স্টাফ রিপোর্টার: তিন নিত্যপণ্য-চাল, সয়াবিন তেল ও পেঁয়াজের বাড়তি দরে রীতিমতো দিশেহারা ভোক্তা। কয়েক মাস ধরেই এসব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতি। বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানিতে শুল্ক কমানো ঘোষণার পরও দাম কমেনি। বরং কারসাজিতে মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। এ মুহূর্তে লিটারপ্রতি গুনতে হচ্ছে ২০০-২১০ টাকা। এছাড়া সরবরাহ সংকট না থাকলেও প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম মাসের ব্যবধানে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ।
কুরবানির ঈদ ঘিরে বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। বাজারে সংকট না থাকলেও সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। ফলে বাজারে অন্যান্য পণ্যের মধ্যে ক্রেতাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি কিনতে বাড়তি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এদিকে সোমবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার পণ্য মূল্য তালিকায় দাম বাড়ার চিত্র লক্ষ করা গেছে। টিসিবি বলছে, মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৮.৭৫ শতাংশ বেশি টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২১ শতাংশ বেশি দামে।
তিন মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলে দাম কমেছে ১৭৫ ডলার। এরপরও ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে এক মাসে দুদফায় সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৫১ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করেছেন। তবে ক্রেতাদের তোপের মুখে ২৬ জুন মাত্র ৬ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেও বাজারে তা কার্যকর হয়নি। পাশাপাশি ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট ছাড়, এলসি কমিশন ও এলসি মার্জিন প্রত্যাহারের সুফল এখনো ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এপ্রিলে এসব সুবিধা নিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি আমদানি করা হয়েছে, যা ইতোমধ্যে দেশের বাজারে চলে এসেছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সুফল নিলেও ক্রেতার পকেট কাটা যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের গড় মূল্য ছিল টনপ্রতি ৭৬৫ ডলার। ২০২০ সালে দাম ছিল ৮৩৮ ডলার এবং ২০২১ সালে সয়াবিনের টনপ্রতি দাম ছিল ১৩৮৫ ডলার। কিন্তু চলতি বছরের মার্চে একপর্যায়ে তা বেড়ে যায়। মার্চে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম হয় ১৯৫৬ ডলার। এপ্রিলে কমে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম হয় ১৯৪৭ ডলার। আর বর্তমানে টনপ্রতি ১৭৮১ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলে দাম কমেছে ১৭৫ ডলার। এদিকে ২ জুন সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমছে। এখন দেশের বাজারেও তা কমবে। মে মাসের তথ্য পর্যালোচনা করা হবে। সুখবর হচ্ছে, পাম তেলের দাম কমেছে। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সয়াবিনের দামও কমার দিকে। আমার ধারণা, দাম বৃদ্ধির কোনো আশঙ্কা নেই।
সংকট না থাকলেও চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে চার মাসের জন্য চাল আমদানির সুযোগ দেওয়া হলেও দাম কমছে না। বরং মাসের ব্যবধানে কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। ফলে ক্রেতাদের এখনো নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি বাড়তি দরে কিনতে হচ্ছে। এতে সব শ্রেনির ক্রেতার নাভিশ্বাস বাড়ছে।
এদিকে আগামী অক্টোবর মাসের পুরো সময় পর্যন্ত চাল আমদানি করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আমদানিকারকরা আগের ৬২ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করতে পারবেন। যারা চাল আমদানি করবেন, তাদের প্রতিটি চালান আমদানির সময় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এরই মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় চাল আমদানির অনুমতি নেওয়ার জন্য আবেদন ফর্ম প্রকাশ করেছে। আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করা যাবে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চাল আমদানির অনুমতি দিয়ে তালিকা প্রকাশ করবে মন্ত্রণালয়। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যেও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা লোটার পাঁয়তারা করছে।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২৬ জুন পর্যন্ত সরকারি গুদামে মোট ১৫ লাখ ৮৪ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। এর মধ্যে চাল মজুত আছে ১৩ লাখ ১০ হাজার টন। আর এক লাখ ৭০ হাজার টন গম মজুত আছে। পাশাপাশি ধান মজুত আছে ৯৯ হাজার টন। সূত্র জানায়, দেশে চালের কোনো সংকট নেই। যে পরিমাণে মজুত আছে তাতে করে সংকটের সম্ভাবনাও নেই। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়েও রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চাল।