ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ফের বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। গতকাল বুধবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এ সময় শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়েছেন এবং কলেজের অধ্যক্ষর বাসভবনসহ বিভিন্ন ভবনে ভাঙচুর করেছেন। তারা কলেজের প্রধান ফটকের সাইনবোর্ড খুলে আগুন ধরিয়ে দেন। ডিভিএম (ডক্টরস অব ভেটেরিনারি মেডিসিন) ডিগ্রিসহ সাত দফা দাবি আদায়ে টানা ৫৩ দিন আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় ডিভিএম ডিগ্রি দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের নগরবাথান এলাকায় ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। এর আগে মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর। বর্তমানে ছয়টি ব্যাচে ৩৫০ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন। দেশের প্রাণিসম্পদ বিভাগে ভেটেরিনারি ডাক্তার তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হলেও নানা জটিলতায় শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আজও স্বীকৃতি মেলেনি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে অভিভাকহীন হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শিক্ষক ও অর্থ সংকটে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে ডিভিএম (ডক্টরস অব ভেটেরিনারি মেডিসিন) ডিগ্রি দেয়ার কথা থাকলেও আজও সেটি করা হয়নি। যে কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। তবে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও দাবি আদায় করা যায়নি। সর্বশেষ বুধবার বিকেলে ফের আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবোরধ করেন তারা। এ সময় বিভিন্ন স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এর আগে কলেজ ক্যাম্পাসে অধ্যক্ষের বাসভবনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবনে ভাঙচুর করেন তারা। নষ্ট করা হয় প্রশাসনিক ভবনের ফুলের বাগান। প্রধান ফটকের বিশাল সাইন বোর্ড ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় চরম দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন সদর থানার ওসি সোহেল রানা। ওসি বলেন, শিক্ষার্থীরা সাত দফা দাবি আদায়ের জন্য টানা আন্দোলন করে আসছেন। এতদিন আশ্বস্থ করা হয়েছিলো তাদের। শেষ পর্যন্ত দাবি মেনে নেয়নি কর্তৃপক্ষ- এমন অভিযোগে ফের রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। তিনি আরও বলেন, নানাভাবে বুঝিয়ে শান্ত করা হয়েছে তাদের। রাত ৮টার দিকে এক ঘোষণায় আগামী সোমবার পর্যন্ত চলমান আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন শিক্ষার্থীরা। ওসি সোহেল রানা বলেন, ঘটনার সময় কলেজ কর্তৃপক্ষের কাউকে দেখা যায়নি। অধ্যক্ষসহ অন্যরা মোবাইল ফোন বন্ধ করে লুকিয়ে পড়েন।