সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অর্পিত দায়িত্ব পালনে পিছপা হবো না
কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন
স্টাফ রিপোর্টার: নব-নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অর্পিত দায়িত্ব পালনে পিছপা হবো না। আর মাত্র ১০ মাস পর নির্বাচন। এই মুহূর্তে আমার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে-আমাকে পক্ষপাতিত্বহীন, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে মনোনিবেশ করতে হবে। যা সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করবে। সোমবার কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। নতুন রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে অরাজনৈতিক দাবি তুলে বা সংবিধানের বাইরে দাবি তুলে কিছু করা সম্ভব নয়। আমরা সংবিধানের আলোকে কাজ করতে বাধ্য। আগের সংবিধানের ৫৮ ধারায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ছিলো। সেই বিষয়টি পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল হয়ে যায়। এখন সেটা সংবিধানের অংশ নয়। তাই এখন সংবিধানে যা আছে তার মধ্য থেকে সব দলকে অংশ নিতে হবে। তিনি বলেন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচন অনুষ্ঠানে তার দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনকালে রাষ্ট্রপতির কিছু দায়িত্ব আছে। সেটি হচ্ছে কমিশনকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে যে অন্তরায়, তা দূর করা। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর রাখা। এই দায়িত্ব পালনে আমি পিছপা হব না। নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি তার ছাত্র-জীবনে রাজনীতিতে যুক্ত থাকা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ স্বাধিকার আন্দোলনে নিজের সম্পৃক্ততার দীর্ঘ ইতিহাস সংক্ষেপে তুলে ধরে বলেন, আমি রাজনীতি করেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। কিন্তু বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ যখন আমার ওপর একটি মহান দায়িত্ব অর্পণ করল, আমার এখন প্রথম কাজ হলো জাতীয় বিভেদকে ঐক্যে পরিণত করা। আমার কোনো ঐশ্বরিক শক্তি নেই। আমি মনে করি, সবার সহযোগিতায় দেশের ও মানুষের অগ্রগতির জন্য এটা হতেই হবে।
বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে সবাইকে সহাবস্থানে এনে গণমানুষের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ কীভাবে নেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে, আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি, ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলতে অনেকে শরমবোধ করেন। স্বীকৃত বিষয়গুলোতে যদি কারও অনীহা থাকে, তাহলে ঐক্যবদ্ধ জাতি সম্ভব নয়। কিন্তু প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। যারা একপক্ষকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চায়, যেমন- ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়, জাতির পিতা তার সারাজীবনের সংগ্রামের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছেন, তিনি শুধু নন, তার গোটা পরিবারকে শহিদ করা হয়েছে। এমন নৃশংসতা এ দেশে সম্ভব! এটা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমরা কল্পনা করতে পারিনি। এ ধরনের অভিজ্ঞতা এ জাতির আছে। তখন থেকে আমাদের উচিত ছিল যে, এদের বিচারের অধীনে নিয়ে আসা। বিচার করে আইনের গতিতে দেশ চলতে থাকবে। কিন্তু তা না করে ইনডেমনিটি দিয়ে প্রাইজ পোস্টিং দিয়ে তাদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাহলে কী তারা এই হত্যাকা-ে অংশীদার নয়?
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসতে যাচ্ছি, সে সময়ে এ কথা বলা উচিত হবে না। কিন্তু আমি আমার ‘কনশাসের’ (চেতনা) সঙ্গে তো ‘বিট্রে’ (বিশ্বাসঘাতকতা) করতে পারি না। আমার মুখে সত্য ঘটনা বলতে আপত্তি নেই। ইনডেমনিটি দেয়া, তাদের রক্ষার চেষ্টা করা কখনো সভ্য দেশে গ্রহণীয় হতে পারে না। আবার এখানেই শেষ নয়, যারা আগস্ট ঘটাল, তারা এবং মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি একসঙ্গে মিলে পাকিস্তানি ভাবধারায় দেশকে নিয়ে গেল। তারা স্বাধীনতাকে মানতে পারল না। তাই এই মানসিকতা যেখানে আছে, সে দেশে এটা (ঐক্য) হবে না। তবে এর জন্য সব উদ্যম আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে যে সহিংসতা হয়েছে সেটাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় দৃষ্টান্ত। আমি ওই কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলাম। আমি রিপোর্ট দিয়েছি। আমার গা শিউরে ওঠে। বঙ্গবন্ধুকন্যা ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেতার পর তিনি প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু আ.লীগ কোনো মিছিল করেনি। হাতিয়ার তুলে নেয়া দূরের কথা, বিজয় মিছিল নিষিদ্ধ করে দেন। তাদের বেহেশতে রেখেছিলেন। যেসব অপরাধী এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন তারা তো স্বর্গে। তিনি প্রতিশোধের রাজনীতি করেননি। এটা এ কারণে যে, তাদের মধ্যে অনুশোচনা হোক।