রতন বিশ্বাস: জেলার গন্ডি পেরিয়ে এবার জাতীয় পর্যায়ে সেরা ‘স্বপ্নজয়ী মা’ সম্মাননা অর্জন করলেন কার্পাসডাঙ্গার মোছা. মমতাজ বেগম। তিনি দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা ও কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম আলতাফ হোসেনের (আলতামাস) স্ত্রী। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় মহিলা বিষয়ক অধিদফতর কার্যালয়ে ঢাকায় সারা বাংলাদেশ থেকে মোট ১২জন মাকে এই বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের মহা-পরিচালক পারভীন আক্তারের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্বপ্নজয়ী মায়েদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদফতরের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদফতরের সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। মমতাজ বেগমের স্বামী মো. আলতাফ হোসেন দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ফুডশপ ইনচার্জ ছিলেন। ২০০২ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং ২০০৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়েই এই ‘স্বপ্নজয়ী মা’ তার ৮ সন্তানকে বড় করেছেন। তার অসীম ধৈর্য্য, সাহস, দৃঢ় মনোবল, চৌকস বুদ্ধিমত্তা ও পরিশ্রমের ফসল এই ৮ সন্তান। তারা আজ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। এই রতœগর্ভা মায়ের বড় ছেলে মো. আব্দুল কাদির, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে বর্তমানে কুতুবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত, বড় দুই মেয়ে মোছা. হাসিনা খাতুন ও মোছা. হাবিবা খাতুন দর্শনা সরকারি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে বর্তমানে যথাক্রমে দামুড়হুদা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও মুন্সিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। মেজো ছেলে মো. আ. আলীম বাবু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটিং বিভাগ হতে এমবিএ ও সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি মালয়েশিয়া হতে মাস্টার অব বিজনেস সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটিং বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তিনি গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটি অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি গবেষণার জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকারের বৃত্তিলাভ করেছেন। ছোট ছেলে মো. আব্দুল হাকিম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া হতে ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগ হতে বিএসসি ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি জনতা ব্যাংক রাজশাহী বিভাগীয় অফিসে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। সেজো মেয়ে মোহসিনা বিশ্বাস জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে বিএ (অনার্স) ও এমএ (বাংলা) সম্পন্ন করে চুয়াডাঙ্গা সদরে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরে কর্মরত। চতুর্থ মেয়ে রোখসানা খাতুন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের, কুষ্টিয়া ইইই বিভাগ হতে বিএসসি ও এমএসসি সম্পন্ন করে রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক বিভাগে চিপ ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত এবং সবার ছোট সন্তান রোমানা বিশ্বাস শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগ হতে বিএসসি ও এমএসসি সম্পন্ন করে বর্তমানে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন। রতœগর্ভা মা মমতাজ বেগম জানান, সন্তানদেরকে শিক্ষা দেয়া ছিলো সর্বোচ্চ আন্তরিক প্রচেষ্টা। যেকারণে সন্তানদের সুশিক্ষিত ও আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি। সন্তানরা এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত। আসলে এ ধরনের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত হবো কখনোই ভাবিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পর আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকমতো পালনের চেষ্টা করেছি মাত্র। ফলাফল হিসেবে পেয়েছি সন্তানদের সফলতা। যার স্বীকৃতি হিসেবে সফল জননী সম্মাননা পেয়ে ভালো লাগছে। এদিকে জাতীয় পর্যায়ে মমতাজ বেগম দেশের সেরাদের একজন ‘স্বপ্নজয়ী মা’ সম্মাননা পাওয়ায় কার্পাসডাঙ্গাবাসী গর্বিত। উল্লেখ্য, তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা পর্যায়েও ‘স্বপ্নজয়ী মা’ সম্মাননা লাভ করে গত ৮ মে সম্মাননা গ্রহণ করেন।
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ