৭ বছরের মাথায় অভূতপূর্ব সাফল্য : এক বছরেই লাভ ১৩ লাখ টাকা
দুই বিঘা জমি আর ৫০ হাজার টাকায় খামার গড়ে স্বাবলম্বী চুয়াডাঙ্গার যুবক সোহান
ইসলাম রকিব: লেখাপড়া শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে সমন্বিত খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন চুয়াডাঙ্গার যুবক হাফেজ আব্দুল কাদির সোহান। মাত্র ৫০ হাজার টাকা এবং পিতার দেয়া দুই বিঘা জমি সম্বল করে শুরু করেন তার সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা। প্রথম বছর লাভ না হলেও দ্বিতীয় বছর থেকে লাভের মুখ দেখা শুরু করেন চুয়াডাঙ্গার উদীয়মান তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুল কাদির সোহান। ২০১৫ সালের গোড়ার দিকে তিনি খামার গড়ে তোলার কাজ শুরু করলেও মাত্র ৭ বছরের মাথায় তার অভূতপূর্ব সাফল্য এবং স্বাবলম্বিতা দেখে অনেক যুবক এ ধরনের খামার গড়ে তুলতে আগ্রহী হচ্ছেন। বেশ কিছু যুবকও এখন শুরু করেছেন সোহানের মত সমন্বিত খামার তৈরির কাজ।
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হাফেজ আব্দুল কাদির সোহান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আমি চুয়াডাঙ্গার একটি মাদরাসা থেকে ২০০৮ সালে অষ্টম শ্রেণি পাসের পর আমার বাবার সাথে মাঠে যায়। মাঠের চমৎকার ফল ফসলের বাগান আমাকে রুগ্ধ করে। আমি সেদিনই বাবাকে বলেছিলাম বাবা আমি একটি খামার করতে চাই। কিন্তু বাবা সেদিন আমাকে বারণ করে বলেছিলেন আগে লেখাপড়া শেষ করো তারপর অন্য কাজ। সেদিন কিছুটা আশাহত হলেও আমি এসএসসি পাস করে কৃষির ওপরে ডিপ্লোমা শুরু করি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার এমএস জোহা ডিগ্রি কলেজে। ২০১৫ সালে কৃষি ডিপ্লোমা শেষে করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে বিএজিএড ডিগ্রি অর্জন করি। বাবার ইচ্ছে ছিল আমি ভালো কোন স্কুল বা কলেজে চাকরি করি। কিন্তু আমি তা না করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য বাবার কাছ থেকে দুই বিঘা জমি এবং ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আমি সমন্বিত খামার গড়ে তোলার কাজ শুরু করি। প্রথম বছর ২ বিঘা জমি তে বারোমাসি কাটিমন আম থাইসিডলেস লেবু এবং থাই পেয়ারা দিয়ে শুরু করি । প্রথম বছর লাভের মুখ দেখতে না পারলেও দ্বিতীয় বছর কিছু বর্ধিত জমি লিজ নিয়ে তা থেকে আমি কিছু লাভ করতে সমর্থ হই। এর কিছুদিন পর ৩০ বিঘা অর্থাৎ ১০ একর জমি নিয়ে নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করি। বর্তমানে আমার খামারে রয়েছে বারোমাসি কাটিমন আম, ডকমাই আম, বারিফোর আম, কিউ যাই, পালমার ব্যানানা, সূর্য ডিম, আলফানচু, চাকাপাতা, ব্রুনাইটিং, গৌরমতী,আর টু ই টু জাতের আম, চাইনিজ কমলা, দার্জিলিং কমলা,বারি মালটা-১, ২, ভিয়েতনামি বারোমাসি মালটা, ফিলিপাইনস ব্লাক সুগারক্যান, বিভিন্ন প্রজাতির ফুলসহ সিজনাল শাক-সবজি ও দেশীয় ফুল-ফলের চাষ। এছাড়া ৯ বিঘা জমিতে রয়েছে মৎস্য চাষ। বিগত করোনাকালীন সময়ে আমার ‘মনমিলা গার্ডেন অ্যান্ড নার্সারি’ নামক সমন্বিত খামারের উৎপাদন ও মুনাফার হার কিছুটা কম হলেও বর্তমান ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক বছরের আয়-ব্যয় হিসাব করে আমার লাভের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ লাখ টাকার মতো। আমার খামারে এখন ১০ জন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে এর মধ্যে ৬জন পুরুষ এবং ৪জন নারী। এই ১০ জন মানুষের জন্য আমাকে প্রতি মাসে দেড়লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়। আমার ভালই লাগে, আমার খামার থেকে ১০ জন মানুষের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হচ্ছে এটি কম কিসে। আমার জীবনেও এসেছে সাফল্য স্বচ্ছলতা। আমি আমার বাবা-মা, স্ত্রী ও দু-কন্যা সন্তান নিয়ে স্বাবলম্বী ও স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছি।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা চুয়াডাঙ্গার হাফেজ আব্দুল কাদির সোহান লেখাপড়া শেষ করে ‘মনমিলা গার্ডেন অ্যান্ড নার্সারি’ নামক সমন্বিত খামার গড়ে তুলে নিজে যেমন আত্মকর্মসংস্থান করে স্বাবলম্বী হয়েছেন, তেমনি বেশ কিছু নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। আমার অফিস থেকেও তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। তার একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে। সে গ্রুপের মাধ্যমে সে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ফল, ফুলের চারা নিয়ে এসে যেমন চাষ করছে। তেমনি তার খামার থেকে উৎপাদিত চারা বিক্রয় করে সফলতা অর্জন করছেন। সে এলাকার বেকার যুবকদের আইডল হিসেবে কাজ করছে। আমি ভবিষ্যত-এ আরো তার সফলতা কামনা করি।