স্টাফ রিপোর্টার: সুষ্ঠুভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা যথাযথ কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলো সরব হলে ইসির কাজ করতে অনেক সুবিধা হয়। বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে চলমান রাজনৈতিক সংলাপের দশম দিনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপের সঙ্গে সংলাপে সিইসি এসব কথা বলেন। বুধবার অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একজনের মৃত্যুর ঘটনায় সিইসি বলেন, জয়ী হতে হবে এমন মানসিকতা থেকে বের হতে না পারলে সংকট থেকে যাবে।
বৃহস্পতিবার গণফোরাম, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। এদিন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি তাদের নির্ধারিত সংলাপে অংশ নেয়নি। রোববার আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে ইসি। এর মধ্য দিয়ে মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এবারের সংলাপ শেষ হচ্ছে।
বাংলাদেশ ন্যাপের সঙ্গে সংলাপে সিইসি রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারা (রাজনৈতিক দল) যথাযথ সরব ভূমিকা পালন করতে পারছেন কিনা সেটা নিয়ে আমার একটু সংশয় আছে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক দলগুলো আরও সরব ভূমিকা পালন করবে। তাহলে ইসির জন্য ফিল্ড মসৃণ হয়ে যাবে। রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কেন আমাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। সিস্টেমটা আপনারা ইমপ্রুভ করতে পারলে তো আমাদের কাজই করা লাগে না। এটা নিয়ে দল হিসাবে আপনারা কেন কথা বলেন না। পদ্ধতি পরিবর্তন করে রাজনৈতিক সুস্থতা ফিরিয়ে আনা গেলে সেটা রাজনৈতিক নেতৃত্বের বড় অর্জন হবে। তিনি আরও বলেন, চলমান পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে পারলে শুধু আমরা নয়, ভবিষ্যৎ ইসিকেও পরিশ্রম করতে হবে না। সিইসি বলেন, ‘আপনারা অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেন। আপনারা রাজনীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং পরিবেশ নির্বাচনের অনুকূল করে দিতে পারলে আমাদের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠান অনেক সহজ হবে।’
বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে ইউপির ভোটের ফল ঘোষণার পর পুলিশের গুলিতে এক শিশুর মৃত্যু হয়। শিশুর বাবা-চাচা ও স্থানীয়দের অভিযোগ, দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ গুলি চালালে শিশুটি গুলিবিদ্ধ হয়। বৃহস্পতিবার গণফোরামের সঙ্গে সংলাপে এ বিষয়টি তুলে আনেন সিইসি। তিনি বলেন, নির্বাচন যখন হাড্ডাহাড্ডি হয়, তখন ভোটের শেষে একটা মারামারি হয়। কালকেও (বুধবার) হয়েছে, একটা বাচ্চা মারা গেছে।’ এ ঘটনায় ডিসি-এসপিকে ফোন করে খবর নেয়ার কথা জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমাদের এক সহকর্মী প্রায় বলে থাকেন, আমাদের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা আছে। আমি ইলেকশন করব। কিন্তু আমাকে জিততেই হবে। মানে হারতে যে হতে পারে এটা কেউ মেনে নিচ্ছে না। এ মনস্তাত্ত্বিক একটা দৈন্য আমাদের মধ্যে আছে। যে কারণে এ সহনশীলতা যদি জাগ্রত করা না যায় তাহলে একটা সংকট থেকে যাবে।’
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সঙ্গে সংলাপের একপর্যায়ে একাধিক দিনে ভোটগ্রহণের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা উঠে। এ সময় দুদফায় মাইক বন্ধ রেখে চলে সংলাপ। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী একাধিক দিনে দুই বা তিন দিনে ভোট করার প্রস্তাব দেন এরপর নির্বাচন কমিশনার আলমগীর প্রশ্ন তোলেন, রেজাল্ট কোন দিন ঘোষণা হবে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কই রাখা হবে? এরপরই মাইক ১০ মিনিটের বেশি বন্ধ রেখে সংলাপ চলে। পরে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, উনিই (নজিবুল বশর) মাইক বন্ধ করেছেন। সংলাপ কক্ষের বাইরের স্ক্রিনে সরাসরি প্রচার বেশিদিন চলবে না জানিয়ে সিইসি বলেন, তখন আমরা ব্রিফিং করব। উনারাও ব্রিফিং করবেন।