ড্রাইভার জমিরের সাজাকে ‘সোশাল ক্রসফায়ার’ বললেন চুয়াডাঙ্গার বক্তারা
তারেক মাসুদ ও মিশুক মনির নিহত হওয়ার ঘটনা আবার আলোচনায়
স্টাফ রিপোর্টার: তারেক মাসুদ ও মিশুক মনির নিহত হওয়ার ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের চালকের সাজাকে সোশাল ক্রসফায়ার হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চুয়াডাঙ্গা কর্তৃক আয়োজিত আলোচনাসভায় বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। এ সংক্রান্ত একটি ডকুমেন্টারি ফিল্মও প্রদর্শন করা হয় এ সময়। চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের চালক প্রয়াত জামির হোসেনের মেয়ে আলোচনাসভায় তার পিতাকে নির্দোষ দাবি করেন। শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস মিনিবাস মালিক গ্রুপের সভাপতি হাজি আবুল কালামের সভাপতিত্বে শনিবার বেলা ১১টায় আলোচনা শুরু হয়। আলোচনাসভার শুরুতেই ‘সোশাল ক্রসফায়ার’ শিরোনামের একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম দেখানো হয় সাংবাদিকদের। তাতে চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মনিরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনার জন্য কে কতটুকু দায়ী তা দেখানো হয়। ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওরে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহন ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসের যাত্রী তারেক মাসুদ ও মিশুক মনিরসহ পাঁচজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। পরে ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ওই মামলায় মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত চালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন। পরবর্তীতে কারাগারে থাকা অবস্থায় স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে চালক জামির হোসেন ২০২০ সালের ১ আগস্ট মারা যান। জামির হোসেনের বাড়ি ছিলো চুয়াডাঙ্গা শহরতলির দৌলাতদিয়াড় গ্রামে।
শনিবার চুয়াডাঙ্গায় আয়োজিত আলোচনাসভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এম জেনারেল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জেনেছি চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মনির যে মাইক্রোবাসে ছিলেন তার চালকের পরিবর্তে মাইক্রোবাসে ছিলেন চালকের ছোট ভাই। অবশ্য দুর্ঘটনার সময় মাইক্রোবাসটি চালাচ্ছিলেন তারেক মাসুদ। কিন্তু আমরা এসব বিষয় বারবার অভিযোগ করার পরও রায়ের আগে এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত হয়নি।’ দুর্ঘটনা কবলিত চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের অন্যতম স্বত্বাধিকারী মুজিবুল হক বলেন, ‘এ দুর্ঘটনায় আদালত কয়েকটি পক্ষকে প্রায় ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। আমিও একটি পক্ষ। আমার ওপরেও এর কয়েক কোটি টাকা বর্তায়। আমার পক্ষে এত টাকা দেয়ার সক্ষমতা নেই। তাই ক্ষতিপূরণ না দেয়ার অপরাধে হয়তো আমাকেও কারাগারে কাটাতে হবে।’ চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের প্রয়াত চালকের একমাত্র সন্তান আরিফা খানম বক্তৃতা দেয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন ‘আমার পিতা সম্পূর্ণ নির্দোষ ছিলেন। কিন্তু আমরা তা আদালতকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমি একজনের ঘরের স্ত্রী। গৃহিণী হিসেবে ঘর গৃহস্থালির কাজ নিয়েই থাকি। এরই মধ্যে আমার মা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। তার চিকিৎসার খরচই জোগাড় করতে পারছি না। কিন্তু এরই মধ্যে তারেক মাসুদ ও মিশুক মনির নিহত হওয়ার ঘটনায় আদালত ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের জন্য ওয়ারেশ হিসেবে আমাদেরও সম্পৃক্ত করেছে। আমরা এখন কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’ এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস মিনিবাস সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি একেএম মঈন উদ্দিন, জেলা ট্রাক ট্রাক্টর কাভারভ্যান ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আরিফ শেখ, জেলা আন্তঃজেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিনের সাধারণ সম্পাদক মামুন অর রশিদ প্রমুখ। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মনিরুজ্জামান ও চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএ পরিদর্শক আবু জামাল।