মেহেরপুরে তুলার বাম্পার ফলন : দাম বাড়ায় খুশি চাষি
চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে মাঠপর্যায়ে মাঠ দিবসসহ প্রশিক্ষণ
মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর জেলায় এ বছর তুলার বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা। দাম নিয়ে চাষিদের মধ্যে শঙ্কা থাকলেও বর্তমান বাজার দরে খুশি হয়েছে চাষিরা। ফলে এবার তুলা চাষে লাভবান হবে বলে মনে করছে তারা। ইতোমধ্যে জমি থেকে তুলা ছাড়াতে শুরু করেছে তারা। আবহাওয়া ভালো থাকায় এ বছর তুলা গাছে ভালো গুটি ধরেছে। ফলে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রত্যয় চাষিদের।
মেহেরপুর তুলা উন্নয়ন বোর্ডসূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলায় চুয়াডাঙ্গা জোনের আওতায় সদর ও কুষ্টিয়া জোনের আওতায় গাংনী উপজেলায় তুলা চাষ হয়ে থাকে। সেই হিসেবে সদর উপজেলায় এক হাজার ৯০০ হেক্টর ও গাংনী উপজেলায় ২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে মোট জেলায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে তুলার চাষ হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে তুলার বাজার দর অস্থিতিশীল থাকার চাষিদের মাঝে তুলা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলো। পরবর্তীতে গতবছর থেকে তুলার বাজার স্থিতিশীল হওয়ায় চাষিদের মাঝে আবারও আগ্রহ ফিরে আসে তুলা চাষে। ফলে এ বছর জেলায় তুলা চাষ বেড়েছে। গত বছর জেলায় তুলার আবাদ ছিলো ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এবার হয়েছে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে যা গত বছরের তুলনায় ৪০০ হেক্টর বেশি। তুলা চাষ বৃদ্ধি পাওয়ার মূল কারণ মূল্য বৃদ্ধি।
২০২০ সালে মণ প্রতি তুলার দাম ছিলো ২ হাজার ৮০০ টাকা। ২০২১ সালে তা বেড়ে যায় মণ প্রতি ৩ হাজার ৬০০ টাকা। এ বছর তুলার দাম আরও বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে মণ প্রতি ৩ হাজার ৮০০ টাকায়।
চাষিরা জানায়, এবার বিঘা প্রতি তুলা চাষে খরচ হয়েছে ১৫-১৬ হাজার টাকা। আবহাওয়া ভালো থাকায় বিঘাপ্রতি ১৮-২০ মণ ফলনের আশা তাদের। বর্তমান বাজার দরে এই তুলা বিক্রি করে ৭০-৭৫ হাজার টাকা ঘরে তুলবে এমনটাই ধারনা করছে তুলা চাষিরা।
গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিটের ইউনিট অফিসার এরশাদুল হক জানান, চাষিদের মাঝে তুলা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে মাঠপর্যায়ে চাষিদের নিয়ে মাঠ দিবসসহ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তুলার রোগবালাই প্রতিরোধে চাষিদের পাশে থেকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কুষ্টিয়া জোনের তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, তুলা বীজের গায়ে লেগে থাকা ফাঁজ ডাক্তারি কাজে ব্যবহার করা হয়। তুলা গাছ জ্বালানির একটি ভালো উৎস। তুলা গাছের পাতা মাটিতে পড়ে মাটিকে জৈব সারের যোগান দেয়। এছাড়া মাটির উপরিভাগের সার তুলা গাছ ব্যবহার করে না। বিধায় তুলা ফসলের পরের ফসলে তেমন সার প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া সারি থেকে সারি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্বের হিসেবে তুলা চাষে সম্পূর্ণ জমি ব্যবহৃতও হয় না।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান সম্প্রতি জেলার তুলা মাঠ পরিদর্শনে এসে বলেন, তুলা ফসলের উৎপাদনকাল ৫ থেকে ৬ মাস। তাই একক ফসল হিসেবে তুলা চাষ বর্তমানে যথেষ্ট লাভজনক। তবে তুলা ফসল ওঠার পর অঞ্চল ভেদে আর একটি ফসল যেমন গ্রীষ্মকালীন মুগ, তিল, পাট, বীজের জন্য বাদাম ইত্যাদি চাষ করা সম্ভব। আবার তুলা ফসলের সাথে সাথী ফসল চাষের সুযোগও আছে। সাথী ফসলের আয় থেকে তুলা চাষের উৎপাদন খরচের অনেকটাই পূরণ হয়ে থাকে। তুলা বীজ থেকে ১৫ থেকে ২০ ভাগ উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ তেল পাওয়া যায় যা সয়াবিন তেলের চেয়েও পুষ্টিকর। বর্তমানে ভোজ্য তেলের সমস্যায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া তুলা বীজের খৈলে রয়েছে ২৪ শতাংশ প্রোটিন, আর ২০ শতাংশ ফ্যাট, যা গবাদিপশু ও মৎস্য খাদ্যের জন্য উৎকৃষ্ট। বিধায় অর্থকরী ফসল হিসেবে তুলা চাষ করে চাষিরা বিভিন্নভাবে লাভবান হচ্ছে।