স্টাফ রিপোর্টার: সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নিধারণ নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্কে জড়াবে না কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ছোটখাটো পরিবর্তন ছাড়া বড় পরিবর্তনও চায় না কমিশন। কেননা, সীমানাবিন্যাসের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন করতে গেলে বিতর্ক ও সমালোচনায় পড়তে পারে ইসি। এজন্য জনসংখ্যাকে আমলে নেয়ার চেয়ে আঞ্চলিক অখ-তার দিকে নজর ইসির। জনসংখ্যাকে গুরুত্ব দিলে গ্রামের চেয়ে শহরে আসন বেড়ে যাবে। এতে করে সারা দেশে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সীমানা পুর্নর্নিধারণ-সংক্রান্ত কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, সংসদীয় আসনের সীমানা বণ্টনের ক্ষেত্রে বিতর্কমুক্ত থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। যদিও এখনো সীমানাবিন্যাসের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে জনশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর কাজ শুরু করা হবে।
সংসদীয় আসনের সীমানায় সর্বশেষ বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছিলো ২০০৮ সালে। তখন সারা দেশের ১৩৩টি আসনের সীমানায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। শুধু ঢাকা জেলাতেই ঐ সময়ে আসন বেড়েছিলো সাতটি। এরপর ২০১৩ ও ২০১৮ সালে জেলার আসনসংখ্যা ঠিক রেখে সামান্য পরিবর্তন আনা হয়। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বড় ধরনের পরিবর্তন করার পক্ষে নয় কমিশন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সীমানা পুনর্নিধারণের জন্য প্রশাসনিক এলাকার তথ্য দিতে ইতিমধ্যে সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের জন্য সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণের গেজেটের পর যেসব প্রশাসনিক এলাকা সৃজন, বিয়োজন ও সংকোচন করা হয়েছে, তার তথ্য প্রয়োজন। এসব তথ্য প্রামাণিক দলিলসহ জরুরি ভিত্তিতে ২০ জুনের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছিল।
এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের যুগ্মসচিব শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, ‘ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলার প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি। ওই সব প্রতিবেদন সমন্বয় করা হচ্ছে। জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমান আইন, ২০২১-এ বলা আছে, সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে উল্লিখিতসংখ্যক সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে পুরো দেশকে উক্তসংখ্যক একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকায় ভাগ করা হবে। এক্ষেত্রে ভৌগোলিক অখ-তা বজায় রাখা এবং আদমশুমারির ভিত্তিতে যত দূর সম্ভব বাস্তবভিত্তিক বণ্টনের কথা বলা হয়েছে। আইনের ৮ নম্বর ধারায় একটি উপধারা যুক্ত করা হয়। সেখানে বলা আছে, দৈব-দুর্বিপাকে বা অন্য কোনো কারণে আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণ করা না গেলে বিদ্যমান সীমানার আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কোনো কারণে সীমানা পুনর্নিধারণ করা না গেলে বিদ্যমান আইনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া আইনে আদমশুমারির ভিত্তিতে যতো দূর সম্ভব বাস্তবভিত্তিক বণ্টনের কথা বলা হয়েছে। সীমানা বিন্যাসের ক্ষেত্রে জনসংখ্যার আন্তর্জাতিক মানদ- হলো ৫ থেকে ৩০ শতাংশ পার্থক্য। বিগত দুটি কমিশন আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ জনসংখ্যার কম-বেশি পার্থক্য রেখেছিলো। এবারও একই পথ অনুসরণ করবে কমিশন। জনসংখ্যাকে অত্যধিক গুরুত্ব দিলেও আসনবিন্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন হবে, যা সামাল দেয়া কঠিন হবে।
এদিকে, জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হতে আরো সময় লাগতে পারে। ইতোমধ্যে জেলাভিত্তিক জনসংখ্যার হিসাব প্রকাশিত হয়েছে। উপজেলাভিত্তিক জনসংখ্যার হিসাব প্রস্তুত করার কাজ চলছে। মূলত নির্বাচন কমিশনের জেলা-উপজেলাভিত্তিক জনসংখ্যার হিসাব লাগবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন বলেন, জেলাওয়ারি জনসংখ্যার প্রাথমিক হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন চাইলে আমরা উপজেলাভিত্তিক জনসংখ্যার হিসাব দিতে প্রস্তুত রয়েছি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জেলাভিত্তিক আলাদা আলাদা জনসংখ্যা ও আত্মসামাজিক অবস্থার বিস্তারিত তথ্য থাকবে প্রতিবেদনে। এজন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে বছরখানেক সময় লাগতে পারে।