ের বিপক্ষে করতে থাকেন। আর এতেই বিচ্ছেদ হয়।
এদিকে আহসানের সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পর বুলুয়ারা তার মেয়েকে নিয়ে নিশিপুর গ্রামে প্রয়াত স্বামীর বাড়িতেই ছিলেন। এর মধ্যে আবারও আহসানের সাথে তার যোগাযোগ হয়। মোবাইলে নিয়মিত কথা হয় তাদের। বিষয়টি বুলুয়ারার পরিবারের সকলেই জানতেন। আহসান আবার বিয়ের প্রস্তাব দিলে বুলুয়ারার বোনেরা আপত্তি তোলেন। তবে রাজি ছিলেন বুলুয়ারা। আহসানের সাথে দ্বিতীয়বারের মতো সংসার করার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন বুলুয়ারা। বুলুয়ারার বোন রাশিদা খাতুনের বিয়ে হয়েছে গাংনী উপজেলার চরগোয়ালগ্রামে। ঘটনার সবই জানতেন রাশিদা। রাশিদা খাতুন এ হত্যাকো-ের পেছনে আহসানকেই দায়ী করেছেন।
এ বিষয়ে রাশিদা খাতুন জানান, চারদিন আগে বাড়ি থেকে বের হয় বুলুয়ারা। অনেক খোঁজ করার পর রোবববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বুলুয়ারার মোবাইলে কল যায়। কল রিসিভ করে বুলুয়ারা জানায়, সে কুষ্টিয়া আছে আহসানের সাথে। কুষ্টিয়ায় কিছু কাজ সেরে তারা বাড়ি ফিরবে এবং আহসানের সাথে বিয়ে করবে বলে তার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। তবে আহসানের সাথে অবস্থানের বিষয়টি আরও পরিস্কার করেছে নিহতের মেয়ে সামিয়া খাতুন। সামিয়া জানায়, ১৮ ফেব্রুয়ারি তার সাথে মায়ের সর্বশেষ কথা হয়। মাদরাসায় তাকে খাবার দিয়ে পিতার উদ্দেশ্যে (আহসানের) যাচ্ছি বলে মেয়েকে জানায় বুলুয়ারা। এরপর থেকে তার সাথে আর মায়ের কথা হয়নি। খুনের পেছনে সরাসারি আহসানকে দায়ী করেছে নিহতের এই মেয়ে।
রাশিদা খাতুন জানান, আহসান অনেক মহিলায় আসক্ত। তার ঘরে স্ত্রী থাকা সত্বেও বুলুয়ারার সাথে পরকীয়া করে আসছে। পরিবারের চাপের কারণে তাদের সম্পর্ক গোপন থাকলেও এখন তা প্রকাশ্য। সংসার করার স্বপ্ন দেখিয়ে বুলুয়ারাকে খুন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রাশিদা ও তার পরিবারের লোকজনের অভিযোগের বিষয়টি আমলে নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদি রাসেল বলেন, নিহতের ভাই আব্দুল হামিদ বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের কথা বলা হয়েছে। আহসানের বিষয়টি তারা মামলায় বলেননি। তবে মামলা তদন্তে খুনের সাথে কারা জাড়িত আর কেন খুন করা হয়েছে তা বেরিয়ে আসবে বলে জানান ওসি।