জীবননগর গয়েশপুরের তারিক হত্যায় মামলা : একজন গ্রেফতার

সালাউদ্দীন কাজল: জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের বড় পুকুর পাড়ার রবিউল ইসলাম ওরফে রবগুল হোসেনের ছেলে তারিক হোসেনকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। ওই সূত্রের মতে, হত্যাকারিরা বেশ কিছুদিন আগেই তারিক হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরিকল্পনা মোতাবেক সোমবার দিনগত রাতে তারিক হোসেনকে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলার গয়েশপুর সীমান্তের বিপরীতে ভারতীয় অংশের দুয়াল মাঠের ভুট্টা ক্ষেতের ভেতর। ওখানে ধারালো হাসুয়া দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে তারিক হোসেনকে হত্যা করা হয়। হত্যাকা-ে সরাসরি অংশগ্রহণ করে ৭ জন (গ্রেফতার এবং তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নাম গোপন রাখা হলো)। হত্যাকা-ের ঘটনায় পরোক্ষভাবে অংশ নেয় আরও ৭-৮ জন। হত্যাকা-ে সরাসরি অংশ নেয়া ৭ জন এবং পরোক্ষভাবে অংশ নেয়া ৭-৮ জন সবাই এলাকার চিহ্নিত স্বর্ণ এবং মাদক চোরাকারবারি। এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে নিহত তারিক হোসেনের স্ত্রী জেসমিন খাতুন বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে জীবননগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। অপরদিকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আতিয়ার রহমান মালিথা ওরফে আতি নামে এজাহার নামীয় এক আসামিকে গ্রেফতার করেছেন। নিহত তারিক হোসেনের স্ত্রী জেসমিন খাতুন তার স্বামীর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। নির্ভরযোগ্য ওই সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি বিজিবি সদস্যরা জীবননগর সীমান্ত এলাকা থেকে ২৮ বোতল ফেনসিডিলসহ গয়েশপুর গ্রামের আনার হোসেনকে আটক করে। পরবর্তীতে ফেনসিডিলসহ আনার হোসেনকে জীবননগর থানায় সোপর্দ করে বিজিবি। আটককৃত আনার হোসেনের সহযোগীদের ধারণা তারিক হোসেনই তথ্য দিয়ে আনারকে বিজিবির হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। এ কারণে তারিক হোসেনের প্রতি আনারের লোকজন চরমভাবে ক্ষুব্ধ হন। এছাড়া দুটি স্বর্ণ চোরাচালান মামলার সাক্ষি ছিলো তারিক হোসেন। ওই স্বর্ণ চোরাচালান মামলার আসামিরাও তারিক হোসেনের প্রতি চরমভাবে ক্ষুব্ধ। সূত্র মতে, মাদক মামলার আসামি আনার হোসেনের সহযোগীরা এবং দুটি স্বর্ণ চোরাচালান মামলার আসামিরা যৌথভাবে তারিক হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে দুই সপ্তাহ আগে। পূর্বপরিকল্পনা মাফিক সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় গয়েশপুর গ্রামের মাহম্মদ আলীর ছেলে আতিয়ার রহমান মালিথা ওরফে আতি (৪২) কৌশলে তারিক হোসেনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর গয়েশপুর সীমান্তের ৬৮নং মেইন পিলার এবং ৬নং সাব পিলারের কাছে দোয়াল মাঠের একটি ভুট্টা ক্ষেতের মধ্যে তারিক হোসেনকে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই ওৎ পেতে থাকা আতিয়ার রহমান মালিথার ৬ জন সহযোগী (মামলার স্বার্থে নামগুলো প্রকাশ করা হলো না) তারিক হোসেনকে দেখামাত্র পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ধারালো হাসুয়া দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এ সময় তারিক হোসেনের চিৎকারে ওই এলাকায় অবস্থান নেয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সোর্স ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় তারিক হোসেনকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তারিক হোসেনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে তারিক হোসেন তার হত্যাকারীদের নাম স্ত্রী জেসমিন খাতুনসহ হাসপাতালে উপস্থিত অনেকের সামনেই স্বীকারোক্তি দিয়ে গেছেন। নিহত তারিক হোসেনের স্ত্রী জেসমিন খাতুন জানান, প্রায় ১৫ দিন আগে থেকেই হত্যাকারিরা বিভিন্নভাবে তার স্বামীকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলো। এক পর্যায়ে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক সোমবার রাতে তার স্বামীকে হত্যা করে ওই চক্র। তিনি তার স্বামীর হত্যাকারিদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। আসামি গ্রেফতার তারিক হোসেন হত্যা মামলায় জীবননগর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহার নামীয় একজন আসামিকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের পাশ থেকে এজাহার নামীয় ৪নং আসামি গয়েশপুর গ্রামের মাহম্মদ আলীর ছেলে আতিয়ার রহমান মালিথা ওরফে আতিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আসামিকে আজ বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা আদালতে সোপর্দ করা হবে। জীবননগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল খালেক জানান, তারিক হোসেন হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More