মন্ত্রিসভার বৈঠকে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প স্থগিতের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
প্রকল্পের ৩ শ্রেণি নির্ধারণ : ‘এ’ ক্যাটাগরির শতভাগ ও ‘বি’তে ৭৫ ভাগ অর্থ ব্যয় করা যাবে
স্টাফ রিপোর্টার: অপেক্ষাকৃৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যয় কমাতে সরকারি প্রকল্পের খরচ কমানোসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দেন তিনি। একই সঙ্গে কোন প্রকল্পের জন্য কত শতাংশ টাকা ব্যয় করা যাবে, তাও সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। তিনি ভার্চ্যুয়ালি সভায় যুক্ত হন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সংবাদিকদের ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের মধ্যে মন্ত্রিসভার সদস্যদের খরচ কমানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। পরিবহণে কৃচ্ছ্রসাধন বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা চিন্তা করছি। সব জায়গায় কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে। মন্ত্রীদেরও তিনি (প্রধানমন্ত্রী) গাড়ি নিয়ে ছোটাছুটি না করে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ বাড়াতে বলেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জ্বালানি সংকট সারা বিশ্বে চলছে। এটা সবাই জানে। আমরা কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নই। সংকটটা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে কি না, সেটা এ মুহূর্তে বলতে পারব না। তিনি বলেন, জ্বালানি নিয়ে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। তাতে মনে হয়, পরিস্থিতি সামাল দিতে পারব। আমাদের এগুলো মেনে চলে কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে ব্যয় কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য আমাদের প্রকল্পগুলোর এ, বি, সি তিনটি ক্যাটাগরি করা হয়েছে । ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত প্রকল্পগুলো অবশ্যই প্রয়োজন, এগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রকল্পের পুরো টাকা খরচ করা যাবে। ‘বি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোতে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ করা যাবে। আর ‘সি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন স্থগিত থাকবে। এই শ্রেণিগুলো কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো মন্ত্রণালয় ঠিক করবে। নির্ধারণ হবে গুরুত্ব অনুযায়ী। যদি কোনো মন্ত্রণালয় মনে করে একটি প্রকল্পের শ্রেণি পরিবর্তন করা দরকার, তবে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে তা ঠিক করবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিদেশে প্রশিক্ষণের বিষয়ে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ট্রেজারি থেকে বিল হয় এমন কোনো বিদেশভ্রমণ এখন মন্ত্রণালয়গুলো করতে পারবে না। সরকারি টাকায় সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। তবে দরপত্রে থাকা দরদাতার ব্যয়ে প্রযুক্তি স্থানান্তর সংক্রান্ত যে বিদেশ সফর রয়েছে সেগুলো বন্ধ থাকবে না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী কেনাকাটার বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন। যেসব কেনাকাটা অবিলম্বে করার দরকার নেই, সেগুলো আপাতত স্থগিত থাকবে। যেমন গাড়ি কেনার কথা জোরালোভাবে মানা করে দেয়া হয়েছে। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে জোর দিয়েছেন। বিশেষ করে কোথাও কোথাও যদি একফসলি জমি থাকে, সেখানে তিন ফসল করার বিষয়টি চিন্তা করতে হবে। বাড়ির উঠানে শাকসবজি করতে হবে। তিনি বলেন, সবাইকে একটু সহযোগিতা করার জন্য উনি (প্রধানমন্ত্রী) বিশেষ অনুরোধ করেছেন। সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে খাবার ও সার নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আমাদের জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রসঙ্গত, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয় কমাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেট খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ সাশ্রয় ও ব্যয় হ্রাস করার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। আবার জ্বালানির ব্যবহার কমাতে মন্ত্রীদের গাড়ি নিয়ে বেশি ছোটাছুটি না করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি সব দপ্তরে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২০ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবদের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়া ব্যক্তি পর্যায়েও ব্যয় সাশ্রয়ে নানা রকমের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।