গাংনীতে সয়াবিন তেল নিয়ে তেলেসমাতি : ব্যবসায়ীকে অর্থদণ্ড
অধিক মুনাফার আশায় বোতলজাত খুলে খোলা তেল হিসেবে বিক্রি
মাজেদুল হক মানিক: গাংনীতে সোয়াবিন তেল নিয়ে শুরু হয়েছে লঙ্কাকা-। অধিক মুনাফার আশায় বোতলজাত তেল খুলে খোলা তেল হিসেবে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে তারা লাভবান হলেও লোকসান গুনছেন ক্রেতা সাধারণ। বিষয়টি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। তবে শেষ রক্ষা হয়নি এক ব্যবসায়ীর। বোতলজাত তেল লুজ হিসেবে বিক্রির দায়ে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সুমন নামের এক ব্যবসায়ীকে অর্থদ- করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জানা গেছে, চৌগাছার ভাংড়ি ব্যবসায়ী তকিরুল ইসলামের দোকানে ৭৭০ পিস সয়াবিন তেলের বোতলের সন্ধান পাওয়া গেছে। তীর সয়াবিনের প্রতিটি বোতলই ৫টি লিটার।
বোতল ক্রেতা কুলবাড়ীয়া গ্রামের আনিছুর রহমান জানান, তেল ব্যবসায়ী চৌগাছা গ্রামের দোয়াত আলীর কাছ থেকে বোতলগুলো কেনা হয়। দোয়াত আলী সয়াবিনের বোতল খুলে লুজ তেল হিসেবে বিক্রি করছে। এখানে যতো খালি বোতল বের হয় তা আমি ৫টাকা পিস হিসেবে কিনে থাকি।
অভিযোগে জানা গেছে, দোয়াত আলী ব্যারেল সয়াবিন তেলের একজন বড় ব্যবসায়ী। ব্যারেল তেলের দর বেশি হওয়ায় তিনি বোতল তেল মজুদ করেন বেশ আগে থেকেই। এই বোতলগুলো খুলে লুজ হিসেবে সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন। যার প্রভাব পড়ছে খোলা বাজারে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতি ৫ লিটার বোতলে ৩০০ টাকা বাড়তি লাভ করছেন।
এদিকে মেহেরপুর জেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রামের হাট-বাজার পর্যন্ত বোতলজাত সয়াবিন তেলের চরম আকাল। দু’য়েকটি দোকানে কিছু বোতল পাওয়া গেলেও তা বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা লিটার। আর খোলা (লুজ) সয়াবিন তেলের দর আরও বেশি। প্রতি কেজির দাম ২০০-২২০ টাকা পর্যন্ত। অথচ বোজতলজাত সয়াবিন তেলের সরকার নির্ধারিত মূল্য প্রতি লিটার ১৬০ টাকা। অপরদিকে লুজ তেলের দর ১৩৬ টাকা লিটার। গেলো ২১ মার্চ এ দর নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যার কোনো বাস্তবায়ন নেই মাঠ পর্যায়ে।
গাংনী বাজারের মুদি ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ডিলার পয়েন্ট থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ নেই। অপরদিকে লুজ তেল কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে। শনিবার (৩০ এপ্রিল) লুজ সয়াবিন পাইকারী মূল্য ১৯৬ টাকা কেজি।
তেল সরবরাহ কেন করা হচ্ছে না জানতে চাইলে বসুন্ধরা সয়াবিন তেল গাংনী উপজেলা পরিবেশক সেলিম রেজা বলেন, কোম্পানী থেকে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না। কোম্পানী তেল না দিলে পরিবেশকরা কোথায় পাবে।
এদিকে খালি বোতল পাওয়ার খবরে সেখানে শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে অভিযান চালায় গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি খানম। লুজ সয়াবিন তেল ব্যবসায়ী দোয়াত আলীর ছেলে সুমন হোসেন স্বীকার করেন তার অপরাধ। বোতলজাত সয়াবিন তেল লুজ হিসেবে বিক্রির দায়ে সুমনকে ভোক্তা অধিকার আইনে দোষী সাব্যস্ত করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ অপরাধে তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। একই সাথে এই অপরাধ আর করবে না মর্মে জনসাধারণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন অর্থদ-প্রাপ্ত সুমন।
সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সঙ্কট কিংবা সরকার নির্ধারিত দরের বেশি দরে বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি খানম।