হিজরি শুভ নববর্ষে সালাম ও শুভেচ্ছা

সম্পাদকীয়

আজ ১ মহররম। হিজরি শুভ নবর্বষ। মহরম ইসলামী পঞ্জিকা হিজরি সনের প্রথম মাস। আজ ১৪৪৩ বিদায় নিয়ে ১৪৪৪ হিজরি সনের যাত্রা শুরু হলো। মুসলিম জীবনে হিজরি সনের গুরুত্ব অপরিসীম। শুভদিনে সকলকে ছালাম ও শুভেচ্ছা।

হিজরি সন এমন একটি সন, যার সাথে মুসলিম উম্মাহর তাহজিব-তামাদ্দুন ও ঐতিহ্যের ভিত্তি সম্পৃক্ত। মুসলমানদের রোজা, হজ, ঈদ, শবেবরাত, শবেকদর, শবে মেরাজসহ ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান হিজরি সনের ওপর নির্ভরশীল। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সময়ে ও তার পূর্বে রোমান, পারসিয়ান ও অন্যান্য জাতির মধ্যে তাদের নিজস্ব ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা প্রচলিত ছিলো। আরবদের মধ্যে কোনো নির্ধারিত বর্ষ গণনা পদ্ধতি ছিলো না। বিভিন্ন ঘটনার ওপর নির্ভর করে তারিখ বলা হতো। খলিফা হজরত উমর ফারুক (রা.) এর শাসনামলে ১৬ হিজরি সনে, প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) ইরাক এবং কুফার গর্ভণর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একদা হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) খলিফা উমরের (রা.) খেদমতে এ মর্মে পত্র লেখেন যে, আপনার পক্ষ থেকে পরামর্শ কিংবা নির্দেশ সংবলিত যেসব চিঠি আমাদের নিকট পৌঁছে তাতে দিন, মাস, কাল, তারিখ ইত্যাদি না থাকায় কোন চিঠি কোনদিনের তা নিরুপণ করা আমাদের জন্য সম্ভব হয় না। এতে করে আমাদের নির্দেশ কার্যকর করতে সমস্যা হয়। অনেক সময় আমরা বিব্রত বোধ করি চিঠির ধারাবাহিকতা না পেয়ে। হজরত আবু মুসা আশআরীর চিঠি পেয়ে হজরত উমর (রা.) এ মর্মে পরামর্শ সভার আহবান করেন যে, এখন থেকে একটি ইসলামি তারিখ প্রবর্তন করতে হবে। এ পরামর্শ সভায় হজরত উসমান (রা.), হজরত আলী (রা.) সহ বিশিষ্ট অনেক সাহাবি উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সকলের পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতে ওই সভায় ওমর (রা.) সিদ্ধান্ত দেন ইসলামি সন প্রবর্তনের। তবে কোন মাস থেকে বর্ষের সূচনা করা হবে তা নিয়ে পরপস্পরের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি হয়। কেউ মত পোষণ করেন রাসূল (সা.) এর জন্মের মাস রবিউল আওয়াল থেকে বর্ষ শুরু করার। আবার কেউ কেউ মত পোষণ করেন রাসূলের ওফাতের মাস থেকে বর্ষ শুরু করা হোক। অন্যান্যের মতে হুজুর (সা.) এর হিজরতের মাস থেকে বর্ষ করা হোক। এভাবে বিভিন্ন মতামত আলোচিত হওয়ার পর হজরত উমর (রা.) বললেন, হুজুর (সা.) এর জন্মের মাস থেকে হিজরি সনের গণনা শুরু করা যাবে না। কারণ খ্রিস্টান সম্প্রদায় হজরত ঈসা (আ.) এর জন্মের মাস থেকেই খ্রিস্টাব্দের গণনা শুরু করেছিলো। তাই রাসলের জন্মের মাস থেকে সূচনা করা হলে বাহ্যত খ্রিস্টানদের অনুসরণ ও সাদৃশ্যতা হয়ে যায়, যা মুসলমানদের জন্য পরিত্যাজ্য। হজরত ওমর (রা.)-এর দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যকে হজরত উসমান (রা.) ও হজরত আলী (রা.) এক বাক্যে সহমত পোষণ করে বললেন, এরই পরিপ্রেক্ষিতে খলিফা হযরত উমর ফারুক (রা.) হিজরতের বছর থেকেই ইসলামি দিনপঞ্জী গণনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় হিজরতের ১৬ বছর পর ১০ জুমাদাল উলা ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দ। মোদ্দা কথা, আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে হিজরি সনের গণনা সূচনা করেন। এটাই ছিলো হিজরি সনের প্রেক্ষাপট।

হিজরি সনের প্রথম মাস হলো মহররম। মহররম একটি তাৎপর্যম-িত ও বরকতময় মাস। মুসলিম ইতিহাসে এ মাসটি বিভিন্ন কারণে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। এ মাসটিকে ‘শাহরুল্লাহ’ তথা আল্লাহর মাস বলা হয়। এ প্রসঙ্গে নবী (সা.) বিদায় হজ্বের সময় মিনা প্রান্তরে প্রদত্ত খোতবায় বলেন, ‘চারটি মাস রয়েছে যেগুলো সম্মানিত মাস। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো মহরম। (বুখারী, হা-১৭১২) আর এ মাসেই রয়েছে ফজিলতপূর্ণ ‘আশুরা’। মহররমের দশম তারিখে ঐতিহাসিক ‘কারবালা’ সংঘটিত হয়েছিলো। এছাড়াও বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এ দিনে ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও এই দিনে আরও অনেক ঘটনা ঘটবে। হিজরি সন গণনার সূচনা হয়েছিলো ঐতিহাসিক এক অবিস্ময়রণীয় ঘটনাকে উপলক্ষ করে। রাসূল (সা.) এবং তার সঙ্গী-সাথীবর্গের মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই আরবি মহরম মাসকে হিজরি সনের প্রথম মাস ধরে সাল গণনা শুরু হয়েছিলো। আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে তথা দ্বীনের স্বার্থে পবিত্র মক্কা থেকে মদিনায় রাসূল (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামগণের হিজরতের বছর থেকেই হিজরি সনের সূচনা। হিজরি সনের সম্পর্ক চাঁদের সাথে থাকার কারণে এ সনের তাৎপর্য ব্যাপক। এ চাঁদের হিসাবে মুসলমানদের অনেক ইবাদত-বন্দেগী, আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়ে থাকে। কাজেই সর্বক্ষেত্রে হিজরি তারিখকে গুরুত্ব দেয়া জরুরি।

আজ আমাদের মাঝে ১৪৪৩ হিজরি বিদায় নিয়ে হিজরি নববর্ষ ১৪৪৪ শুরু। ১ মহররমের মধ্যদিয়ে হিজরি নববর্ষ ১৪৪৪ এর সূচনা। ইসলামে এ দিনটি এক বিশেষ স্মারক। নতুন বছর সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ। শুভ হোক শুভ নববর্ষ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More