স্টাফ রিপোর্টার: ধান ও চালের অবৈধ মজুতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে নেমেছে সরকারের একাধিক টিম। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরপরই দেশের বিভিন্ন চালের বাজারে অভিযানের কথা জানা গেছে। চলতি বোরো মরসুমে ধান-চালের দাম বেশি কেন সোমবার এ প্রশ্ন তুলে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় এ পদক্ষেপ নিলো। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ধান-চালের অবৈধ মজুত ঠেকাতে মাঠে নেমেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ৮ টিম। কেউ অবৈধ মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে কি না তা খতিয়ে দেখবে টিমগুলো। একইসঙ্গে অবৈধ মরুতদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কাজ করবে। অবৈধ মজুতদারি প্রতিরোধে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), এনএসআই, র্যাব ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকেও চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও শিগগির কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বিত সভা আয়োজন করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন খাদ্যমন্ত্রী। এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। অবৈধ মজুতের তথ্য জানাতে কন্ট্রোল রুমের +৮৮০২২২৩৩৮০২১১৩, ০১৭৯০৪৯৯৯৪২ এবং ০১৭১৩০০৩৫০৬ নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে আমাদের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং কুষ্টিয়ার চালের মোকামে ধান-চালের মতুত বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। কোনো অসংগতি পেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী। মঙ্গলবার বেলা ৫টায় তিন সদস্যের একটি দল খাজানগর এলাকায় বেশ কয়েকটি গুদামে সরেজমিন খোঁজখবর নেয়। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ ওই দলে জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা ছিলেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র বলছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খাজানগর এলাকায় অবস্থিত। সেখানে প্রায় ৫২টি অটো রাইস মিলসহ অন্তত পাঁচ শ মিল আছে। এসব মিল থেকে উৎপাদিত চাল দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ চালের চাহিদা পূরণ করে থাকে। এক মাস ধরে এই এলাকায় কয়েক দফা চালের দাম বাড়ানো হয়েছে, যা কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৮ টাকা বেড়েছে। এক সপ্তাহ ধরে মিলারদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ জন্য খাদ্য বিভাগের পাঁচটি দল কাজ করছে। প্রতিটি দলে তিনজন করে সদস্য আছেন। তারা এলাকাভিত্তিক মিলে প্রতিদিন ধান কেনা ও চাল উৎপাদনসহ চাল সরবরাহের তথ্য সংগ্রহ করছেন। ইতিমধ্যে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। যাতে দেখা গেছে, ২৭ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত চার দিনে এক টাকা বাড়ানো হয়েছে, যা প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ পয়সা করে। এই সময়ে ধান বেশি দামে কেনা হয়েছিল কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
খাদ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, খাজানগর এলাকা থেকে এক মাসে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বেশি হারে চাল সরবরাহ করা হয়েছে। সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। এসব মজুত হয়েছে নাকি বিক্রি হয়েছে, সেটাও তদারকির প্রয়োজন। এ বিষয়ে এজেন্সি-ব্যবসায়ীদের কাছে যাওয়া দরকার।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, খাদ্য নিয়ন্ত্রক, বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা ও ভোক্তা কর্মকর্তা মাঠে কাজ করছেন। আজ বুধবার তাদের সঙ্গে বৈঠক আছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে যা যা প্রয়োজন, তার সবই করা হচ্ছে। কোনো অসংগতি পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।