চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা
স্টাফ রিপোর্টার: দেশব্যাপী আওয়ামী সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য লাগামহীন বৃদ্ধির কারণে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, এই সরকার শুধু অর্থ লুট করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করছে দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে এদেশের জনগণ আজ নিপীড়িত নিঃস্ব। যতোদিন যাচ্ছে এই সরকারের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যে ততোই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা সব জায়গায় বিক্ষোভ করতে পারি না। বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করলে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, নইলে এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি। তারা অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা ও সাজা বাতিল করে দেশে আসার সুযোগ দেয়ার দাবি জানানো হয়। আরও বলেন, এই মাসে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে মহান স্বাধীনতার ঘোষক বিএনপির চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বীর উত্তমকে হত্যা করা হয়। আজকে আমাদের শপথ নিতে হবে জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এই স্বৈরচারী ভোট চোর সরকারকে উৎখাত করে জনগণের ভোটের অধিকার ফেরৎ দিতে হবে। বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার সময় শেষ হয়ে এসেছে। তারা ভাবতেই পারে না ক্ষমতা ছাড়তে হবে। তারা ভাবে এটা মনে হয় তাদের জন্মগত অধিকার। আওয়ামী লীগ সব ছাড়তে রাজি কিন্তু ক্ষমতা ছাড়তে রাজি না। কিন্তু ক্ষমতা ছাড়তেই হবে। বক্তারা আরও বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেছেন ‘যারাই আওয়ামী লীগ করেছে; তারাই বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে’ অর্থাৎ দলের সবাই চোর সেটা তিনি স্বীকার করেছেন। তবে টাকা যেখানেই পাচার হোক বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তা দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। দেশের টাকা আকাশে যাক, আর সাগরে ভাসুক, সেই টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। আওয়ামী লীগ টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না। ব্যবসায়ীদের এখন ১০ নয় ১০০ শতাংশ কমিশন দিতে হয়। বক্তারা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বুঝতে পারবেন কতো ধানে কতো চাল। ১৩ বছর ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার নির্যাতন করেছেন। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা দিয়েছেন। তবে বিএনপি শহীদ জিয়ার দল। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। আমারা ভোট দেয়ার অধিকার চাই, গণতন্ত্র ও গণনির্বাচন চাই। খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। নেত্রীকে মুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ দেশের জন্য রক্ত দিয়েছে। পুলিশের অনেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের পুলিশ সুনামের সঙ্গে কাজ করেছে। এই ৫০ বছরে পুলিশের বিরুদ্ধে কোন দেশের নিষেধাজ্ঞা আসেনি। পুলিশকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। তারা পুলিশকে ডাকাতের দলে পরিণত করেছে। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের যে করুণ দুর্দশা, শুধু তেলের দাম বাড়ছে তা নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম বেড়েছে। এই অবস্থায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে দেশের মানুষকে রূপকথার গল্প শুনিয়েছিলো, ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, গ্রামকে শহরে রূপান্তর করবে। কিন্তু এখন ১০ টাকায় চালের বদলে ঘরে ঘরে হাহাকার ছাড়া কিছু দেয়নি। গণতন্ত্রকে বিলীন করে আইনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা সমগ্র দেশটাকে রক্তাক্ত জনপদে পরিণত করেছে। নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে সরকার আরও লাগামহীন ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
চুয়াডাঙ্গায় বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় জেলা সাহিত্য পরিষদ প্রাঙ্গণে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-কোষাধ্যক্ষ মাহমুদ হাসান খান বাবুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সাবেক হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা মসিউর রহমান। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরীফুজ্জামান শরীফের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খন্দকার আব্দুর জব্বার সোনা, খাজা আবুল হাসনাত, এম জেনারেল ইসলাম, রউফুন নাহার রিনা, সিরাজুল ইসলাম মনি, আব্দুল জব্বার বাবলু, আনোয়ার হোসেন খান (খোকন), আবু বক্কর সিদ্দিক (আবু), মোকাররম হোসেন, মনিরুজ্জামান মনির, রফিকুল হাসান তনু, আজিজুর রহমান পিন্টু, রাফিতুল্লাহ মহলদার, হাবিবুর রহমান (বুলেট), মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু, নজরুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ (উথলী), মনিরুজ্জামান লিটন, আমিনুল হক (রোকন), আবুল হোসেন তোহা, নুর নবী সামদানী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য নবী চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিকুল ইসলাম পিটু, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহেদ মোহাম্মদ রাজীব খান, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মোকাররম হোসেন, সদস্য সচিব তোবারক হোসেন, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদাক সেলিমুল হাবীব সেলিম, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহ্জাহান খান, সাধারণ সম্পাদক মোমিন মালিতা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশিদ ঝন্টু, জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক বকুল, সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক কামরুজ্জামান বাবলু, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক জাহানারা খাতুন। এছাড়াও সমাবেশে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের নেতাকর্মীরাসহ বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠণের শত শত নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে সমবেত হয়।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। গতকাল শনিবার সকালের দিকে মেহেরপুর জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক পানি সম্পদক প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. গৌতম চক্রবর্তী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খুলনা বিভাগ বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কু-ু, মেহেরপুর জেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন, সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন। পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রশিদ, সাইফুল ইসলাম, আমিরুল ইসলাম, সদস্য সচিব হারুন অর রশিদ বাচ্চু, জুলফিকার আলী ভুট্টো, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। এ সময় জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার সকালে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে জেলা বিএনপি। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. এসএম মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব অ্যাড. এম এ মজিদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক আব্দুল মালেক, যুগ্মআহ্বায়ক জাহিদুজ্জামান মনা, সদর থানা বিএনপির সভাপতি মুন্সি কামাল আজাদ পানু, পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল মজিদ বিশ^াস, কৃষকদল নেতা আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা, শৈলকুপা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন, হরিণাকু-ুর হাসান মাস্টার, মহেশপুরের মেহেদি হাসান রনি, কালীগঞ্জের আব্দুল হামিদ। বক্তারা, দেশব্যাপী বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও নৈরাজ্য’ আওয়ামী লীগকে দায়ী করে এর প্রতিবাদ জানান। সেই সাথে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে। একই সাথে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধে সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন।