জীবননগর ব্যুরো: জীবননগরে পাটের ভালো ফলন হলেও পানির অভাবে পাট জাগ দেয়া নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। প্রখর রোদে জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে পাটের আঁশ। এ সময়ে চাহিদামতো বৃষ্টি না হলে পাটের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শ্রাবণ মাসের অর্ধেক হতে চললেও কাক্সিক্ষত বৃষ্টি না হওয়ায় চাষিদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে এলাকার অধিকাংশ খাল-বিল পানিতে ভরপুর থাকার কথা থাকলেও এবছর এখনও শুকনো। কোনো কোনো জলাশয়ে সামান্য পানি থাকলেও পাট পচানোর জন্য তা যথেষ্ট নয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চাষিদের অনেকেই বৃষ্টির আশায় পাট কেটে জমির পাশে, কেউবা রাস্তার পাশে, খাল-বিল বা ডোবার পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। কেউ কেউ পানির অভাবে জমিতে খড় ও আবর্জনা দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। এদের মধ্যে অনেকে আবার খাল-বিল ও জলাশয়ের সামান্য পানিতেই পাটের ওপর মাটি ও ভারী কিছু দিয়ে পচানোর চেষ্টা করছেন।
ডোবা কিংবা জলাশয়ে পাট জাগ দিতে কেউ কেউ শ্যালোইঞ্জিন দিয়ে পানি দিচ্ছেন। আবার কেউ গাড়িতে দূরে কোনো জলাশয়ে নিয়ে জাগ দেয়ার চেষ্টা করছেন।
জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মরসুমে জীবননগর উপজেলায় ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। কিন্তু সেখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেড়ে ১ হাজার ৭৯৭ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছেন কৃষকরা। গত বছর দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবার পাট চাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন।
জীবননগর উপজেলার দেহাটী গ্রামের পাট চাষি লিয়াকত মিয়া জানান, বর্তমানে পানির অভাবে পাট জাগ দিতে সমস্যা হচ্ছে। মাঠ থেকে দূরে থাকা জলাশয়ে পাট নিয়ে জাগ দিতে হচ্ছে। এতে শ্রমিক ও পরিবহনের অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে পাটচাষে খরচ প্রায় ১৩ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় গড় ফলন ১০ মণ। প্রতি মণ পাটের বর্তমান বাজার দর ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা। এ দামে পাট বিক্রি করলে লাভ হবে।
মনোহরপুর গ্রামের আকিমুল ইসলাম জানান, বর্ষা মরসুমে প্রকৃতিতে চলছে গ্রীষ্মের তাপদাহ। কাক্সিক্ষত বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষেতের পাট ক্ষেতেই পুড়ছে। সময় হলেও পানির অভাবে পাট কাটতে পারছি না। অনেকে পাট কেটেও পানির অভাবে জাগ দিতে না পেরে জমিতে স্তূপ করে রেখেছেন। অনেক কৃষক পুকুর বা ছোট জলাশয়ে সেচ দিয়ে পানির ব্যবস্থা করলেও তাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। নিশ্চিত লাভ জেনেও প্রকৃতির বিরূপ আচরণে কৃষকের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে।
জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, চাষিরা জমির পাট কাটতে শুরু করেছে। এখন বড় সমস্যা পাট পচানো নিয়ে। পানির অভাবে চাষিরা ভালোভাবে পাট পচাতে পারছেন না। আমরা চাষিদের কম ব্যয়ে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শ দিচ্ছি। এ পদ্ধতিতে পাট পচালে পাটের আঁশের মান ভালো হয়। ভালো মানের পাট উৎপাদন করতে পারলে দামও ভালো পাওয়া যাবে। এতে তারা লাভবান হবেন। প্রবহমান পানিতে পাটের জাগ ও মাটিচাপা না দিয়ে জাগ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার পাটের আবাদ ভালো হয়েছে এবং পাটের অবস্থাও ভালো। অনাবৃষ্টি হলেও পাটের উৎপাদন ব্যাহত হবে না। তবে অতিবৃষ্টি হলে চাষিদের জন্য আরও সুবিধা হতো।