কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় পদ্মা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। বাহিরচর ইউনিয়নের মসলেমপুর থেকে মুন্সীপাড়া পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার এলাকার ভাঙনে ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখন বাড়িঘর ভাঙনে হুমকির মধ্যে। ভাঙন থেকে মাত্র দেড়শ মিটার দূরে ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৫ হাজার পরিবারের বাড়িঘর। এদিকে রোববার বিকেল সাড়ে ৫টায় ভাঙনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাহিরচর ইউনিয়নের ১২ মাইল ভাঙনকবলিত এলাকায় পদ্মাপাড়ে মানববন্ধন করেছেন হাজারো এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে স্থানীয়রা বলেন, গত ৭ দিন আগে প্রথম দফায় নদীর পানি বেড়ে যায়। ফলে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গেছে। ইতোপূর্বে আউশ ধান, কলা, পেঁয়াজ, রসুন করলা সবজির মাঠ নদীতে ভেঙে গেছে। এক সপ্তাহের ভাঙনে ২০০ বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। এর আগেও ভেঙেছে। এখন বাড়িঘর ভাঙনের মুখে। নদী এখন একশ মিটার দূরে রয়েছে। রোধ করা না হলে সব নদীগর্ভে চলে যাবে। আমরা ভিটাছাড়া হবো। তাই ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। মানববন্ধন শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলিম স্বপন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ভেড়ামারা পৌর মেয়র আনোয়ারুল কবির টুটুল, উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক এসএম আনসার আলী, পৌর জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বকুল, ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান, ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন, সফিকুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তারা বলেন, প্রতিবছরই নদীতে চলে যাচ্ছে ফসলি জমি। এবার বসতবাড়ির নিকট চলে এসেছে। ৫ হাজার পরিবার হুমকির মুখে। প্রধান অতিথি আব্দুল আলিম স্বপন বলেন, ভাঙনের বিষয়টি আমাদের সংসদ সদস্য জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে জানিয়েছি। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছেন। এরপর নির্বাহী প্রকৌশলী পরিদর্শন করে সার্ভে করে গেছেন। আমি ভাঙন রোধে আন্দোলনকারীর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি। প্রধান অতিথি আব্দুল আলিম স্বপন পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানান। ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান বলেন, গত সাতদিন ধরে ভেড়ামারার বাহিরচর ইউনিয়নের মসলেমপুর এলাকা থেকে শুরু করে টিকটিকিপাড়া ও মুন্সিপাড়া পর্যন্ত ৬ কিলোমিটারজুড়ে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। তবে গত তিনদিনে তা তীব্র আকার ধারণ করেছে। তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ পরিবারের প্রায় ১ হাজার ২শ বিঘা জমি ভাঙনে নদীর বুকে চলে গেছে। গত সাতদিনে ২০০ বিঘার জমির আউশ ধান, কলা, করোলা সবজিসহ ফসলি জমি নদীতে ভেঙে গেছে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন বলেন, ভাঙনে এখন মোসলেমপুর, টিকটিকিপাড়া ও মুন্সীপাড়ার ৬ কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচ হাজার পরিবার বসবাস করছে। এসব পরিবারের বাড়িঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাড়িঘর থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে রয়েছে নদী। ভাঙনে শহিদুল ম-লের ২ বিঘা, হাবিবুর রহমানের ৩ বিঘা, আবু বক্করের ৫ বিঘা, মজিবর প্রামাণিকের ২ বিঘাসহ ২শ বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আব্দুল হামিদ বলেন, সোমবার সকালে নির্বাহী প্রকৌশলী ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে সার্ভে করেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়াও ভাঙনকবলিত এলাকা নিয়ে স্টাডি চলছে।