বাজারে যখন খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে, তখন এ নিত্যপণ্যের দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়িয়ে ১০৭ টাকা নির্ধারণ করার বিষয়টি হাস্যকর। এ নিয়ে দুই মাসে দ্বিতীয়বার চিনির দাম বাড়ালো বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরএ)। গত নভেম্বরে খোলা চিনির দাম বাড়িয়ে ১০২ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ওই দাম কার্যকরের ৫ দিন আগে থেকেই বাজারে তা ১৮ টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ বিএসআরএ নির্ধারিত দামের কোনো তোয়াক্কা করছে না বিক্রেতারা। সেক্ষেত্রে এবার দাম বাড়িয়ে ১০৭ টাকা নির্ধারণের পর কী দামে খোলা চিনি বিক্রি করা হবে সেটাই প্রশ্ন। অন্যদিকে প্যাকেটজাত চিনির দাম ১০৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১১২ টাকা। তবে বাজারে প্যাকেটজাত চিনির তীব্র সংকট। রমজানের আগে এভাবে দফায় দফায় চিনির দাম বৃদ্ধিতে ভোক্তারা উদ্বিগ্ন। বস্তুত রমজান সামনে রেখে সব নিত্যপণ্যের দামই বাড়ানো হচ্ছে দফায় দফায়। এর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করা জরুরি।
এটা ঠিক, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ডলার ও জ্বালানি সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনিসহ সব পণ্যের দামই বেড়েছে। তবে আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক বাজারের এ মূল্যবৃদ্ধিকে বরাবরই সুযোগ হিসাবে নেয় একশ্রেণির ব্যবসায়ী। চিনির কথাই ধরা যাক। ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে চিনির দাম আমাদের তুলনায় এখনো অনেক কম। আমাদের দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা এতোটাই মুনাফালোভী যে তারা সংশ্লিষ্ট সমিতির নির্ধারণ করে দেয়া দামেরও কোনো ধার ধারে না; ক্রেতাদের কাছ থেকে দাম নেয় খেয়াল খুশিমতো। অথবা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। প্রশ্ন হলো, এসব কি দেখার কেউ নেই? সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এসব বিষয় খতিয়ে দেখা উচিত। এমনিতেই সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে নিম্নআয়ের মানুষ দিশেহারা, তার ওপর বাজারে কারসাজি চলতে থাকলে এই শ্রেণির মানুষ বাঁচবে কীভাবে?
দেশে বেশ কয়েকটি চিনিকল রয়েছে। এগুলো সচল থাকলে চিনির ওপর আমাদের আমদানি নির্ভর হয়ে থাকতে হতো না। সেক্ষেত্রে বাজারে চিনির সংকট সৃষ্টি হতো না, দামও থাকত সহনীয় পর্যায়ে। কিন্তু দুর্নীতি ও অব্যবস্থার কারণে দেশের চিনিকলগুলো পরিণত হয়েছে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে। ফলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে অনেক চিনিকলে। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এসব কারখানা সংস্কার করে চিনিতে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। আমাদের চিনি শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার বিকল্প নেই।