স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অ্যাম্বুলেন্স চালক শরিফুল ইসলাম স্বপনকে মারধর করে বের করে দিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে স্বপনকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন তিনি। গত বুধবার এক চিকিৎসকের সাথে স্বপনের তর্কাতর্কির ঘটনার সূত্র ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বপনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন তিনি। ওইদিনই কর্তৃপক্ষ ওই ঘটনার মীমাংসা করে দিয়েছে জানিয়ে হাতজোর করে স্বপন ক্ষমা চাওয়ার পরও তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন ডা. রবিন। এতে জরুরি বিভাগের স্বেচ্ছাসেবক ও স্টাফদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ ঘটনা জানার পর বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে বলে দাবি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে, চিকিৎসকের হাতে কর্মচারী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার ভিডিওচিত্র হাসপাতাল এলাকায় বিভিন্ন লোকজনের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে ডাক্তারের বিরুদ্ধে।
সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার সকালে এক রোগীর রেফার করা নিয়ে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকের সাথে তর্কাতর্কি হয় অ্যাম্বুলেন্স চালক স্বপনের। তাৎক্ষণিক বিষয়টি আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে (আরএমও) জানালে ওইদিন সকালেই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও আরএমও’র উপস্থিতিতে চালক স্বপন ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি সমাধান করা হয়।
গতকাল দুপুর ২টার দিকে চালক স্বপন জরুরি বিভাগের গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন বলেন, বড় কিছু হয়ে গিয়েছিস? ডাক্তারের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিস কেন বল। এ সময় স্বপন বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে বলে জানিয়ে ডা. রবিনের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চান। ওই ঘটনায় ক্ষমা চেয়ে সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে চালক স্বপনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ডা. রবিন। এ সময় তিনি বলেন, ‘তোকে মেরে থানায় ১০ লাখ টাকা দেবো, আমার কিচ্ছু হবে না। ১০ লাখ টাকা খরচ করে তোকে গুম করে দেবো।’
এই কথার প্রতিবাদ করলে উভয়ের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। পরে রোগীদের সামনেই ধাক্কা দিয়ে চেয়ার তুলে মারতে গেলে হাত দিয়ে ঠেকিয়ে ফেলে স্বপন। পরে ধাক্কা দিয়ে জরুরি বিভাগ থেকে বের করে দেয়া হয়।
হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেছে দেখা যায়, কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন চেয়ার থেকে উঠেই স্বপনকে সজোরে ধাক্কা দেন। এরপর সামনে থাকা কাঠের চেয়ার তুলে মাথায় মারতে গেলে অ্যাম্বুলেন্স চালক স্বপন হাত দিয়ে ঠেকিয়ে ফেলেন। এসময় অপর এক স্টাফ ঠেকাতে গেলে তাকেও ধাক্কা দেন ডা. রবিন। এরপর রুম থেকে বের হয়ে গেলে সিঁড়ির সামনে আবারও কলার ধরে মারধর করেন তিনি। পরে গলা ধাক্কা দিয়ে হাসপাতালের নতুন ভবন থেকে স্বপনকে বের করে দেন ডা. রবিন।
অ্যাম্বুলেন্স চালক স্বপন বলেন, গত বুধবার এক রোগীর রেফার করা নিয়ে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত অপর এক নারী চিকিৎসকের সাথে আমার একটু কথা-কাটাকাটি হয়েছিলো। পরে তা সমাধান করে দেয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল ব্যক্তিগত কারণে জরুরি বিভাগে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রবিন ওই ঘটনা কেন ঘটালাম আমাকে জিজ্ঞাসা করেন। বিষয়টি সমাধান হয়েছে জানিয়ে হাতজোড় করে চলে আসতে গেলে তিনি আমাকে বলেন, ১০ লাখ টাকা দিয়ে তোকে গুম করে দেবো। এতে আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে চেয়ার তুলে মারতে যান। আমি হাত দিয়ে না ঠেকালে আমার মাথা ফেটে যেতো। পরে ধাক্কা দিয়ে জরুরি বিভাগ থেকে বের করে দেয়। পরে বিষয়টি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এর নিকট মৌখিকভাবে বিষয়টি জানায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন বলেন, তেমন কিছু না। দুজনের মধ্যে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো। আমরা বিষয়টি সমাধান করে নিয়েছি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার পরই আমি উভয়কে আমার কক্ষে ডাকি। পরে বিষয়টি সমাধান করা হয়।