রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে সারাবিশ্বেই জ্বালানি সরবরাহে বিরাট এক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়ার ওপর যেসব দেশ জ্বালানি নির্ভর ছিলো। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউক্রেনের মিত্রদের নানান নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই সঙ্কট আরও প্রকট হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বহুদেশ সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্বালানির পেতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছে ইউরোপ ইউনিয়নের পাশাপাশি আরও অনেক দেশ। তাতে চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে দামও কয়েকগুণ বেড়েছে জ্বালানির।
জ্বালানির এমন উচ্চমূল্য অনেক দেশের কাছেই বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। যে কারণে স্বল্প আয়ের দেশগুলোর পক্ষে এই মুহূর্তে বেশি দামের জ্বালানি কেনা সম্ভব হচ্ছে না। সঙ্কটের এই চক্রে বাংলাদেশও বড় ভুক্তভোগী। এতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে দেশের বিদ্যুতখাত। দাম বেড়ে যাওয়ায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) নির্ভর এবং ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। এ কারণে বারবার লোডশেডিং করতে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগকে। দিনে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও তার চেয়েও বেশি।
এমন পরিস্থিতির কথা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিজেও স্বীকার করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, গ্যাসের স্বল্পতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে অনেক জায়গাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় স্বাভাবিক হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না থামলে খুব সহসাই পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভব না। যেসব দেশ বেশি দামে জ্বালানি কিনতে পারছে না, তারা এরই মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করে সাশ্রয়ী নীতিতে চলে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশকেও আমরা এই নীতিতে যেতে দেখছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে এছাড়া আমাদের যে কোনো বিকল্প নেই, গত কয়েকদিনের লোডশেডিং সেই তথ্যই দেয়। সামনের দিনগুলোতে হয়তো তা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাড়াতে হবে। এটা যে শুধু বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত করবে তা নয়, গৃহস্থালির গ্যাসের ওপরও মারাত্মক সঙ্কট তৈরি করবে।
আমরা মনে করি, পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই সরকারকে জ্বালানি সাশ্রয়ে আরও বড় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজনে রাতের একটা সময় কয়েকঘণ্টা বিদ্যুৎ পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হবে। পাশাপাশি বাড়ি-ঘরে বিদ্যুতের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বন্ধে আমাদের সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। তবেই বড় ধরনের সঙ্কট থেকে আমরা উত্তীর্ণ হতে পারবো।