স্টাফ রিপোর্টার: অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে চুয়াডাঙ্গা শহরের হকপাড়ার সেলিনা ও বঙ্গজপাড়ার রাশিদা খাতুন রাশীর বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে সদর থানা পুলিশ। এ সময় অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে ৬ নারী ও ৫ পুরুষকে আটক করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারক তাদের প্রত্যেককে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মাহাব্বুর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযান চালালো হয়।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবত সেলিনা ও রাশী বিভিন্ন বয়সের মেয়ে নিয়ে দেহব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলো। মাঝেমধ্যেই প্রশাসনের হাতে ধরা পড়লেও কদিন পর জামিনে বের হয়ে আবারো এই পেশায় ফিরে আসে। গতকাল বিকেলে শহরের হকপাড়ার সেলিনার বাড়িতে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় পতিতা, খদ্দের ও সেলিনাসহ ৪ জনকে আটক করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ৪ জনকেই তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেন।
অপরদিকে, গতকাল সন্ধার পর শহরতলির দৌলাতদিয়াড়-বঙ্গজপাড়া সংলগ্ন মাঠে বসবাসরত রাশীর বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় রাশীসহ ৭জনকে আটক করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক প্রত্যেককে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূইয়া।
সাজাপ্রাপ্ত ১১ জন হলেন, চুয়াডাঙ্গা হকপাড়ার মৃত ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে ইকবাল হোসেন (৪৭), ইকবাল হোসেনের স্ত্রী সেলিনা খাতুন (৪৫), সদর উপজেলার ভালাইপুর গ্রামের আব্দুল হান্নানের মেয়ে ববিতা খাতুন (৩০), নড়াইল জেলার লোহাগড়ার জাকির শেখের স্ত্রী শাকিলা খাতুন (৩০), মেহেরপুর জেলার গহেরপুরের আনারুলের ছেলে শামীম (২৫), একই এলাকার শ্রী সুকুমার দাসের ছেলে শ্রী রতন দাস (২২), মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে সোহাগ (২৫), গাংনী উপজেলার হাড়িয়ারঘোপ গ্রামের শামীমুজ্জামানের স্ত্রী ফাহিমা (৪৫), চুয়াডাঙ্গার দৌলাতদিয়াড় বঙ্গজপাড়া সংলগ্ন মাঠপাড়ার রবিউলের স্ত্রী রাশিদা খাতুন রাশী (৪০), দামুড়হুদা ইব্রাহিমপুরের নাজমুলের স্ত্রী তাসলিমা (২০), মেহেরপুর বারাদী বাজারের মৃত ঠা-ুর ছেলে শিপন (২৩)।
ভ্রাম্যমাণ আদালতসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূইয়া ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাব্বুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের হকপাড়ায় অভিযান চালান। অভিযানকালে অনৈতিক কার্যকলাপ ঘটানোর সময় আটক করা হয় একই এলাকার ইকবাল হোসেন ও তার স্ত্রী সেলিনা খাতুন, ভালাইপুর গ্রামের ববিতা খাতুন এবং নড়াইল জেলার লোহাগড়ার জাকির শেখের স্ত্রী শাকিলা খাতুনকে। সেখানেই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দ-বিধির ১৮৬০ সালের ২৯১ ধারায় চারজনকে তিন মাস করে কারাদ- প্রদান করেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূইয়া। পরে একই টিম অভিযান চালায় শহরতলির দৌলাতদিয়াড়-বঙ্গজপাড়া সংলগ্ন মাঠপাড়ায়। এ সময় অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে গণ উপদ্রব সৃষ্টির অভিযোগে আটক করা হয় মেহেরপুর জেলার গহেরপুরের শামীম, একই এলাকার শ্রী রতন দাস, সোহাগ, মেহেরপুর গাংনী উপজেলার হাড়িয়ারঘোপ গ্রামের ফাহিমা খাতুন, চুয়াডাঙ্গার দৌলাতদিয়াড় বঙ্গজপাড়ার রাশী, দামুড়হুদা ইব্রাহিমপুরের তাসলিমা এবং মেহেরপুর বারাদী বাজারের শিপনকে। সেখানেই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আটককৃত সাতজনকে দ-বিধির ১৮৬০ সালের ২৯১ ধারায় তিন মাস করে কারাদ- প্রদান করেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূইয়া। গতকালই সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাব্বুর রহমান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত রাশী নিজের বাড়িতে দেহব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন।
গতকাল দুই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মূল দুই হোতাসহ ১১ জনকে আটক করা হয়। আর আগেও সেলিনাকে একাধিকবার আটক করা হয়েছিলো।
ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচারক সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শামীম ভূইয়া দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, দুটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নারীসহ ১১জনকে আটক করে পুলিশ। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে প্রত্যেককে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে ওসি মাহাব্বুর রহমানের এমন অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছে এলাকার সচেতনমহল। তারা ওসির এমন উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
অভিযানে সহযোগিতা করেন সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাইদ, এসআই কৃপাসিন্ধু মৃধা, এসআই মাসুম বেল্লা, এসআই মেফাউল হাসান, রইস উদ্দিন, এসআই হাসানুজ্জামান।