স্টাফ রিপোর্টার: স্বপ্নের পদ্মা সেতু শনিবার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণের ২১ জেলার সরাসরি সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সেতুর দুই প্রান্তে চলছে উৎসব। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবর দেশের গ-ি পেরিয়ে সাড়া ফেলেছে আন্তর্জাতিক মহলেও। যার প্রতিচ্ছবি দেখা গেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে। অপরদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরা। তাদের আশা, সেতুটির কারণে তারা বাংলাদেশি ক্রেতা আরও বেশি পাবেন।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরটি ফলাও করে প্রচার করেছে ভারত ও চীনসহ বিশ্বের নানা দেশের গণমাধ্যম। চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা সবচেয়ে বড় এবং চ্যালেঞ্জিং অবকাঠামো প্রকল্প। ভবিষ্যতের ট্রান্স এশিয়া রেলপথ নেটওয়ার্কের জন্য পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে। দেশটির জনপ্রিয় গণমাধ্যম পিপলস ডেইলির অনলাইন সংস্করণেও খবরটি গুরুত্ব পেয়েছে। প্রতিবেদনে পদ্মা সেতুর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডেপুটি হেড জো লিন বলেছেন, পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণবাংলার মানুষ স্বল্প সময়ে রাজধানী ঢাকায় যেতে পারবে। পদ্মার স্রোত, বালির আলগা মাটিসহ পদ্মা সেতু তৈরিতে ছিল নানা চ্যালেঞ্জ। সেতুর উদ্বোধনের খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এই চাইনিজ প্রকৌশলী। সেতু এলাকার স্থানীয় জনগণকে সহজ, সরল ও পরোপকারী হিসাবে চিত্রিত করেছেন জো লিন। এছাড়া চায়না ডেইলি, সিনহুয়া নেট, চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনালসহ অন্যান্য মিডিয়ায় খবর গুরুত্ব পেয়েছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের গণমাধ্যমে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবর সাড়া ফেলেছে। সেতু পরিদর্শন করে খবর লিখেছেন দ্য প্রিন্টের সিনিয়র কনসাল্টিং এডিটর জ্যোতি মালহোত্রা। তিনি লিখেছেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় সংকল্পের পরিচায়ক এবং তার রাজনৈতিক দর্শনের ভার বহন করছে এটি। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তার মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দৃঢ় মনোভাব দেখিয়েছেন, তাতে পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় আসা সহজ হতে পারে। সেতুটি শুধু পদ্মার ওপর নয়, গোটা গঙ্গা অববাহিকায় তৈরি দীর্ঘতম সেতু।
নয়াদিল্লির অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে সোহিনি বোস ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প : উদীয়মান বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক নিবন্ধ লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, সেতু প্রকল্পটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে উদ্ভাবনী অথচ চ্যালেঞ্জিং হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে। বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক যোগাযোগ কৌশল ও বিনিয়োগ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ চমক দেখিয়েছে। প্রকল্পটি ২০২৩ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে সম্ভাবনা জুগিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের খবরটি গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে। সেখানে বলা হযেছে, নির্মাণ শুরুর আট বছরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের স্বপ্ন পূরণ করেছেন। ভারতের মেগাসিটি কলকাতার সঙ্গে সহজ যোগাযোগের জন্য এমন একটি সেতু দরকার ছিল।
পাকিস্তানের পাঞ্জাবের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক মালিকা-ই-আবিদা খাত্তাক পদ্মা সেতু নিয়ে নিবন্ধ লিখেছেন। দেশটির শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ‘ডেইলি টাইমস’ ও ‘উইকলি ফ্রাইডে টাইমস’-এ প্রকাশিত নিবন্ধে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। নিবন্ধটির নাম ‘বাংলাদেশে পদ্মা সেতুর গল্প : একটি সেতুর চেয়ে বড়’। অর্থাৎ পদ্মা সেতুকে তিনি সেতুর চেয়েও বড় কিছু হিসাবেই দেখেছেন। আমিরাতের খালিজ টাইমস জানিয়েছে, বেইজিং পদ্মা সেতুকে চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসাবে দেখছে।
যেসব সুবিধা পাবে পশ্চিমবঙ্গ : পদ্মা সেতুর উন্মাদনা বাংলাদেশ ছাপিয়ে ছুঁয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গেও। সেতুটি চালু হওয়া মানেই দুদেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হওয়া, দুদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন গতি আসার ইঙ্গিত। পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ী মহল এখন মুখিয়ে আছে পদ্মা সেতু হয়ে কবে বাংলাদেশি পর্যটকের ঢল পশ্চিমবঙ্গে ঢুকবে। বাংলাদেশি পর্যটক কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গে আসা মানেই কলকাতার ব্যবসায়ীদের কাছে অবারিত সুযোগ। বিশেষ করে কলকাতার নিউমার্কেট এলাকার বড় অংশের ব্যবসায়ীরা সারা বছরই বাংলাদেশি পর্যটকদের আশায় পথ চেয়ে থাকেন। একইভাবে কলকাতার অনেক বেসরকারি হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীর ভিড় জমে। ফলে পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ী মহল পদ্মা সেতুকে ঘিরে স্বপ্নের জাল বুনছেন।
শনিবার কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন এবং কলকাতা পৌরসভার উদ্যোগে কলকাতা শহরের আটটি স্থানে জায়ান্ট স্ক্রিনে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠান দেখানো হয়। উপ-হাইকমিশনের বাংলাদেশ গ্যালারিতে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দৃশ্য সকাল ৯টা থেকে সরাসরি দেখানো হয়। প্রথম প্রেস সচিব রঞ্জন সেন বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম উচ্ছ্বাস দেখিয়েছেন।