কনস্টেবল মাহমুদুলকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন এডিসি লাবণী
ঘটনা দুটির মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে ধারণা অনেকের : আত্মহত্যার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না পরিবার
স্টাফ রিপোর্টার: মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) খন্দকার লাবণী (৪০) এবং তার সাবেক দেহরক্ষী কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানের (২৩) আত্মহত্যার ঘটনায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। দুটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করছেন অনেকে। তবে নিহত মাহমুদুল হাসানের পরিবার ও স্বজনরা জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে ভাই-বোনের মতো সম্পর্ক ছিল। পুলিশ কর্মকর্তা লাবণী কনস্টেবল মাহমুদুলকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। কি কারণে করতে পারেন, সেটার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না তার পরিবার। পুলিশ সদস্য বাবা এজাজুল হক খানসহ পরিবারের কেউ বিশ্বাস করতে পারছেন না যে মাহমুদুল এমন ঘটনা ঘটাতে পারেন। ছেলের এমন ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। দুই ভাই-বোনের মধ্যে মাহমুদুল হাসান ছোট। গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পিপুলবাড়িয়ায়। তবে তাদের পরিবারের সদস্যরা কুষ্টিয়া শহরের নতুন কমলাপুর এলাকায় নিজেদের দোতলা বাড়িতে বসবাস করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মাগুরা পুলিশ লাইন্সের পুলিশ ব্যারাকের চার তলা ভবনের ছাদে নিজের শর্টগানের গুলিতে আত্মহত্যা করেন কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান। অনেকেই মনে করছেন দুটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে। কারণ নিহত পুলিশ কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান মাগুরায় আসার আগে এডিসি খন্দকার লাবণীর দেহরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মাত্র দেড় মাস আগে মাগুরায় বদলি হয়ে আসেন তিনি।
কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন মাহমুদুল। কলেজে লেখাপড়া করা অবস্থায় চাকরিতে যোগ দেন। তবে গ্রামের বাড়িতে এই পরিবারের কেউ বসবাস করেন না। গ্রামে তার অন্য চাচারা বসবাস করেন। তার মৃত্যুর খবর শুনে স্বজন ও প্রতিবেশীদের অনেকেই মাহমুদুলদের বাড়ির সামনে ভিড় করেন। প্রতিবেশীরা জানান, সর্বশেষ ঈদে গ্রামে গিয়েছিলো মাহমুদুলের পরিবার। কয়েক দিন পরই চলে যায়। এলাকায় তেমন যান না পরিবারের সদস্যরা। তাদের সঙ্গে তেমন কোনো যোগাযোগও নেই। মাহমুদুলের বাবা এজাজুল হক খান এখন চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত। তিনিও পুলিশ কনস্টেবল। কুষ্টিয়া শহরের নতুন কমলাপুর এলাকায় এক যুগ আগে বাড়ি করেছেন। সেখানকার প্রতিবেশী ও স্বজনেরা জানিয়েছেন, ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে সকালেই মা বাবা দুজন মাগুরায় যান। ফোনে যোগাযোগ হলে মাহমুদুলের বাবা এজাজুল হক খান বলেন, ‘মাহমুদুলের মধ্যে কখনো কোনো হতাশা দেখিনি। সে কেন আত্মহত্যা করলো, বিষয়টি বুঝতে পারছি না। বাড়িতে নিয়মিত কথাও হতো তার। মরদেহ নিতে এখন মাগুরায়।’
নিহত কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানের বোন সুমাইরা খাতুন বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা লাবণীর সঙ্গে আমার ভাইয়ের খুবই ভালো সম্পর্ক ছিলো। তাদের মধ্যে ভাইবোনের মতো সম্পর্ক ছিল। লাবণী আমার ভাইকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। আমার ভাই খুব ভালো মানুষ ছিলেন। কখনো কোনো দিন কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি। লাবণীর সঙ্গে আমার ভাইয়ের অন্য কোনো সম্পর্ক ছিলো না। কেন আত্মহত্যা করল বুঝতে পারছি না। শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলো মাহমুদুল। তার মৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।
মাহমুদুল হাসানের চাচা শওকত আলী খান বলেন, সর্বশেষ ঈদে মাহমুদুল তার মা বাবার সঙ্গে বাড়িতে এসেছিলেন। ঈদের দিনই তারা শহরে চলে যান। মাহমুদুল এখনো বিয়ে করেননি। আত্মহত্যা করতে পারেন, এটা বিশ্বাস হয় না। কারণ, মাহমুদুল ভদ্র ও ভালো ছেলে। তিনি কেন আত্মহত্যা করলেন, তা খতিয়ে দেখা উচিত। নিছকই একটি আত্মহত্যা নাকি অন্য কোনো বিষয় আছে, সেটাও পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।
এদিকে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, মাহমুদুলের মৃত্যুর খবরের পর তারা খোঁজখবর নিচ্ছেন। তার পরিবারের লোকজন শোকার্ত। তেমন কোনো তথ্য তারা এখনো পাননি। পরিবারের লোকজনও আত্মহত্যার বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে পারছেন না।