চুয়াডাঙ্গায় আস্থা প্রকল্পে চাকরির নামে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে লাপাত্তা প্রতারক চক্র

স্টাফ রিপোর্টার: জীবননগর উপজেলার শাপলাকলি পাড়ার মো. রেজাউল হোসেনের স্ত্রী মালা খাতুন। তিনি তার স্বামীর মোটরসাইকেল বিক্রি করে এবং এনজিও সংস্থা ব্র্যাক থেকে ঋণ নিয়ে ২ লাখ দেন উথলী গ্রামের মো. জহুরুল ইসলামের কাছে। মালা খাতুনের স্বপ্ন ছিলো ২ লাখ টাকার বিনিময়ে একটা চাকরি নিয়ে সংসারে সচ্ছলতা আনবেন। কিন্তু তার সে স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ আস্থা প্রকল্পে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আয়া পদে চাকরি নিয়ে ৬ মাস ডিউটি করলেও তিনি আজ পর্যন্ত ১ টাকাও বেতন পাননি। এছাড়া জামানতের ২ লাখ টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও অনিশ্চিয়তা রয়েছে। উথলী গ্রামের আয়ুব আলীর স্ত্রী ফাতেমা খাতুন মনোহরপুর গ্রামের মো. সাগর হোসেনের কাছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেন জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আয়া পদে চাকরি নেবার জন্য। তার হাতে একটি নিয়োগপত্রও ধরে দেয়া হয়। তিনিও ৬ মাস ধরে হাসপাতালে ডিউটি করছেন। অথচ আজ পর্যন্ত একটি টাকাও বেতন পাননি। শুধু মালা খাতুন এবং ফাতেমা খাতুন না। জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের ৪৩ জন এভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন আস্থা প্রকল্পে চাকরি নিয়ে। একই অবস্থা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন অফিসের ১২৩ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯ জন এবং দামুড়হুদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২০ জনের।
অভিযোগ উঠেছে, ঢাকার গোল্ডেন সার্ভিস লিমিটেডের আস্থা প্রকল্পে চাকরি নিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন চুয়াডাঙ্গার ২শ’ ৫ জন নারী-পুরুষ। জামানতের নামে প্রতারক চক্র প্রায় ৩ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে।
প্রতারণার শিকার মালা খাতুন বলেন, প্রতারকরা তাকে সর্তক করে দিয়েছেন যেনো এঘটনা কোনো সংবাদিকের কাছে না জানানো হয়। জানালে জামানতের ২ লাখ টাকা আর ফেরত দেয়া হবে না। একারণে প্রতারণার শিকার হয়েও অনেকে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন না।
চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে মোটা অঙ্কের বেতনের লোভ দেখিয়ে আয়া, পরিচ্ছতা কর্মীসহ বিভিন্ন পদে আস্থা প্রকল্পের অধিন নিয়োগ দেয় সাবেক সিভিল সার্জন এএসএম মারুফ হাসান এবং তার সহযোগিরা। ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার গোল্ডেন সার্ভিস লিমিটেডের আস্থা প্রকল্পের আওতায় এসব জনবল নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগের জন্য ওই সময় আস্থা প্রকল্পের পরিচালক জাহিদ হাসান সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসানকে একটি চিঠি দেন। মন্ত্রণালয়ের অনুমতির পর প্রকল্পের আওতায় সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে ২০৫ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগের সময় চুয়াডাঙ্গার সাবেক সিভিল সার্জনের নির্দেশে ওই অফিসের দেলোয়ার হোসেন, রোকেয়া খাতুন, নুর আলম, জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক শ্রী দানেশ, উথলী গ্রামের জহুরুল ইসলাম, মনোহরপুর গ্রামের সাগর হোসেন, তেলটুপি গ্রামের মো. খায়রুলসহ অন্যরা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্তরা জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে আস্থা প্রকল্পের নিয়োগপত্র নিয়ে সরাসরি হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে কাজ শুরু করেন। অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগপ্রাপ্তরা তাদের নিয়োগপত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে দাখিল করে কাজ শুরু করেন। তবে এই নিয়োগ নিয়ে গত কয়েকমাস ধরেই সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে সমালোচনা শুরু হয়। সচেতনমহলের অনেকেই দাবি করছেন এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণই ভূয়া। এ প্রকল্প দেখিয়ে যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার আড়ালে কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে।
সূত্র মতে, আস্থা প্রকল্পের গোল্ডেন সার্ভিসে যে ২০৫ জন নিয়োগ পেয়েছেন। এদের প্রত্যেকেই অন্তত দেড় লাখ টাকা করে দিয়েছেন। সে মোতাবেক ২০৫ জনের নিকট থেকে দেড় লাখ টাকা করে মোট ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। যেহেতু সিভিল সার্জনের মাধ্যমে সদর হাসপাতাল বা জেলার অন্য সব উপজেলা স্বস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগপ্রাপ্তরা তাদের যোগদান সম্পন্ন করেছেন। তাই অনেকেই এটাকে ভূয়া ভাবতে পারেননি। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান কর্মকর্তাকে ভরসা করেই অনেকে গোপনে টাকা দিয়ে নিয়োগ নিয়েছেন।
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সেলিমা আখতার জানান, আস্থা প্রকল্প সর্ম্পকে আমি কিছু জানি না। আস্থা প্রকল্পের নিয়োগকৃত কর্মীরা বেতন না পাওয়ায় তাদেরকে হাসপাতালে ডিউডি করতে নিষেধ করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. মো. সাজ্জাৎ হাসান জানান, আস্থা প্রকল্পে নিয়োগকৃতরা বেতন পায়নি এবং সম্ভবত প্রকল্পটি ভুয়া।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More